নাটোর অফসি॥
নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার খালের ওপর নির্মিত ৮টি কালভার্টের তলদেশ খালের গভীরতার চেয়ে উঁচু হওয়ায় পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে পড়েছে। প্রবল বর্ষণে এসব কালর্ভাট সংশ্লিষ্ট মাছিমপুর, সোনাপাতিল, বড়পুকুরিয়া, হিজলতলা বিল, পেড়াবাড়িয়া বিল, পূর্ব কোয়ালিপাড়া, যোগিপাড়া, বাগমারা কামারি বিল এলাকার প্রায় দুই হাজার বিঘা জমি জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। জলাবদ্ধতার কারনে আগামী রবি মৌসুমে এসব জমি অনাবাদি পড়ে থাকার আশংকা করছেন কৃষকরা। ইতোমধ্যে কালভার্টের তলদেশ ভেঙ্গে পানি নিষ্কাশনের পথ বাধামুক্ত করতে এবং খাল সংস্কারের দাবি তুলেছেন স্থানীয় কৃষকরা। সম্প্রতি জলমগ্ন ওই ৮ এলাকার কৃষকরা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এর নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর এ সংক্রান্ত লিখিত আবেদন করেছেন। এছাড়াও স্থানীয় সাংসদ, বিভাগীয় কমিশনার, এলজিইডিসহ সাতটি দপ্তরে এর অনুলিপি প্রেরণ করেছেন।
কৃষকদের আবেদন সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার যোগিপাড়ার অদূরে মাছিমপুর প্রবেশমুখের সংযোগস্থলে খালের ওপর নির্মিত একটি কালভার্টের তলদেশ অপরিকল্পিতভাবে খালের গভীরতার চেয়ে প্রায় চার-পাঁচ ফুট উঁচু করে নির্মাণ করা হয়েছে। ডিজাইন ত্রুটির কারনে পলি জমে কালভার্টের মুখ প্রায় বন্ধ হয়ে পড়ায় পানি নিষ্কাশন হয়ে বড়াল নদীতে প্রবেশ করছেনা। ফলে প্রবল বর্ষণে উপজেলার মাছিমপুর, সোনাপাতিল, বড়পুকুরিয়া, হিজলতলা বিল, পেড়াবাড়িয়া বিল, পূর্ব কোয়ালিপাড়া, যোগিপাড়া, বাগমারা কামারি বিল এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার তিন ফসলি প্রায় ৩০০ একর কৃষি জমি জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। এসব বিলের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথ বারইপাড়া খাল। খালটি দিয়ে ওই ৮ গ্রামের জলাবদ্ধ পানি মাছিমপুর ২২১নং রেলওয়ের ব্রীজ হয়ে বড়াল নদীতে পড়ে। কিন্তু খাল বেয়ে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে নিষ্কাশন না হওয়ায় কৃষি জমিতে আটকে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত কালভার্টের তলদেশ ভেঙ্গে এবং খালটি সংস্কারের মাধ্যমে ফসলি জমির পানি নিষ্কাশনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি এলাকাবাসীর।
স্থানীয় সূত্র ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলার একটি পৌরসভা ও ৫ টি ইউনিয়নে খাল ও নালার ওপরে স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এর আওতায় দীর্ঘদিন পূর্বে আটটি কালভার্ট ও সাঁকো নির্মাণ করা হয়। নির্মাণের সময় এসব কালভার্ট ও সাঁকোগুলোর তলদেশ খাল ও নালার গভীরতার চেয়ে উঁচু করে ঢালাই করা হয়। ক্ষেত্র বিশেষে এই উচ্চতা খালের গভীরতার চেয়েও চার থেকে পাঁচ ফুট উঁচু। এর ফলে এসব এলাকার বিল ও নি¤œাঞ্চলের পানি নিষ্কাশনের পথে বাধার সৃষ্টি হয়। পানির স্বাভাবিক গতি প্রবাহে বাধার কারনে ধীরে ধীরে পলি জমে এসব খাল ও নালার গভীরতাও কমে এসেছে। ফলে খাল বা নালা বেয়ে পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় কৃষি জমিতে আটকে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, পুরো উপজেলায় আটটি কালভার্ট-সাঁকো রয়েছে যেগুলোর তলদেশ উঁচু হওয়ায় পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্থ হয়। সেগুলো হলো, বাগাতিপাড়া পৌরসভার মাছিমপুর, বাগাতিপাড়া সদর ইউনিয়নে চকহরিরামপুর ও বড়পুকুরিয়া, জামনগর ইউনিয়নের টাঙ্গাইলপাড়া, মন্ডলপাড়া ও কারপাড়া এবং দয়ারামপুর ইউনিয়নের মিশ্রিপাড়া ও চন্দ্রখইর। এসব কালভার্ট বা সাঁকোর কারনে চলতি প্রবল বর্ষণে আশেপাশের এলাকার প্রায় দুই হাজার বিঘা জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
কৃষক আব্দুল কাদের জানান, শুধু প্রবল বর্ষণের কারনে এ বছরই নয়, প্রতিবছর বর্ষা মওসুমে পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় এসব এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। কোন কোন এলাকায় বসত বাড়িতেও পানি প্রবেশ করে। জলাবদ্ধতার ফলে প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে এসব এলাকার ফসল ডুবে হাজার হাজার কৃষক অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। আটকে থাকা পানি দ্রুত নিষ্কাশন করা না গেলে আগামী রবি মওসুমের আবাদ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশংকা রয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোমরেজ আলী জানান, ত্রুটিপূর্ণ এসব কালভার্ট ও সাঁকো নির্মাণের কারনে খাল বা নালা বেয়ে পানি প্রবাহের সময় এসব স্থানে পানি আটকে যাচ্ছে। ধীরে ধীরে পলি জমি কালভার্ট বা সাঁকোর মুখ বন্ধ হয়ে পানি নিষ্কাশন তেমনভাবে হচ্ছে না। ফলে উপজেলার অনেক এলাকার আবাদী জমি জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। বিষয়টি তিনি সম্প্রতি সমন্বয় মিটিং ও সেচ মিটিংয়ে উপস্থাপন করেছেন।
উপজেলা প্রকৌশলী আজিজুর রহমান বলেন, মাছিমপুরের কালভার্ট নিয়ে কৃষকদের আবেদনের বিষয়টি তিনি শুনেছেন। সেখানে দ্রুতই পানি নিষ্কাশনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা তিনি গ্রহন করবেন। তিনি বলেন, এসব কালভার্ট-সাঁকো গুলো এলজিইডি থেকে দীর্ঘদিন পূর্বে নির্মাণ করা হয়েছে। বর্ষা মওসুম পার হলে এজাতীয় সমস্যার যতগুলো কালভার্ট-সাঁকো রয়েছে সেগুলোর বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবেন বলে তিনি জানান।