নাটোর অফিস
এবার অতিবর্ষন ও অপরিকল্পিতভাবে যত্রতত্র পুকুর খননের কারনে স্থায়ী জলাবদ্ধ সৃষ্টি হওয়ায় নাটোরের বাগাতিপাড়ায় চলতি মওসুমে প্রায় দেড় হাজার বিঘা জমি অনাবাদি পড়ে রয়েছে। অপরিকল্পিত পুকুর খনন, নালা-কালভার্টের মুখ বন্ধ করে প্রভাবশালীদের দখল করে পানির প্রবাহে বাধা সৃষ্টি, অতিবৃষ্টিসহ নানা কারনে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। ফলে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় চলতি বছর উপজেলার এসব জমিতে আবাদ করতে পারছেন না কৃষক। খোদ কৃষি বিভাগ স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হওয়ায় তিন ফসলি এসব জমি অনাবাদি হয়ে পড়ে থাকার শংকা প্রকাশ করেছে।
ভুক্তভোগী চাষী ও সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায় , চলতি বছর বর্ষা মওসুমে উপজেলার ৫ টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার প্রায় ২৬ টি এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এগুলো হলো, দয়ারামপুর ইউনিয়নের হাড়িয়ার বিল, হাতিগাড়া বিল, সারিদিয়ার বিল, হিজলী দীঘাপাড়া বিল, হাট গোবিন্দপুর, ফাগুয়াড়দিয়াড় ইউনিয়নের হাটদৌল, পাঁচুড়িয়া, সান্যালপাড়া, স্বরূপপুর, বাগাতিপাড়া সদর ইউনিয়নের জিয়ারকোল, বিলগোপালহাটি, নূরপুর মালঞ্চি, কাকফো, শ্রীরামপুর, বড়পুকুরিয়া, ক্ষিদ্রমালঞ্চি, পাঁকা ইউনিয়নের সলইপাড়া, ধোপার বিল, জামনগরের দেবনগর সোনার বিল, বজরাপুর, খামার বজরাপুর, চক বাঁশবাড়িয়া, জালালপুর এবং বাগাতিপাড়া পৌরসভার নড়ইগাছা, টুনিপাড়া ও পেড়াবাড়িয়া। এসব এলাকার প্রায় এক হাজার ৩৫০ বিঘা নিচু জমিতে পানি আটকে রয়েছে। কৃষি অফিসের তথ্যমতে, এসব এলাকার মধ্যে দয়ারামপুর ইউনিয়নে ২৬২ দশমিক ৫ বিঘা, ফাগুয়াড় দিয়াড় ইউনিয়নে ৩০০ বিঘা, বাগাতিপাড়া সদর ইউনিয়নে ৪১২ দশমিক ৫ বিঘা, পাঁকা ইউনিয়নে ৯৭ দশমিক ৫ বিঘা, জামনগর ইউনিয়নে ১২৭ দশমিক ৫ বিঘা এবং বাগাতিপাড়া পৌরসভায় ১৫০ বিঘা জমিতে জলাবদ্ধ সৃষ্টির ফলে আনাবাদি রয়েছে। তিন ফসলী এসব জমিতে এ মওসুমে রোপা আমনসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ হয়। কিন্তু চলতি মওসুমে চাষের উপযোগী না থাকায় এসব জমিতে আবাদ করতে পারছেন না কৃষকরা। এদিকে এসব জমি থেকে পানি নিষ্কাশনেরও তেমন কোন ব্যবস্থা নেই।
স্থানীয়রা জানায়, গত কয়েক বছর ধরে এ উপজেলায় অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খননের হিড়িক পড়ে। বিভিন্ন সময়ে প্রশাসন মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ভেকু জব্দ, জরিমানাসহ বিভিন্ন সাজা প্রদান করলেও এসব জমিতে পুকুর খনন থামছে না। তাছাড়াও প্রভাবশালীরা দখল করে কালভার্টের মুখ বন্ধ করে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের ফলে পানির স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে পড়েছে। এতে নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে বিলের পানি নদীতে পড়তে পারছে না। এদিকে ভুক্তভোগী কৃষকরা জানান, বিলের এসব জমিতে এ মওসুমে আমন রোপন করতেন। এছাড়াও মসুর খেসাড়ী, মটর, ভূট্টা, রসুনসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ করতেন। কিন্তু তিন চার বছর ধরে বিলের মধ্যে অসংখ্য পুকুর খনন করা হয়েছে। বিভিন্ন সেতু ও কালভার্টের মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে এ বিলে বিভিন্ন উৎপাদিত ফসলি জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। তারা আর এসব জমিতে এ মওসুমে আবাদ করতে পারছেন না।
জাতীয় কৃষক সমিতির নাটোর জেলা শাখার সাধারন সম্পাদক বাগাতিপাড়ার বাসিন্দা আব্দুল করিম বলেন, চলতি বছর অতিবৃষ্টির ফলে বাগাতিপাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকা পানিতে ডুবে যায়। বেশকিছু বাড়িঘরেও পানি ওঠেছে। ফসলি জমি নষ্ট হওয়ায় আমনের বীজতলাও নষ্ট হয়। এর আগে যেসব জমিতে বিগত সময়ে বছরে তিন ধরনের ফসল উৎপাদন হতো। বর্তমানে তা হচ্ছে না। বিলের মাঝে অসংখ্য পুকুর খনন করে মাছ চাষ করা হচ্ছে। বিভিন্ন খালও প্রভাবশালীরা দখল করে বন্ধ করে ফেলেছে। বর্তমানে উপজেলার বিভিন্ন বিলে যেভাবে পানি জমে আছে, খাল সংস্কার এবং নদীর সঙ্গে ড্রেন করে অতিসত্বর পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা দরকার। আর তা না হলে যতটুকু আবাদি জমি রয়েছে, সেটুকু সারা বছর জলাবদ্ধ থাকবে।
বাগাতিপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মোমরেজ আলী বলেন, উপজেলায় মোট আবাদী জমির পরিমান ১১ হাজার ২১০ হেক্টর। এর মধ্যে চলতি বছর ৪ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে বিলে আটকে থাকা পানি নেমে গেলে আমন চাষ বাড়তে পারে। এছাড়া জলাবদ্ধতার কারনে তিন ফসলি জমিগুলোতে ক্ষেত্র বিশেষে এক ফসল উৎপাদনের ফলে কৃষি অর্থনীতিতেও প্রভাব পড়ছে। উপজেলার জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে ড্রেনেজ ব্যবস্থার মাধ্যমে পানি নিষ্কাশনের জন্য তার দপ্তর থেকে পানাসি ও বিএডিসি’র সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।