বড়াইগ্রাম: নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর মাধ্যমে শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের ঘরে ঘরে বিদ্যুতায়নের ফলে বৃদ্ধি পেয়েছে নারী-পুরুষ উভয়ের কর্মঘন্টা। ফলে স্বাবলম্বী হচ্ছে লাখো প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। আর তাদের কর্মের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দিতে কাজ করে যাচ্ছেন সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সরকারী উদ্যোগে শতভাগ বিদ্যুতায়নের লক্ষ্য বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তারা।
নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ সূত্রে জানা যায়, এই সমিতি নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম, গুরুদাসপুর, লালপুর, বাগাতিপাড়ার আংশিক এবং রাজশাহী জেলার বাঘা ও চারঘাট উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছে। নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়ায় এর সদর দপ্তর। সমিতি উল্লেখিত ছয়টি উপজেলার ৭১৫টি গ্রামে জুন/১৮ পর্যন্ত ৪ হাজার ১০৮ কিলোমিটার লাইন নির্মাণের মাধ্যমে তিন লাখ ৭ হাজার গ্রাহককে সংযোগ প্রদান করেছে।
এদিকে বাগাতিপাড়া, গুরুদাসপুর. বাঘা ও চারঘাট উপজেলায় শতভাগ এবং বড়াইগ্রাম ও লালপুরে প্রায় ৯৮ ভাগ বিদ্যুতায়নের কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সমিতির ২০০৮ সাল পর্যন্ত গ্রাহক ছিল ১লাখ ত্রিশ হাজার। অপরদিকে গত ৯ বছরে গ্রাহক বেড়েছে প্রায় দুই লাখ। সুবিধা বৃদ্ধির হার প্রায় ৫৩ ভাগ।
এই বিদ্যুতায়নের ফলে সর্বস্তরে কৃষি ফসল এবং মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা লাভে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। অপরদিকে ক্ষুদ্র এবং বৃহৎ শিল্প কলকারখানা প্রতিষ্ঠার মাধ্যেমে লাখো মানুষের হয়েছে কর্মসংস্থান। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে বেড়েছে জীবনযাত্রার মান। ডিজিটাল বাংলাদেশ বির্নিমাণে রাখছে মূখ্য ভূমিকা।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক জামাল উদ্দিন সরকার বলেন, এই এলাকার প্রত্যান্ত গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ পরিবার কৃষিজীব, শ্রমজীবি, মৎস্যজীবি ও নি¤œআয়ের। তাদের পরিবারের পুরুষেরা মাঠে-ঘাটে পরিশ্রম করলেও নারীরা কাটাতেন অলস সময়। পুরুষেরাও সন্ধ্যা নামার সাথে সাথেই ঘরে ঢুকে যেতেন। কর্মের সমাপ্তি হতো সূর্যাস্তের সাথে সাথে। বিনোদনের জন্য উল্লেখযোগ্য কোন ব্যবস্থা ছিলনা তাদের। ফলে দীর্ঘ দাম্পত্য জীবনে সন্তান উৎপাদনের পরিমান ছিলো বেশি ।
নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর মোট গ্রাহকের মধ্যে প্রায় দেড় লাখ গ্রাহক প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের। বিদ্যুৎ সুবিধা পেয়ে ওই সকল গ্রামের ঘরে ঘরে এখন গড়ে উঠেছে নানা ধরণের ক্ষুদ্র শিল্প। পুরুষের পাশাপশি নারীরাও জড়িয়েছেন কর্মে। বিদ্যুতের আলোয় গভীর রাত পর্যন্ত চলে কর্মযজ্ঞ। ফলে তাদের প্রত্যেকের ৩ থেকে ৪ ঘন্টা করে বেড়েছে কর্মঘন্টা । একই সাথে আয় বেড়ে হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। ফলে অধিকাংশ পরিবারই হয়ে উঠছে এখন স্বাবলম্বী।
বড়াইগ্রাম উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. অন্তিম কুমার জানান, পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ নিয়ে উপজেলায় দুই শতাধিক পোল্ট্রি ফার্ম, একশত টার্কি ফার্ম, হাজারো বাড়িতে উন্নত জাতের গাভী পালন করা হচ্ছে। যার প্রায় সবগুলোই প্রত্যন্ত গ্রামে।
সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানান, উপজেলায় প্রায় ৩ হাজার পুকুরে মাছের চাষ হয় যার মধ্যে দুই হাজারের অধিক পুকুরে বৈদ্যুতিক সেচ পাম্প দিয়ে পানি দিয়ে মাছের চাষ করা হয়।
কৃষি কর্মকর্তা ইকবাল আহমেদ জানান, উপজেলায় প্রায় এক হাজার বৈদ্যুতিক সেচ পাম্প ব্যবহার করে কৃষি ফসল উৎপাদন করা হচ্ছে। যার বেশির ভাগ গ্রাম আর প্রত্যন্ত বিলের মধ্যে। তিনি বলেন, বিদ্যুতায়নের ফলে সম্প্রসারিত সেচ এলাকায় আমন মৌসুমে সম্পূরক সেচ ছাড়াই শুধুমাত্র বোরো মৌসুমে উপজেলায় ৩০ হাজার মেট্রিক টন অতিরিক্ত খাদ্যশস্য উৎপন্ন হচ্ছে। পুরো সমিতি এলাকায় যার পরিমান দেড় লাখ মেট্রিকটন ছাড়িয়ে যাবে।
অনুরুপ ভাবে এই সমিতির আওতাভুক্ত অপর ৫টি উপজেলায় বিদ্যুৎ সুবিধা নিয়ে প্রাণি, মৎস্য ও কৃষি ফসল উৎপাদনে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। একই ভাবে সাবলম্বী হচ্ছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী।
নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর মহাব্যবস্থাপক নিতাই কুমার সরকার বলেন, সমিতি এলাকায় আজকের যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন এর প্রধান ইন্ধন শক্তি হচ্ছে বিদ্যুৎ। এর সরবরাহ ব্যহত হলে উন্নয়ন ব্যহত হবে। তাই বিদ্যুতের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে সকলকে একসাথে কাজ করতে হবে।