নাটোর অফিস ও নিজস্ব প্রতিবেদক, গুরুদাসপুর॥
নাটোরের গুরুদাসপুরে ৩১০ তরুণকে স্মার্টফোন ছেড়ে খেলার মাঠে ফেরালেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তমাল হোসেন। তরুণ সমাজকে সুস্থ ও সুন্দর জীবনের দিকে ফেরাতে এ উদ্যোগ নিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতেও তার এ চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’
যে সময়ে শিক্ষার্থী আর উঠতি বয়সী তরুণদের খেলাধুলায় ব্যস্ত থাকার কথা সে সময় তারা স্মার্টফোন হাতে অলস সময় কাটায়। এর ফলে তরুণ সমাজ একদিকে যেমন ক্রীড়া ও কর্মবিমুখ হয়ে পড়ছে, অন্যদিকে তেমনি জড়িয়ে পড়ছে সাইবার ক্রাইমে। এছাড়া মাদকাসক্ত ও নেশাগ্রস্ত হয়ে তরুণ সমাজ জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন অপরাধে। আবার অনেকে ক্যাসিনোসহ বিভিন্ন জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ছে। এমন সময় এধরনের উদ্যোগে যুব সমাজ উপকৃত হবে বলে মনে করেন উপজেলাবাসী।
এসব থেকে তরুণ সমাজকে বের করে আনার জন্য ইউএনও তমাল উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে তরুণদের সঙ্গে সচেতনতামূলক সভা করে তাদের খেলার মাঠে ফিরতে উদ্বুদ্ধ করেন। তার এ উদ্যোগে সাড়া দিয়ে এরইমধ্যে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ৩১০ যুবক স্মার্টফোন ছেড়ে খেলার মাঠে ফিরেছে। তাদের ফুটবলসহ খেলার বিভিন্ন সামগ্রী কিনে দেওয়া হয়েছে। নিয়মিত চলছে তাদের চর্চা। এ কাজে তিনি প্রাক্তন খেলোয়ারদের সহযোগিতা নিয়েছেন। তার এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন ক্রীড়ামোদীসহ সর্বস্তরের মানুষ।
গুরুদাসপুর উপজেলায় ১০টি বড় খেলার মাঠ রয়েছে। দীর্ঘদিন খেলাধুলা না করায় এগুলো পরিত্যক্ত ও গোচারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছিল। সম্প্রতি ইউএনওর কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে মাঠগুলো পরিষ্কার করে খেলা শুরু হয়েছে। এখন বিকেল হলেই মাঠে মাঠে জড়ো হচ্ছে তরুণরা। মেতে উঠছে ফুটবল আর ক্রিকেট খেলায়।
সরেজমিন উপজেলার খুবজীপুর মাঠে গিয়ে দেখা নাটোর জেলা ফুটবল দলের সাবেক খেলোয়াড় মিজানুর রহমানের পরিচালনায় ৭০ জন প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। পৌর সদরের বিলচলন শহীদ শামসুজ্জোহা সরকারি অনার্স কলেজ মাঠে ফুটবলার পলান ঘোষের পরিচালনায় প্রশিক্ষণ নিচ্ছে ২০০ জন। সোহানুর রহমান সজীবের পরিচালনায় ক্রিকেট প্রশিক্ষণ নিচ্ছে ৫০ জন তরুণ। তাদের সার্বিক সহযোগিতা দিচ্ছে উপজেলা প্রশাসন।
খেলোয়াড়রা জানায়, খেলার জন্য ইউএনও তাদের উদ্বুদ্ধ করেছেন। দিয়েছেন ক্রীড়াসামগ্রী। তারা এখন নিয়মিত খেলাধুলা করছে। খেলা পরিচালনার জন্য মিজানুর রহমান আর পলান ঘোষকে সম্মাননা দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
খেলোয়াড় মানিক মিয়া জানান, খেলাধুলা শুরু হওয়ায় তারা আনন্দিত। পাশাপাশি প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের সম্মাননা দেওয়ায় তারা উপজেলা প্রশাসনের কাছে কৃতজ্ঞ। এর মাধ্যমে ক্রীড়ানুরাগীরা আরও উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত হবে।
ওলিউর রহমান জানান, ইউএনও ও উপজেলা প্রশাসনের এ উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। তিনি গুরুদাসপুরকে বাল্যবিবাহ ও ইভটিজিং মুক্ত মডেল উপজেলা বানাতে চান।
এমএম আক্কাস আলী জানান, মিজান প্রতিভাবান ক্রীড়ানুরাগী। ইউএনও ও উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতা আর মিজানের নেতৃত্বে খেলাধুলার যে চর্চা শুরু হয়েছে, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার।
মিজানুর রহমান মিজান জানান, দীর্ঘদিন পর তিনি যে সম্মাননা পেয়েছেন, তা তাকে অনুপ্রাণিত করেছে।
এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সাবেক ক্রীড়াবিদদের সহযোগিতায় নতুন খেলোয়াড়রা নিয়মিত চর্চা অব্যাহত রেখেছে। তারা কখনও জাতীয় পর্যায়ে খেলতে পারলে আমি নিজেকে ধন্য মনে করবো। ততক্ষণ পর্যন্ত আমার প্রচেষ্টা ও শ্রম অব্যাহত থাকবে।’
ইউএনও তমাল হোসেন জানান, তরুণদের সহযোগিতায় তিনি সাধ্যমতো চেষ্টা করবেন। উপজেলার সব ক্রীড়ানুরাগীকে সম্মানিত করার পাশাপাশি মাদক, বাল্যবিবাহ ও ইভটিজিং মুক্ত গুরুদাসপুর নির্মাণের জন্য তার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।