নাটোর অফিস॥
নাটোরের লালপুরে পদ্মার চরাঞ্চলে একের পরে এক বের হচ্ছে রাসেল ভাইপার সাপ। ৯দিনে পদ্মার চরে ৬টি বাচ্চাসহ দুটি বড় সাপকে মেরে ফেলা হয়েছে। এতে আতঙ্ক বিরাজ করছে পুরো চরাঞ্চল জুড়ে।রাসেল ভাইপার আতঙ্কে অনেক কৃষকই যেতে চাচ্ছে না মাঠে।
আজ সোমবার (০১ জুলাই) সকালে চরাঞ্চলের নলবোনা মাঠে বাদামের জমিতে একটি রাসেল ভাইপার দেখতে পায় কৃষকরা। বাদাম গাছে হাত দিতেই দেখা যায় সাপটি ইঁদুর খাচ্ছিলো। এ সময় মানুষের উপস্থিতি টেঁর পেয়ে ফোঁস শব্দ করে আক্রমন করতে তেরে আসে সাপটি। পরে কৃষক রশিদ ফরাজি সাপটিকে মেরে ফেলে।
এর আগে গত শনিবার (২২ জুন) দুপুরে উপজেলার বিলমাড়িয়া ইউনিয়নের পদ্মার নওসাড়া চরের একটি বাদাম ক্ষেতে তিন বাচ্চাসহ মা সাপটিকে পাওয়া যায়।
পরের দিন রোববার (২৩ জুন) সকালে উপজেলার বিলমাড়িয়া ইউনিয়নের নওসাড়া চরে কুমড়ার জমিতে ঘাস কাটতে গিয়ে তিনটি রাসেলস ভাইপার সাপের বাচ্চা দেখতে পান উপজেলার মোহড়কায়া কয়লার ডহর গ্রামের বাসিন্দা কাজল (২২)। পরে স্থানীয় কৃষকরা মিলে সাপের বাচ্চা তিনটিকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে মেরে ফেলেন।
এনিয়ে মোট ৮টি রাসেল ভাইপার সাপ ধরা পড়ায় চরাঞ্চলে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেকেই চরের মাঠে কাজে যেতে চাচ্ছে না বলে জানিয়েছে একাধিক কৃষক ও স্থানীয়রা।
বিলমাড়িয়া এলাকার স্থানীয় কৃষক আকাশ জানায়, এই সাপ এর আগেও চরে দেখা গেছে। এক সঙ্গে চরে চারটি রাসেল ভাইপার সাপ মেরে ফেলার ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ায় এলাকাজুড়ে এখন সাপ আঙ্ক বিরাজ করছে। অনেক কৃষকই সাপের ভয়ে চরে বাদাম ক্ষেতে যেতে চাইছে না।’
নির্মল কুমার জানায়, গত শনিবার পদ্মার নওসাড়া চরে একটি বাদাম ক্ষেতে ৭/৮ জন কৃষক বাদাম উঠাতে যান। দুপুরে বাদাম তোলার একপর্যায়ে জমিতে একটি বড় সাপ দেখতে পান তারা। পরে তারা সাপটি পিটিয়ে মেরে ফেলেন। এর পরে ওই একই জমিতে আরো তিনটা বাচ্ছা সাপ বের হয়। পরে ওই তিনটি বাচ্ছা সাপও মেরে ফেলেন তারা। কিন্তু সেই সাপগুলো যে রাসেল ভাইপার ছিলো এটি তাদের জানা ছিল না। বর্তমানে সাপের ভয়ে অনেক কৃষকই চরে যেতে ভয় পাচ্ছেন।
স্থানীয় বিলমাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সিদ্দিক আলী মিষ্টু জানান, কয়েক দিনে বিলমাড়িয়া ইউনিয়নের পদ্মার চরে ৭টি বিষধর রাসেল ভাইপার সাপ বের হওয়ায় এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। আজ নতুন করে আবারও চরাঞ্চলের নলবোনা মাঠে বাদামের জমিতে একটি সাপ বের হয়েচে। এতে কৃষকরা মাঠে যেতে ভয় পাচ্ছেন।’
তিনি আরো বলেন, এই সাপ কয়েক বছর আগে থেকেই চরে আছে। কয়েক বছর আগেও এই সাপ বের হয়েছে, তখন কোন আতঙ্ক ছিলো না। কিন্তু এবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সাপের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ায় এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে।’
‘এই আটটি সাপই বিষধর রাসেল ভাইপার বলে নিশ্চিত করেছেন রাজশাহী বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বন্যপ্রাণী পরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবির। তবে এতে আতঙ্কিত না হয়ে চরের কৃষকসহ সকলকে সতর্কতার সঙ্গে চলাফেরা করার পরামর্শ দেন তিনি।’
লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার মোঃ ওয়ালিউজ্জামান বলেন, পদ্মা নদীর তীরবর্তী এলাকায় ৮টি রাসেল ভাইপার সাপ মারা পড়েছে তিনি শুনেছেন। তবে লালপুর হাসপাতালে এখন পর্যন্ত রাসেল ভাইপার সাপের কামড়ানো কোন রোগী আসে নি। রাসেল ভাইপার বিষধর তবে এতে আতঙ্ক হওয়ার কিছু নেই। জনসচেতনতার প্রয়োজন। হাসপাতালে পর্যাপ্ত পরিমানে এন্টিভেনাম আছে, চিন্তার কোন কারন নেই। সাপে কাটা রোগী হাসপাতালে আসলেই ডাক্তার ও নার্সরা দ্রুত চিকিৎসা শুরু করতে পারবেন। সেজন্য আমাদের হাসপাতালে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে। বলেও জানান তিনি। ’
লালপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন আখতার বলেন, পদ্মার চরাঞলে রাসেল ভাবপিার সাপের উপদ্রুপ দেখা দিয়েছে। রাসেল ভাইপার বিষধর সাপ। তবে এতে আতঙ্ক হওয়ার কিছু নেই। আতঙ্কিত না হয়ে চরের কৃষকসহ সকলকে সতর্কতার সঙ্গে চলাফেরা করার পরামর্শ দেন তিনি।