নাটোর অফিস॥ ইফতারে আলাদা মাত্রা যোগ করা কলার দাম যেন আকাশ ছুঁয়েছে নাটোরের বাজারগুলোতে। এক সপ্তাহ আগেও এখানে কলা বিক্রি হয়েছে প্রতি হালি ১৬ থেকে ২০ টাকা। অথচ রোজার প্রথম দিন থেকে এক লাফে কলার দাম হালি প্রতি ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। এভাবে প্রতিটি কলা ৮ থেকে ১০ টাকা পিস হিসেবে বিক্রি হচ্ছে।
ভোক্তারা বলছেন, এমন চড়া দামে দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষদের নাগালের বাইরে চলে গেছে কলা। তাদের অভিযোগ, দিনের বেলা বাজার থেকে দুষ্প্রাপ্য হয়ে গেছে কলা। কলা নিয়ে নাটোরের ব্যবসীরা মেতে উঠেছে অন্যরকম এক কারসাজিতে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত নাটোর শহর ও আশেপাশের বাজারগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে না কলা। দিনের শুরুতে কেনাকাটায় এসে বাজারে কলা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন ক্রেতারা। তবে ইফতারের দুই ঘন্টা আগে বাজারে আসছে কলা। আর সেই সময়ই হুমড়ি খেয়ে ক্রেতারা কিনছেন কলা। ব্যবসায়ীরা এ সময় বর্ধিত দামের বাইরে বিক্রি করছেন না কলা।
সম্প্রতি বাজারঘুরে ভোক্তাদের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। বুধবার শহরের নীচাবাজার কাঁচাবাজার, পৌরসভা মোড়, স্টেশন বাজার ও মাদ্রামোড় বাজারে কলা পাওয়া যায়নি। এর মধ্যে নীচাবাজার ছাড়া অন্য কোথাও কলার দেখা মেলেনি।
নীচাবাজারের কলা ব্যবসায়ী আবুল কালামের দোকানে গিয়ে দেখা যায়, তিনি কাঁচা কলা নিয়ে বসে আছেন। পাকা কলা কখন পাওয়া যাবে জানতে চাইলে তিনি কোন উত্তর দিতে পারেননি।
কলার দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা কম চাষের অজুহাতে কম সরবরাহের কথা বলছেন। তবে ক্রেতাদের দাবী, এক সপ্তাহ আগেও বাজারে কলার সরবরাহ পর্যাপ্ত ছিল। দাম বাড়ানোর উদ্দেশ্যে কৃত্তিম সংকট তৈরী করছেন ব্যবসায়ীরা।
শহরের স্টেশন বাজার এলাকায় সাইকেলে চড়ে কলা বিক্রি করছিলেন জব্বার আলী। তিনি জানান, কলা উৎপাদনের কৃষকদের বেশি খরচ হচ্ছে বলে দাম বেশি। তাই কলা চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে কৃষকরা।
শহরের পৌরসভা মোড়ে অন্যদিনগুলোতে কলা বিক্রি করতে দেখা গেলেও বুধবার দুপুরে কলা বিক্রি হতে দেখা যায়নি।
নীচাবাজার এলাকায় কলা ক্রেতা সিদ্দিকুর রহমান অভিযোগ করেন, রোজা আসলে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে কলার দাম বাড়িয়ে দেয়। এবার তারা ইফতারের কয়েকঘন্টা আগে কলা এনে বেশি দামে বিক্রি করছে। বছরের অন্যসময় ২০ টাকা হালি কলা পাওয়া গেলেও এবার দ্বিগুণ দাম গুনতে হচ্ছে।
মাদ্রাসামোড় বাজারে কলার ক্রেতা আবুল হোসেন বলেন, কলার এতো দাম হাওয়ার কথা নয়। রমজানে বাজার মনিটরিংয়ের অভাবে সুযোগ নেয় অসাধু ব্যবসায়ীরা।
সদর উপজেলার লক্ষীপুর-খোলাবাড়িয়া গ্রামের কলাচাষী আমজাদ ও সবুজ জানান, এবার রোজার আগে প্রাকৃতিক দুর্যোগে কলার ফলন কম হয়েছে। তাই বাইরে থেকে কলা আমদানি করা হচ্ছে। ফলে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
কনজুমার এসোসিয়েসন অব বাংলাদেশ(ক্যাব)নেতা এম এম আরিফুল ইসলাম বলেন, রমজানে ব্যবসায়ীদের অতিমুনাফা লাভের মানসিকতা তাড়া করে বেড়ায়। এর থেকে কলাও রেহাই পায়নি। প্রশাসনের উচিত বাজার মনিটরিং জোরদার করা।
জেলা প্রশাসক মোঃ শাহরিয়াজ জানান, রমজান মাসজুড়ে পণ্য ও দ্রব্য সামগ্রীর দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার উদ্দেশ্যে বাজার তদারকি অব্যাহত রাখা হবে।