নাটোর অফিস ॥
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বরাদ্দ ভিজিএফ এর চাল এমপির নামে ৫০ শতাংশ দিতে হবে এমন দাবি পুরনে অপরাগতা জানালে ঘুষি মেরে নাক ফাটানো হলো বড়াইগ্রাম উপজেলার মাঝগাওঁ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল আজাদ দুলালের। এরপর এমপি সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারীর সমর্থকরা হামলে পড়ে চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল আজাদ দুলালের ওপর। পরে পরিষদের বাহিরে এনেও মারপিট করা হয়। এসময় ভাংচুর করা হয় পরিষদ কার্যালয়ের আসবাবপত্র। ভিজিএফ এর চাল নিতে আসা শত শত নারী পুরুষ, উপস্থিত গ্রাম পুলিশ এবং ওর্য়াড সদস্যরা তাকে রক্ষা করেন। ধাক্কাধাক্কিতে এসময় আরও ৪ জন আহত হয়। এই ঘটনাটি ঘটে বৃহস্পতিবার দুপুরে। হামলাকারীরা চলে যাওয়ার পর বিক্ষুব্ধ জনতা এই ঘটনার প্রতিবাদে বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়ক অবরোধ করে। খবর পেয়ে উপজেলা পরিষদের নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন বাবলু, উপজেলা নির্বাহী অফিসার লায়লা জান্নাতুল ফেরদৌস, বড়াইগ্রাম সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরীফ আল রাজীব, অফিসার ইনচার্জ শফিউল আযম খাঁন ঘটনাস্থলে এসে হামলাকারীদের আটকের আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেয় বিক্ষুদ্ধরা। প্রায় আধাঘন্টা অবরোধ চলাকালে ঈদুল আযহার মহুর্তে যানজটে পড়ে দুরপাল্লার যাত্রিদের নাকাল হতে হয়।
আহত চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল আজাদ দুলাল বলেন হামলাকারীরা সকলেই স্থানীয় সংসদ সদস্য সিদ্দীকুর রহমান পাটোয়ারীর অনুসারী। বৃহস্পতিবার পূর্ব-নির্ধারিত সময় সূচি মোতাবেক মাঝগাঁও ইউনিয়ন পরিষদে ভিজিডির চাল বিতরণ চলছিল। একই সাথে ভিজিএফ এর চাল আসছিল। যা আগামী শনিবার বিতরণ হবে। প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার ১০ কেজি করে চালের জন্য ২২৪৯ জনের নামের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এসব দুস্থ ও গরীবদের চালের মোট অংশের অর্ধেক ভাগ এমপিকে দিতে হবে, তাদের এমন দাবি আমি প্রত্যাখান করায় এমপি’র অনুসারী আতিক, সিরাজ, রানা, ওয়াজেদ আলী, আরিফ, জীবন গাজী, ইমরান, রাজীব সহ ১৪/১৫ জন আমার উপর হামলা চালায়। এর আগে তারা গতকাল রাতে আমার কাছে গিয়ে এই বিশেষ বরাদ্দের জন্য ৫০ শতাংশ তালিকা দিতে চায়। তাদের ২০ শতাংশ তালিকা নিয়ে পরিষদে আসতে বলি। তাদের একই দাবি ৫০ শতাংশ এমপির বরাদ্দ দিতে হবে। অপরাগতা প্রকাশ করলে তারা ঘুষি মেরে আমার নাক ফাঠিয়ে দেয়। এরপর তারা আমার ওপর চড়াও হয়ে বেধড়ক মারপিট করে। এসময় তারা বলে ভিজিএফের চাল কি তোর বাপের। এমপির কথার বাহিরে কিছু হবে এই উপজেলায়।
উপস্থিত ইউপি সদস্য সহ গ্রাম পুলিশরা জানায় ,আজ বৃহস্পতিবার ১০ টাকা কেজি দরে ৩০ চাউল দেয়া হচ্ছিল। মানুষের ভির ছিল প্রচুর। এরমধ্যে হঠঠাৎ করে এমপি’র লোকজন চেয়ারম্যানের রুমে ঢুকে। এসময় চিৎকার চেঁচামেচি ও চেয়ার দিয়ে টেবিলের কাঁচ ভাঙ্গার শব্দ শুনতে পাওয়া যায়। তারা চেয়ারম্যানকে কিল-ঘুষি-লাথি মারতে মারতে বাহিরে আনে। এ সময় চেয়ারম্যানের চিৎকারে সকলে এগিয়ে আসলে হামলাকারীরা মোটরসাইকেল যোগে দ্রুত চলে যায়। পরে চেয়ারম্যানকে উদ্ধার করে বড়াইগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
এদিকে চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল আজাদ দুলালে ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করে হাজারো নারী-পুরুষ। খবর পেয়ে উপজেলা পরিষদের নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন বাবলু, উপজেলা নির্বাহী অফিসার লায়লা জান্নাতুল ফেরদৌস, বড়াইগ্রাম সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরীফ আল রাজীব, অফিসার ইনচার্জ শফিউল আযম খাঁন ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
উপজেলা পরিষদের নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন বাবলু জানান, চিহ্নিত সকল সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করা না হলে আরও বৃহত্তর কর্মসূচির ডাক দেওয়া হবে।
বড়াইগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শফিউল আযম খান বলেন, এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। দ্রুততম সময়ে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।
ইউএনও লায়লা জান্নাতুল ফেরদৌস ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
এব্যাপারে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে স্থানীয় সংসদ সদস্য সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,সংসদ অধিবেশনের জন্য তিনি ঢাকায় রয়েছেন। তাই কিছুই জানেননা। খোঁজ নিয়ে প্রকৃত ঘটনা জানাতে পারবেন বলে তিনি জানান।