নাটোর অফিস॥
গত ৭ অক্টোবর নাটোর জেলার লালপুর উপজেলার অর্জনপুর বরমহাটি ইউনিয়নের ডহরশৈলা গ্রামস্থ ডহরশৈলা মাদ্রাসার পূর্বপাশে ডহরশৈলা হতে শ্রীরামগাড়ী রেলগেইটগামী পাকা রাস্তার দক্ষিণ পাশে জনৈক আফজাল মন্ডল এর লিচু বাগানে অনুমানিক ৩৫ বছরের একটি নারীর মৃতদেহ পড়ে খবর পায় পুলিশ। ঘটনাস্থলে উপস্থিত হাজারো মানুষ কেউ বলতে পারেননা এটি কার মৃতদেহ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে ভিকটিমের পরিচয়ের জন্য প্রচারণা চালায় পুলিশ। এরপরও মৃতদেহের পরিচয় না পাওয়ায় বেওয়ারিশ হিসেবে তাকে দাফন করা হয়। কিন্তু থেমে থাকেনি পুলিশ। প্রাথমিকভাবে এনআইডি সফট্ওয়্যারের মাধ্যমেও তার পরিচয় মিলছিলো না। পরবর্তীতে সিআইডি এবং এনআইডি সফট্ওয়্যারের উপুর্যপরি অনুরোধের মাধ্যমে ভিকটিমের পরিচয় পায় পুলিশ। প্রযুক্তির সহায়তায় খুনের রহস্য উদঘাটন সহ খুনের সাথে জড়িত একজনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। প্রযুক্তির সহায়তায় ওই নারীর পরিচয় উদঘাটনের পর নাটোর জেলা পুলিশের ৪টি টিম হত্যাকারীদের ধরতে মাঠে নামে। খুনের রহস্য উদঘাটন করে পুলিশ। । প্রযুক্তির সহায়তায় খুনের সাথে জড়িত একজনকে গ্রেফতারের পর জানতে পারে খুনের রহস্য। বোনের সংসারে শান্তি ফিরিয়ে আনতে শ্যালক-দুলাভাই মিলে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে অজ্ঞাত পরিচয় ওই মহিলাকে। যার নাম লাকী বেগম (৩৫)। ঘটনার তিনদিন পর প্রযুক্তির সহায়তায় মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে নাটোর জেলা পুলিশ। এই ঘটনায় লালপুর উপজেলার আড়বাব মধ্যপাড়া এলাকার মানিক আলীর ছেলে টুটুল আলী (২৫) কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা এসব তথ্য জানান।
পুলিশ সুপার জানান, গত ৭ অক্টোবর লালপুর উপজেলার অর্জনপুর বরমহাটি ইউনিয়নের ডহরশৈলা এলাকার লিচু বাগানের ভিতর থেকে অজ্ঞাত (৩৫) বছরের একটি নারীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে ওই নারীর লাশ সনাক্তের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। কিন্তু কেউ লাশ সনাক্ত করতে পারে না। পরে লালপুর থানায় একটি মামলার দায়ের করা পুলিশের পক্ষ থেকে। এরপর বড়াইগ্রাম সার্কেলের দায়িত্বে থাকা সহকারী পুলিশ সুপার জামিল আক্তারের নেতৃত্বে নারীর পরিচয় সনাক্তে নামে পুলিশ। সনাক্তের জন্য ভিকটিমের ছবি, আঙ্গুলের ছাপ সংরক্ষণ করা হয়। পরে সিআইডি এবং এনআইডি সফটওয়ারের মাধ্যমে ওই নারীর পরিচয় নিশ্চিতের পাশাপাশি হত্যা করার বিষয়টি নিশ্চিত হয় পুলিশ। এরপর লালপুর থানার ২টি টিম সহ ৪টি টিম অভিযান চালিয়ে হত্যাকান্ডের সাথে টুটুল আলীকে মাগুড়া জেলার সদর থানাধীন শিমুলের ঢাল নামক এলাকায় নির্মাণাধীন ভবনের লেবারের শেড হতে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে আসামী টুটুল জানায়, তার দুলাভাই আসাদুল ইসলামের পরামর্শে তারা শালা-দুলাভাই মিলে লাকী বেগমকে হত্যা করেছে।
পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা বলেন, ভিকটিম লাকীর সাথে হাবিবপুর গ্রামের ইসমাইলের সাথে প্রথম বিয়ে হয়। পরবর্তীতে আসাদুলের সাথে লাকী বেগমের পরকীয়ায় একাধিকবার বিয়ে এবং বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। এনিয়ে আসামী টুটুলের বোনের সংসারে কলহ লেগেই থাকতো। পরবর্তীতে গত ৬ অক্টোবর আসাদুল তার শ্যালক টুটুল এবং লাকী বেগমকে ফোন করে ঈশ্বরদী বাইপাসে আসতে বলে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আসাদুল ও টুটুল বাইপাস হতে হাঁটতে হাঁটতে ডহরশৈলার দিকে যেতে থাকে। ওই সময় গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। এরপর ঘটনাস্থলে পৌঁছামাত্রই পরিকল্পনা মোতাবেক আসাদুল ভিকটিমকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় এবং গলা চেপে ধরে। আসামী টুটুল ভিকটিমের হাত ধরে রাখে এবং শ্বাসরোধ করে মৃত্যু নিশ্চিত করে মৃতদেহ রাস্তার পাশে লিচু গাছের নিচে রেখে পালিয়ে যায়। এই আসামী টুটুলকে গ্রেফতারের পর বুধবার আদালতে সোপর্দ করা হয়। আদালতে সে স্বেচ্ছায় এই হত্যার দায় স্বীকার করেছে পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা নিশ্চিত করেছেন।