“৯৯৯”এ ফোন পেয়ে নাটোর জেলা পুলিশ রক্ষা করেছে ৪০ জনের জীবন


নাটোর অফিস॥
“৯৯৯” এ ফোন পেয়ে নাটোরের পুলিশ চলনবিলে নৌকা ভ্রমনে আসা ৫ শিশু ও ১২ মহিলা সহ ৪০ জনের জীবন রক্ষা করেছে। গতরাত বুধবার দেড়টার দিকে ৯৯৯ এ ফোন কল পাওয়ার পর পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহার নেতৃত্বে জেলার পুলিশের ৫টি টিম বিশাল চলনবিলে প্রায় তিন ঘন্টা অনুসন্ধান চালিয়ে ৪০ যাত্রি সহ পথ হারানো নৌকাটির সন্ধান পান। ফলে রক্ষা পায় নওগাঁ জেলার আত্রাই থেকে চলনবিলের বিলসা ও তিশীখালীর ঘাসি দেওয়ানের মাজার পরিদর্শন সহ নৌ ভ্রমনে আসা ৪০ যাত্রি।
নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা বৃহস্পতিবার স্থানীয় সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, গত রাত দেড়টার দিকে সিংড়া থানার অফিসার ইনচার্জ পথ হারানো নৌকার এক যাত্রির করা ৯৯৯ এ ফোন কল পান। তিনি বিষয়টি তাকে অবহিত করলে তাৎক্ষনিক তিনি সিংড়া ও গুরুদাসপুর থানাকে নির্দেশ দেন নৌকার অবস্থান জেনে উদ্ধারের কাজে নেমে পড়ার। তিনি নিজেই ওই অনুসন্ধানের নেতৃত্ব দেন। ফোন কলের ওই যাত্রিকে নৌকার অবস্থান জানতে চাইলে সে কিছুই বলতে পারেননা। পরে পুলিশের ৫টি টিমকে অনুসন্ধানে নামানো হয়। আধুনিক প্রযুক্তি ও এলআইসি, ঢাকার সহায়তায় কলকৃত ব্যক্তির অবস্থান জানা যায় সিংড়া উপজেলার বিলদহর এলাকায়। কিন্তু সেখানে গিয়েও তাদের পাওয়া যায় না। পরে অনুসন্ধান চালিয়ে রাত্রি আনুমানিক ২টার দিকে গুরুদাসপুর উপজেলার যোগেন্দ্রনগর এলাকায় পথ হারানো নৌকাটির অবস্থান জানতে পারা যায়। অবস্থান জানতে পেরে সিংড়া ও গুরুদাসপুর থানা পুলিশের ০৫ টি টিম অবশেষে রাত্রী ৪টার দিকে নৌকাটির সন্ধান পেয়ে নৌকাটিসহ ৪০ যাত্রিকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। উদ্ধারকৃতদের মধ্যে ৫ জন শিশু ও ১২ জন মহিলা রয়েছে। তারা বুধবার চলনবিল ভ্রমনের জন্য নওগাঁর আত্রাই উপজেলা থেকে আসেন।

৯৯৯ নম্বরে ফোন কল দেয়া ওই নৌকার যাত্রি আত্রাই উপজেলার বলরামচক গ্রামের মৃত অমৃত সরকারের ছেলে পিয়াস সরকার বলেন, তারা নওগাঁর আত্রাই থেকে ৪০ জনের একটি দল চলনবিলের বিলসা ও তিশীখালী মাজার পরিদর্মন সহ ভ্রমনের জন্য একটি নৌকা নিয়ে বুধবার চলনবিলের তাড়াশ ও গুরুদাসপুরের বিলসা বেড়ানো শেষে সন্ধ্যা ৬ টার দিকে সিংড়ার তিশিীখালী মাজারে যান । সেখান থেকে রাত্রি আনুমানিক ১০ টার দিকে আত্রাইয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হই। কিন্তু প্রায় তিন ঘন্টা পথ অতিক্রম করার পরও গন্তব্যে পৌঁছাতে না পারায় বুঝতে পারি আমরা পথ হারিয়েছি। এসময় আবহাওয়া ছিল কিছুটা উত্তাল। তাই সবার মাঝে আতংক বিরাজ করছিল। চারিদিকে বাতাসের সাঁ সাঁ শব্দ হচ্ছিল। বড় বড় ঢেউ নৌকার সাথে বাড়ি খেয়ে আছড়ে পড়ছিল। চারিদিকে কোন বাড়ি ঘর চোখে পড়ছিলনা। কোন আলোর দেখা মিলছিলনা। তারা বিপদের মদ্যে পড়েছেন বুঝতে পেরে অনেকেই আতংকিত হয়ে পড়েন। নৌকার মাঝিও বুঝতে পারছিলনা তার অবস্থান এখন কোথায়। তবে বুঝতে বাঁকি ছিলনা পথ হারিয়ে তারা এখন চলনবিলের মাঝ বরাবর। মনে পড়ে গতকাল দেশের গতকাল দেশের সমুদ্র বন্দরগুলোতে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত চলছিল। চলনবিল এলাকাতে বৃষ্টি হচ্ছিল। ভাবনা হচ্ছিল কোন এক সময় ঝড়ের কবলে পড়ে দুর্ঘটনায় পতিত হতে পারি। এসময় মনে পড়তেই ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিয়ে আমাদের বিপদের পড়ার কথা জানায় । পথ হারিয়ে প্রায় তিন ঘন্টা পর ফোন কল দিয়ে কিছুটা হলেও স্বস্তি আসে মনে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে বারবার আমাদের অবস্থান জানতে চাওয়া হচ্ছিল। কিন্তু আমারা জানাতে পারছিলাম না। শেষ পর্যন্ত পথ হারানোর প্রায় ৬ ঘন্টা পর নাটোরের পুলিশ আমাদের গুরুদাসপুরের যোগেন্দ্রনগর এলাকা থেকে উদ্ধার করেন।
পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা বলেন, উদ্ধারের পর তাদের আত্রাই সীমান্ত এলাকায় পৌঁছে দিয়ে আসে নাটোরের সিংড়া থানার পুলিশ।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *