নাটোর অফিস॥ প্রশাসন থেকে সংগ্রহের সময় বেঁধে দেয়ায় নাটোরের বাজারে এক সঙ্গে এসেছে তিনটি জাতের আম। তীব্র এই প্রতিযোগিতায় আম হারিয়েছে দাম ও আর বাজার হারিয়েছে ক্রেতা। আমের দাম কমে যাওয়ায় হতাশ চাষীরা। কম দামে কেনা এসব আম ফেরি করে বিক্রি করতে গিয়ে একই দশা মৌসুমী ব্যবসায়ীদের। আম উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে প্রশাসনিক সময়সীমা কোন সুফল বয়ে আনছে না মনে করে সংশ্লিষ্ট চাষী ও ব্যবসায়ীরা সিদ্ধান্ত পুনঃর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন।
গত বছর থেকে প্রশাসনের নির্দেশনা মেনে আম পাড়তে গিয়ে আর লাভের মুখ দেখেনি এখানকার আম চাষী ও ব্যবসায়ীরা। এ বছরও লোকসান গুনতে হবে বলে আশঙ্কা তাদের।
জানা যায়, নাটোর জেলা প্রশাসন গত ১৫ই মে থেকে আম পাড়ার সময় নির্ধারণ করে দেয়। সে অনুযায়ী বাজারে এখন পর্যন্ত গুটি আম, হিমসাগর, ল্যাংড়া, লক্ষণভোগ ও নাকফজলি আমের সরবরাহ থাকার কথা থাকলেও নেই লক্ষণভোগ ও নাকফজলি আম। আগামী ২৫ শে জুলাইয়ের মধ্যে বাজারে আসার অপেক্ষায় আছে আম্রপালি, বারি-৪, আশ্বিনা ও গৌরমতি আম।
স্থানীয় আম চাষী ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, এমনিতেই চলতি মৌসুমে আমের উৎপাদন বেড়েছে নাটোরে। তার উপর একাসাখে বাজারে আসায় সরবরাহ আধিক্যে আমের বাজার নিম্নমুখী। বাজারে আমের মধ্যে ল্যাংড়া ও গুটি আম বিক্রি হচ্ছে মণপ্রতি ১২০০ থেকে ১৬০০ টাকায় ও হিমসাগর ১৪০০ থেকে ১৬০০ টাকায়। তবে এসব আম ফেরী করে এলাকা ঘুরে ঘুরে কেজিপ্রতি ৪০ থেকে ৭০ টাকা কেজি পর্যন্ত বিক্রি করছে মৌসুমি বিক্রেতারা।
আমের দাম পড়ে যাবার কারণ হিসেবে চাষীরা বলছেন, রমজান মাসের শেষদিকে একসাথে বাজারে সব আম আসায় মৌসুমে ব্যবসার শুরুতেই ধাক্কা খেয়েছেন তারা। ক্রেতা না থাকায় আম গাছেই পাকে তখন। এভাবে নিম্নদরে আম বিক্রি শুরু হওয়ায় শুরুতেই হতাশ হয়ে পড়েন আম চাষীরা।
বুধবার বাগাতিপাড়া থেকে নাটোর রেলস্টেশন বাজারে আম নিয়ে আসা আমচাষি খয়ের উদ্দীন জানান, স্থানীয় বাজারে ক্রেতার অভাবে ফলন ভালো হওয়া সত্বেও শহরে এনে আম বিক্রি করতে হচ্ছে।
নলডাঙ্গার মাধনাগর গ্রামের আমচাষী রফিকুল ইসলাম জানান, বেঁধে দেয়া সময়ে সংগ্রহের পরও বিক্রি না হওয়ায় আম পেকে পেকে পঁচে যাচ্ছে। তাই পাকা আমগুলো শুকিয়ে আমতা তৈরি করেছেন তিনি।
একই দিন শহরের বড়গাছা পালপাড়া এলাকায় ফেরি করে ক্যারেটভর্তি আম বিক্রি করকে দেখা যায় মৌসুমী ব্যবসায়ীদের। হাফিজুল ইসলাম নামের একজন ব্যবসায়ী বলেন, ‘এবার মানুষ আম খাচ্ছে কম কিন্ত বাজারে আম প্রচুর। মানুষের দোরগোড়ায় এনেও আম কেনাতে বেগ পেতে হচ্ছে।’
গুরুদাসপুর উপজেলার মজারাজপুর গ্রামের ব্যবসায়ী মেরাজ উদ্দীন বলেন, প্রশাসনিক সময়সীমা আম উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে কোন সুফল বয়ে আনছে না। ক্রেতারাও আম কিনছেন না। ফলে সিদ্ধান্তটি পুনঃর্বিবেচনা করা দরকার।
আম-লিচুর সর্ববৃহৎ মোকাম নাটোর স্টেশন বাজারের আম ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম বলেন, চলতি মৌসুমে বাজারে আমের সরবরাহ অনান্যবারের চেয়ে তুলনামূলক বেশি। রোজার মাঝামাঝি সময় আম বাজারে আসায় বিক্রি কম ছিল। এখন আমের সরবরাহ পর্যাপ্ত কিন্ত ক্রেতা কম হওয়ায় দামও কম।