নবীউর রহমান পিপলু ও নাইমুর রহমান: আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নাটোর সদর উপজেলায় প্রচার প্রচারণা শুরু করেছেন আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। তবে ২০১৪ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তুলনায় এবার প্রচারণায় এগিয়ে রয়েছেন নতুন ও তরুণ প্রার্থীরা। বছরের শুরু থেকেই তারা নিজেদের মত করে চালাচ্ছেন প্রচারণা। উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন চষে বেড়াচ্ছেন তারা। আধুনিক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে তৃণমূল পর্যায়ে ভূমিকা রাখতে দল এবার তরুণদের বেছে নেবে, এমন প্রত্যাশায় রয়েছেন তারা।
আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চেয়ে ইতোমধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীরা তাদের প্রার্থীতা জানান দিচ্ছেন বিভিন্ন উপায়ে। এদের মধ্যে অনেকেই দেয়ালে পোস্টার সাঁটানোর মধ্যেই নিজেদের সম্ভাব্য প্রার্থীতা সীমাবদ্ধ রেখেছেন। এবারের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে চার তরুণ নেতৃত্ব সহ ৬ জনের নাম শোনা যাচ্ছে। তবে তরুণ প্রার্থীরাই করছেন গণসংযোগ। তারা হলেন নাটোর পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর, ছাত্রলীগের সাবেক জেলা সভাপতি ও শ্রমিক নেতা মোস্তারুলল ইসলাম আলম, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আহমেদ সেলিম ও জেলা যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন বিপ্লব ও যুবলীগ নেতা জামিল হোসেন মিলন।
নাটোর পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর জেলা ট্রাক,ট্যাংক ও কাভার্ড ভ্যান পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মোস্তারুল ইসলাম আলম প্রচারণা ও গণসংযোগে এগিয়ে রয়েছেন। তিনি একজন ক্লিন ইমেজের সাবেক জনপ্রতিনিধি হিসেবেই পরিচিত। একসময়ে নাটোর শহরে বিএনপি-জামাতের প্রবল আধিপত্যেও আওয়ামী লীগের পাঁচজন সক্রিয় কর্মীর একজন ছিলেন তিনি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী শফিকুল ইসলাম শিমুলের পক্ষে পরিবহন শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ করেন তিনি।
মোস্তারুল ইসলাম আলম বলেন, দলীয় মনোনয়ন পেলে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে চাই। পূর্ব অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আমি নাটোর সদর উপজেলাবাসীর সেবা করতে চাই। ইতোমধ্যে সদর উপজেলার সবকয়টি ইউনিয়নে গণসংযোগ সম্পন্ন করেছি এবং ভোটারদের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। মনোনয়ন পেলে দলকে জয় উপহার দিতে পারবো।
জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক বিনয়ী, আহম্মেদ সেলিমও এবার উপজেলা নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। বিনয়ী হিসেবে সকলের নিকট সমাদৃত তরুণ এই স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। দলীয় প্রতিটি কর্মসূচীতে তার সরব উপস্থিতি বিশেষভাবে লক্ষণীয়। ২০১৫ সালে নাটোরে বিএনপি-জামায়াতের অবরোধকালে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতৃবৃন্দকে ঐক্যবদ্ধ করে রাজপথে অবস্থান নেন তিনি। আহমেদ সেলিম বলেন, দলের একজন নিবেদিত কর্মী হিসেবে নাটোরের জনগণের পাশে আছি এবং থাকবো আজীবন। জননেত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ যদি আমাকে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে যোগ্য মনে করে মনোনয়ন দেয় তবে আমি নির্বাচন করবো। নাটোর সদরবাসী এবার নতুনদের নির্বাচিত করবেন বলেও বিশ্বাস করি।
জেলা যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক ও প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক নবীর উদ্দিনের ছেলে রুহুল আমিন বিপ্লব বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে রাজনীতে রয়েছেন। এবার তিনি চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করতে আগ্রহী। তার নেতৃত্বে যুবলীগ কর্মীদের সক্রিয় অংশ গ্রহণ ছিল এবারের জাতীয় নির্বাচনে। দলের দুঃসময়ে রাজপথে থেকে কর্মসুচী পালন করেছেন। রুহুল আমিন বিপ্লব বলেন, তিনি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। আর মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামীলীগের সদস্য হিসেব পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি। দল তাকে মনোনয়ন দিলে তিনি জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনানুযায়ী সদর উপজেলাকে দুর্নীতি ও মাদক মুক্ত রাখতে কাজ করে যাবেন।
অপর যুবলীগ নেতা জামিল হোসেন মিলনও এবার চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করতে চান। ইতোমধ্যে তিনি গণসংযোগ চালাচ্ছেন প্রতিদিন। এবারের জেলা পরিষদের ৬ নং ওয়ার্ডের সদস্য পদে নির্বাচনে অংশ নিয়ে একই দলের প্রার্থীর কাছে মাত্র এক ভোটের ব্যবধানে হেরে যান। যুবলীগ নেতা জামিল হোসেন মিলন বলেন, আমি নাটোরের জনগণের সেবা করে আসছি দীর্ঘদিন ধরে। আজীবন সেবা করে যেতে চাই। দলীয় নেতাকর্মী এলাকার জনসাধারণের দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে আমি উপজেলা চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন চাইছি। দল যোগ্য মনে করে মনোনয়ন দিলে জয় উপহার দেবো।
এদিকে চার এই তরুন নেতা নিজেদের পক্ষে জনমত সৃষ্টি করতে ব্যাপকহারে গণসংযোগ চালালেও এখনও প্রচারণায় অংশ নেননি বর্তমান চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম রমজান। তিনি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। রমজান বলেন, আমি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে নাটোর সদর উপজেলায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ড করেছি। আমার কাজের মূল্যায়নের মাধ্যমে দল মনোনয়ন দিলে অবশ্যই নির্বাচন করবো।
অপরদিকে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক কলেজ শিক্ষক আনোয়ার হোসেন আনু চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, নাটোর সদর উপজেলা ৭টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। নাটোর সদরে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ১৯ হাজার ৩২ জন ও নারী ভোটার ১ লাখ ২১ হাজার ৩৯১ জন।
এদিকে আাওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নির্বাচনী গণসংযোগ শুরু করলেও অন্য কোন দল বা স্বতন্ত্র কাউকে মাঠে দেখা যাচ্ছেনা বা কারো নামও শোনা যাচ্ছেনা। তাই এবারের ভোটের মাঠে এখনও পর্যন্ত আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী তরুণ নেতৃত্বের জয়জয়কার।