নাটোর অফিস॥ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী সুমাইয়া খাতুন হত্যা মামলার প্রধান দুই আসামী স্বামী মোস্তাক(৩৫) এবং শ্বশুর জাকির হোসেনকে(৫৭) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে মামলার সকল আসামীকে গ্রেফতার করা হলো।
আজ বৃহস্পতিবার (২৫ জুন) সকালে পৃথক অভিযানে রাজশাহীর বাঘা থেকে সুমাইয়ার স্বামী মোস্তাক ও বগুড়ার নন্দীগ্রাম থেকে শ্বশুর জাকির হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারের পর দুপুরে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা। একই সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে সুমাইয়া হত্যাকান্ডের বিচারসহ সব ধরণের নারী নির্যাতনের বিচারের ও নারীর জন্য নিরাপদ সমাজ ব্যবস্থার দাবীতে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেছে বিভিন্ন সংগঠন।
পুলিশ সুপার বলেন, নিহতের মা নুজহাত বেগম বাদী হয়ে মামলা দায়েরের পর ঐ রাতেই অভিযান চালিয়ে পুলিশ নাটোর শহরের হরিশপুর এলাকার বাড়ি থেকে শাশুড়ি সৈয়দা মালেকা ও ননদ জাকিয়া ইয়াসমিন জুথিকে গ্রেফতার করে। তখন থেকে পলাতক ছিলেন সুমাইয়ার স্বামী মোস্তাক ও শশুড় জাকির হোসেন।এই মামলার ৪ জন আসামীকে গ্রেফতারে পুলিশের আটটি ইউনিট কাজ করেছে।
মামলার অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, সুমাইয়ার স্বামী মোস্তাক বেকার অবস্থায় ছিলেন। তাই শ্বশুর বাড়ি থেকে টাকার জন্য সুমাইয়াকে মানসিকভাবে চাপে রাখতেন মোস্তাক। সম্প্রতি চাহিদামতো টাকা না পেয়ে বেকার মোস্তাক বেপরোয়া হয়ে উঠে। কিন্তু গত বছর বাবার মৃত্যূর পরে সুমাইয়া তার স্ট্রোকে আক্রান্ত মায়ের কাছে টাকা না চেয়ে নিজেই আত্ননির্ভর হওয়ার চেষ্টা থেকে বিসিএসের জন্য প্রস্ততি নিচ্ছিলেন। গত ২৩ শে জুন সকালে শ্বশুড়বাড়ি থেকে সুমাইয়ার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সুমাইয়ার স্বজনদের দাবী ২২শে জুন রাতে সুমাইয়াকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর আত্নহত্যা হিসেবে চালানোর চেষ্টা করে শ্বশুরবাড়ির লোকজন।
এদিকে, গতকাল বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামীক স্টাডিজ বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির ফলাফল প্রকাশ হলে সিজিপিএ ৩.৪৪ পেয়ে প্রথম শেণিতে উত্তির্ণ হন সুমাইয়া। কিন্তু এই ফলাফল পাওয়ার আগেই সুমাইয়াকে চলে যেতে হলো না ফেরার দেশে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নাটোর সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) আব্দুল মতিন জানান, অধিকতর তদন্তের জন্য সুমাইয়ার ভিসেরা নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
সুমাইয়ার মা নুজহাত বেগম বলেন,”আমার মেয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চেয়েছিলো। আমি মেয়ে হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। আমার মেয়েকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।”
এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিয় ছাত্র সংসদ ডাকসুর সাবেক এজিএস সাদ্দাম হোসেন জাগোনাটোর২৪.কমকে বলেন, “আমরা শুরু থেকেই এ ঘটনাকে হত্যাকান্ড বলে এসেছি। মামলার আসামিদের গ্রেফতার করায় স্বস্তি প্রকাশ করছি। তবে আইনের ফাঁকফোকড় দিয়ে তারা যেন পার না পেয়ে যায় সে ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সজাগ থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। পাশাপাশি দেশে চলমান প্রতিটি নারী নির্যাতন ও এ সংক্রান্ত হত্যাকান্ডের ঘটনা তদন্ত ও বিচারের জন্য পৃথক কমিশন গঠনের দাবী জানাচ্ছি।”