নাটোর অফিস॥
নাটোরের লালপুর উপজেলা জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে ভয়ংকর চায়না দুয়ারি নামের এই জাল। উপজেলার খাল-বিল-নদীতে এখন নতুন পানিতে পরিপূর্ন। নতুন পানিতে দেশি মাছগুলো ডিম ছেড়েছে। কিন্তু ডিম ফুটিয়ে রেনু পোনাগুলো বড় হওয়ার আগেই এক শ্রেণির অসাধু মৎস্য শিকারি প্রশাসনের চোখ ফাঁকিদিয়ে হালকা ও মিহি বুননের ছোট ফাঁসের এই জাল পেতে শিকার করছে নানা প্রজাতির মাছ ও পোনা। বাদ পড়ছে না উপকারী প্রাণী ব্যাঙ, সাপ, কাঁকড়া, কুচিয়াসহ নানা জাতের পোকা-মাকড়ও। পানির নিচে বসিয়ে রাখা এই জাল উপর থেকে বোঝার উপায় নেই।কম পরিশ্রমে বেশি মাছ ধরতে পারায় কারেন্ট জালের চেয়েও বিপজ্জনক এই জাল জেলেদের কাছে এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এতে দেশি প্রজাতির মাছের সঙ্গে জলজ প্রাণীও অস্তিত্ব সংকটে পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গোপালপুর বাজারে মাছ বিক্রয় করতে আসা রমেজ আলী জানান, চন্ডিগাছা বিল, লালপুরের পদ্মানদী, খরিসাডাঙ্গা নদী, বড়ালসহ বিভিন্ন বিল ও নদীতে শত শত চায়না দুয়ারি জাল পেতে রাখা আছে। এতে প্রচুর দেশীয় প্রজাতির মাছ ধরা পড়ছে। তারা বিল থেকে মাছ কিনে এনে বিক্রি করছেন ।’
সূত্র বলছে, মাছের জন্য হুমকি বিবেচনায় মৎস্য অধিদপ্তর এ জাল নিষিদ্ধ করেছে। তবে নিষদ্ধ এই জাল দিয়ে মাছ শিকার বন্ধে উপজেলা প্রশাসন মাঝেমধ্যে অভিযান চালালেও অসাধু ব্যবসায়ীরা থেমে নেই। বিধ্বংসী এ জালের কারণে ধ্বংস হচ্ছে মৎস্য সম্পদ ও জলজ প্রাণী। হুমকির মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র।
তবে এসব নিষিদ্ধ জাল দিয়ে মাছ শিকার বন্ধে ও মৎস্য আইন বাস্তবায়নে নিয়োমিত অভিযান চালানো হচ্ছে বলে দাবি করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মেহেদী হাসান বলেন, গতকাল শুক্রবার বিকেলেও চন্ডিগাছা বিলে উপজেলা প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযান চালিয়ে ৮ টি চায়না দুয়ারী, একটি ¯্রােতিজাল আটক করে পুড়ানো হয়, যার আনুমানিক মুল্য ৫০ হাজার টাকা। এসময় উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম নাজিম উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।
লালপুর উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ছয় বছর আগে চীন থেকে আমদানি করা চায়না দুয়ারির ব্যবহার শুরু হয় দেশে। এর নাম দেওয়া হয় ‘চায়না দুয়ারি’। তবে এখন দেশেই তৈরি হচ্ছে এ ভয়ঙ্কর জাল। লোহার রডের তৈরি ছোট গোলাকার ও চতুর্ভুজ কাঠামো। এগুলো যুক্ত করে ১০০ থেকে ২০০ ফুট লম্বা কাঠামো তৈরি করা হয়। একে ঘিরে দেওয়া হয় জাল দিয়ে। মিহি বুননের কারণে অল্প বা গভীর পানিতে এ ফাঁদ পাতলেই ছোট-বড় সব ধরনের মাছ আটকে পড়ে জালে। বাদ যায়না পোনা মাছ এমনকি ডিম পর্যন্ত। অবাধে এ জাল ব্যবহারের কারণে দেশি মাছের দেখা মিলছে না। এক শ্রেণির অসাধু মৎস্য শিকারি দেশি মাছ ধ্বংস করতে এই জাল ব্যবহার করছে। এই জালের অবাধ ব্যবহারের কারনে প্রাকৃতিক জলাশয় হচ্ছে মাছ শূন্য। বর্তমানে চিংড়ি, পুঁটি, শোল, টাকি, বাইন, শিং, কৈ, টেংরার মাছের দেখা মিলছে না।’
লালপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম নাজিম উদ্দিন বলেন, নিষদ্ধ এই জাল দিয়ে মাছ শিকারের কারনে পোনা মাছ এমনকি ডিম পর্যন্ত ধারা পড়ে। বাদ পড়ছে না উপকারী প্রাণী ব্যাঙ, সাপ, কাঁকড়া, কুচিয়াসহ নানা জাতের পোকা-মাকড়ও। এক শ্রেণির অসাধু মৎস্য শিকারি প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে চায়না দুয়ারি দিয়ে দেশি প্রজাতির মাছ শিকার করছে। অবৈধ জালের কারখানা বন্ধে এবং পোনা মাছ রক্ষার্থে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার বন্ধে ও মৎস্য আইন বাস্তবায়নে নিয়োমিত অভিযান চলছে। গতকাল বিকেলেও চন্ডিগাছা বিলে উপজেলা প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযান চালিয়ে ৮ টি চায়না দুয়ারী, একটি ¯্রােতিজাল আটক করে পুড়ানো হয়, যার আনুমানিক মুল্য ৫০,০০০ টাকা। তবে জেলেদেরও এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে জানান এই কর্মকর্তা।