নাটোর অফিস॥ নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসারের(আরএমও) দুই আত্নীয় স্বপন ও জাহের। বুধবার দুপুরে আরএমওর কক্ষ বসেই তারা ১১ রকমের ৬০০ পিস ঔষধ ব্যাগে পুরছিলেন। কোন অসুখে বিপুল পরিমাণ এই ঔষধগুলো নিচ্ছিলেন তারা, জানে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই।
নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার(আরএমও) ডাঃ আমিনুল ইসলামের দুই আত্নীয় শফিকুল ইসলাম স্বপন ও জাহের আলীর নিকট থেকে ১১টি পদের ৬০০ ঔষধ উদ্ধার করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
উদ্ধার হওয়া ঔষধের মধ্যে রয়েছে-ইসোরাল ৬০পিস, সলবিয়ন-৪০পিস, ওপি ক্যাপসুল ৮০পিস, কট্রিম ১৬০ পিস, এমোক্স ৪০ পিস, প্যারাসিটামল ১০০ পিস, সিপ্রোসিন ২০ পিস, সিট্রিজিন ২০ পিস, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ৬০ পিস, এসিলোফিকাল২০ পিস এবং জেন্টামাইসিন ক্রিম ৪টি।
এ ঘটনার পর নতুন করে নাটোরবাসীর মনে প্রশ্ন জেগেছে, “কোথায় যায় নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালের ঔষধ?”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেখানে দেশের তৃণমূল মানুষের জন্য চিকিৎসাসেবা ও ঔষধ বিনামূল্যে ব্যবস্থা করেছেন তখন কেনো হাসপাতালে অনেক সময় প্রয়োজনীয় ঔষধ মেলে না?
ঔষধ লোপাটের ঘটনাটি সতর্কতার সংঘটিত হলেও তা চোখে পড়ে যায় নাটোর সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম রমজানের। তার তৎপরতায় সাধারণ রোগীদের এসব ঔষধ শেষ পর্যন্ত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ফিরে পেলেও শেষ পর্যন্ত অভিযুক্তদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
জনবল ও সেবা সামগ্রী সংকটে দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সরকারী হাসপাতালগুলো রোগীদের শতভাগ চিকিৎসা দিতে না পারার ঘটনা সত্য। তবে প্রতিটি হাসপাতালে রোগীদের জন্য কিছু ঔষধ বিনামূল্যে প্রদানের বহাল রেখেছে বাংলাদেশ সরকার।
এ ব্যাপারে নাম জড়িয়ে পড়ার ঘটনায় আরএমও আমিনুল ইসলাম জানিয়েছেন, তার আত্নীয় স্বপনের হাত কেটে যাওয়ায় মাত্র ৪টি ক্রিম ঔষধ দিয়েছেন তিনি। কিন্ত বাকী ঔষধগুলো কিভাবে তার আত্নীয়দের কাছে পাওয়া গেলো, তা জানেন না।
বুধবার দুপুরের ঘটনার বর্ণনা দেন হাসপাতালের এক কর্মচারী।
“বুধবার দুপুরে চিকিৎসার জন্য নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে আসেন সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম রমজান। চিকিৎসার প্রয়োজনে আরএমও ডাঃ আমিনুল ইসলামের কক্ষে প্রবেশ করেন তিনি। দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে দেখেন আরএমওর আত্নীয় স্বপন ও জাহের উদ্দিন তাদের ব্যাগে বেশ কিছু ঔষধ ঢোকাচ্ছেন।”
এসব ঔষধ তারা কোথায় পেয়েছেন-চেয়ারম্যান রমজান তা জানতে চাইলে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি স্বপন ও জাহের। তখনি চেয়ারম্যান বিষয়টি হাসপাতালের সহকারী পরিচালক আনসারুল ইসলাম ও জেলা সিভিল সার্জনকে জানিয়ে দেন।
ঘটনা জানাজানি হবার পর হাসপাতালে আসেন জেলার সংবাদকর্মীরা। সংবাদ মাধ্যমগুলোকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছেন, ‘উদ্ধার করা ঔষধগুলো নাটোর আধুনিক সদর হাসাপাতালের রোগীদের চিকিৎসার জন্য সরবরাহ করা।’
সদর হাসপাতালের মেডিসিন কাউন্টারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ফার্মাসিস্ট রেবেকা সুলতানা বলেন, ‘আমি এসব ঔষুধ কাউকেই দিইনি।’
সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক আনসারুল ইসলাম দাবী করেন, ‘জব্দ ঔষধগুলোর মধ্যে তিন প্রকারের ঔষধ বর্তমানে হাসপাতালের স্টকেই নেই। অথচ সেগুলো কিভাবে পাওয়া গেলো সেটাই আশ্চর্যের। এই ঘটনার তদন্ত হবে।’
আনসারুল ইসলাম মনে করেন, হাসপাতালের কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী অসৎ উদ্দেশ্যে এসব ঔষধ মজুদ করে রেখেছিলেন।
নাটোরের সিভিল সার্জন ডাঃ কাজী মিজানুর রহমান বলেছেন “সরকারী ঔষধ জনগণের জন্য। ভিন্ন উদ্দেশ্যে এর মজুদ গ্রহনযোগ্য নয়। হাসপাতালের কেউ জড়িত থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ঘটনার তদন্তের জন্য বলেছি।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের একজন কর্মচারী জানান, সরকারী ঔষধ ঠিকমতোই আসে এবং জমা হয়। কিন্ত এমন কিছু ব্যক্তি এসে আব্দার করেন যে তাদের না দিয়ে পারা যায় না। আবার কোনো কোনো রোগীকে বাস্তবতা বিবেচনায় দু-একদিনের বেশি ঔষধও দেয়া হয়। ঔষধ নয়ছয় বলতে যা বোঝায় ঠিক তা নয়।