আশিক,নাটোর অফিস॥
বুকের একমাত্র ধন স্বপ্ন সকালে বাতাসা আর জল খেয়ে বাড়ি থেকে স্কুলে গিয়েছিল। স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে ভাত খাওয়ার কথা বলে ছিল সে। সে বাড়ি ফিরলো ঠিকই তবে লাশ হয়ে। এখন আর কে ভাত খাবে, কে মা বলে ডাকবে আমাকে-আদরের একমাত্র পুত্র সন্তান স্বপ্ন মজুমদার (১৬) কে হারিয়ে আহাজারি করে চলেছেন মা নিভারানী মজুমদার। একমাত্র পুত্র সন্তানকে হারিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন তিনি। মঙ্গলবার দুপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন লালপুর উপজেলার কদিমচিলান ইউনিয়নের সেকচিলান হিন্দুপাড়া গ্রামের রতন মজুমদার ছেলে স্বপ্ন মজুমদার। একই মোটর সাইকেলে করে বাড়ি ফেরার পথে ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে এক সাথে স্বপ্ন ,শ্রাবন ও বিধান নামের তিন বন্ধুই নিহত হন। মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় শুরু হয় শোকের মাতম।
ঘটনার পর স্বপ্নর বাড়িতে গেলে দেখা যায়, মা নিভারানী ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছিলেন আর বলছিলেন, আমার সোনার টুকরা স্বপ্ন গতকাল রাতেও কিছু খাইনি। সকালে শুধু বাতাসা আর জল খেয়ে স্কুলে গিয়েছে। বলেছিল স্কুল থেকে ফিরে এসে ভাত খাবে সে। এখন কে ভাত খাবিনি। আমাকে কে মা বলে ডাকপি। একবার মা বলে ডাক বাপ স্বপ্নরে। একটু ভাত খা বাপ, আমার বুকে আয় বাপ স্বপ্ন। এমন ভাবেই বিলাপ করছিলেন আর বুক চাপড়াচ্ছিলেন । স্বপ্নের অকাল মৃত্যুতে শোকের মাতাম চলছে গ্রামজুড়ে। গ্রামবাসিও স্বপ্নের অকাল মৃত্যু মেনে নিতে পারছিলেন না।
একই গ্রামের নিহত শ্রাবনের মা বিউটি রানী মজুমদারও একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন আর বলছিলেন আমাকে কে মা বলে আর ডাকবে। কে আমাকে আদর করবে। একবার মা বলে ডাক। শ্রাবনেরও স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে খাওয়ার কথা ছিলো কিন্তু শ্রাবনও বাড়ি ফিরলেন ঠিকই তবে লাশ হয়ে। শ্রাবনের মা বিউটি রানী মজুমদার আরো বলছিলেন, আমার ছেলে তো স্কুলে গিয়েছিলো ওই বিধান মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে না গেলে আমার ছেলে ঠিকই আজ বাড়ি ফিলে ভাত খেত। বাপ শ্রাবন তুই ফিরে আয় বাপ।’
এলাকাবাসী জানায় ,স্বপ্ন লালপুর উপজেলার কদিমচিলান ইউনিয়নের সেকচিলান হিন্দুপাড়া গ্রামের রতন মজুমদার ছেলে। রতন মজুমদারের তিনি কন্যা ও এক পুত্র সন্তান। এর মধ্যে স্বপ্ন সবার ছোট। সে এবার সেকচিলান উচ্চ বিদ্যালয়েরে দশম শ্রেণীর ছাত্র ছিলো। নিহত সকলেই দশম শ্রেণীতে পড়তো। মঙ্গলবার দুপুর ১২ টার দিকে সেকচিলান গ্রামে বালুবাহি ট্রাকের সঙ্গে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় এক সঙ্গে তিন বন্ধু স্কুল ছাত্র প্রাণ হারায় । এর মধ্যে স্বপ্ন ও শ্রাবন দুজন চাচা ভাতিজা। অপর জন সিংড়া এলাকার বিষ্ণ সরকারের ছেল বিধান সরকার (১৬)। বিধান সরকার তার ফুপুর বাড়ি ধলা হিন্দুপাড়া গ্রামে বেড়াতে এসেছিলো। সকালে তার ফুপাতো ভাইয়ের মোটরসাইকেল নিয়ে বের হয় বিধান । সেকচিলন স্কুলে গিয়ে তার মোটরসাইকেলে স্বপ্ন ও শ্রাবন কে নিয়ে পাশ্ববর্তী ওয়ালিয়া বাজারে যায়। পরে দুপুর ১২ টার দিকে ওয়ালিয়া বাজার থেকে ধলা গ্রামে বাড়িতে ফেরার পথে সেকচিলান নামক এলাকায় একটি বালু বাহি ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে তিন জনের মৃত্যু হয়। তারা তিনজনই দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ছিলেন। স্বপ্ন ও শ্রাবণ সেকচিলান স্কুলে এক সঙ্গে পড়ত। স্বপ্ন ও শ্রাবন প্রতিদিনের মতো এক সঙ্গে স্কুলে যায়। বিধান মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে ওয়ালিয়া বাজারে ঘুরতে যায়। বিধানই মোটারসাইকেল চালাচ্ছিলো। পরে ওয়ালিয়া বাজার থেকে বাড়ি ফেরার বিপরীতমুখি ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতের মোটরসাইকেলসহ মোটরসাইকেলের থাকা বিধান, শ্রাবন ও স্বপ্ন তিনজনই ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে। এসময় স্থানীয়রা ট্রাকটিকে উল্টিয়ে তাদের তিনজনকে উদ্ধারের চেষ্টা করে। কিন্তু ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে মোটরসাইকেলের দুইজন শ্রাবন ও স্বপ্ন ঘটনাস্থলেই মারা যায়। অপর জন বিধানকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
ওয়ালিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সুমন চন্দ্র দাস জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ফাঁড়িতে আনা হয়েছে। দুর্ঘটনা কবিলত ট্রাক ও মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে। কোন অভিযোগ না থাকায় পরিবারের দাবির প্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।