নাটোর অফিস॥
নাটোরের চারটি মহাসড়কে (নাটোর-রাজশাহী, নাটোর-বগুড়া, নাটোর-পাবনা ও নাটোর-ঢাকা) থ্রি হুইলার চলাচল নিষিদ্ধ করেছে জেলা পুলিশ। সম্প্রতি মাইকিং করে এ সংক্রান্ত ঘোষণা দেয়া হলেও থেমে নেই নিষিদ্ধ তিন চাকার এসব যান চালাচল। অভিযোগ রয়েছে, মহাসড়কে থ্রি হুইলার চলাচলের নেপথ্যে রয়েছেন নাটোর পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মিঠুন আলী। তার নেতৃত্বে এসব থ্রি হুইলার থেকে প্রতিমাসে প্রায় ১৫ লাখ টাকার চাঁদা তোলা হয়। তবে যুবলীগ নেতারা বলছেন, দলের কেউ চাঁদাবাজীর সাথে জড়িত নয়।
স্থানীয়, পথচারী ও চালকদের অভিযোগ, শহরের মাদ্রাসামোড়স্থ নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের বগুড়া বাসষ্ট্যান্ড এলাকা থেকে বিভিন্ন সড়কে প্রতিদিন দুুই শতাধিক অটোরিকশা ও রুটপারমিট বিহীন লেগুনা চলাচল করে। এসব যান থেকে প্রতিদিন প্রকাশ্যে চাঁদা তোলেন নাটোর পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মিঠুন আলী ও তার লোকজন। এই বাসষ্ট্যান্ড এলাকা থেকে পাশ্ববর্তী নলডাঙ্গার পাটুল, বাশিলা, সিংড়ার কালীগঞ্জ, বিলদহর, হাতিয়ান্দহ, নওগাঁর আত্রাই পর্যন্ত চলাচলরত অটোরিকশা ও লেগুনা থেকে দৈনিক ৫০ থেকে ১০০ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হয়। টাকা দিলেই অটোরিকশা দাঁড়ানোর সিরিয়াল পায় এই স্ট্যান্ডে।
যুবলীগ নেতা মিঠুনের বিরুদ্ধে আনীত চাঁদাবাজীর অভিযোগ নিয়ে কয়েকজন ভুক্তভোগী অটোরিক্সা ও লেগুনা চালকের ভিডিও বক্তব্য জাগোনাটোর২৪.কমের কাছে এসেছে।
অটোরিক্সা থেকে টাকা আদায়ের দায়িত্বে থাকা এক লাইনম্যান নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, দূরত্বভেদে প্রতিটি অটোরিক্সা থেকে ৫০ থেকে ১০০ টাকা এবং নাটোর-সিংড়া রুটে চলাচলকারী প্রতিটি লেগুনা থেকে প্রতিদিন ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা তোলা হয়।
লেগুনা চালক আব্দুল হান্নান জানান, তিনি পাঁচ বছর ধরে নাটোর শহর থেকে সিংড়ার বিলদহর এলাকা পর্যন্ত লেগুনা চালান। বগুড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গাড়ী থামিয়ে প্রতিদিন ৫০ টাকা করে চাঁদা দিতে হয়। মিঠুনের বিশ্বস্ত লোক হিসেবে পরিচিত সোহেল নামের একজন এই টাকা নিয়ে যায়।
মমিন আলী ও করিম মিয়া নামের দুই অটোরিকশা চালকের অভিযোগ করেন, প্রতিদিন আয় হোক বা না হোক, নিয়মিত চাঁদা দিতে হয় তাদের। চাঁদা না দিলে দাঁড়ানো যায় না রাস্তায়। তাই বাধ্য হয়েই তারা চাঁদা দেন।
জানা যায়, শহরের বলারীপাড়া এলাকার মৃত সাহাবুদ্দিনের ছেলে মিঠুন আলী বিএনপি সরকারের আমলে শ্রমিকদল নেতা কামাল হোসেনের সহযোগী ছিলেন। ওয়ান ইলেভেনের পর রাতারাতি তিনি আওয়ামী লীগ বনে যান। পরে নাটোর পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হন। নামে-বেনামে রয়েছে তার অনেক সম্পদ। সম্প্রতি তার চাঁদাবাজীর বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করায় পরিবহন শ্রমিকদের বাধ্য করার স্থানীয় সাংবাদিক নাসিম উদ্দীন নাসিমের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করতে।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে মিঠুন আলী বলেন, তার বিরুদ্ধে প্রকাশিত চাঁদাবাজীর সংবাদ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত যা তার মানহানি হয়েছে। তিনি কোনভাবেই চাঁদা তোলার সাথে জড়িত নয়। তিনি যুবলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত।
জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন বিপ্লব জানান, মিঠুন তার সংঠনের একজন সক্রিয় কর্মী, চাঁদাবাজ নন। একটি গোষ্ঠী যুবলীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা জানান, মহাসড়েক থ্রি হুইলার বন্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে কোন ব্যক্তির কারণে থ্রি হুইলার চলাচল বন্ধ করা যাচ্ছে কি না, তা জানা নেই। তবে চাঁদাবাজীর কোন অভিযোগ এখনও পাওয়া যায়নি। কোন প্রকার চাঁদাবাজীর ঘটনা ঘটছে কিনা তা খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।