নাটোর অফিস॥
নাটোরের বড়াইগ্রামে বাগডোব ও কুমারখালি গ্রামের প্রায় ৫০ বিঘা জমিতে তৈরি পানের বরজ (পানের ক্ষেত) আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। শনিবার (১১ মে) দুপুর ১টার দিকে এ অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। বাঁশ ও পাটখড়ির তৈরি এই বৃহৎ পানের বরজ মাত্র ৩০ মিনিটে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এসময় জামাত আলী (৬০) নামের এক শ্রমিক আহত হয়েছেন এতে ২৬ কৃষকের আনুমানিক ৩ কোটি টাকার সম্পদ ভস্মিভুত হয়।
ক্ষতিগ্রস্ত পান চাষি হাবিবুর রহমান জানান, পানের বরজের পেছনে পশ্চিম দিকে নিজাম আলীর সীম ক্ষেতে সীমের গাছ আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করতে গিয়ে অসাবধানবশতঃ পাশের পানের বরজে আগুন লেগে যায়। প্রচন্ড তাপদহ ও এর সাথে হালকা বাতাস থাকায় দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
আব্দুল হামিদ নামে অপর এক কৃষক বলেন, শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বাগডোব মন্ডলপাড়ায় নিজাম উদ্দিন নামের এক কৃষক আগুণ দিয়ে তার জমির মরা সিম গাছ পুড়িয়ে ফেলছিলেন। এমন সময় বাতাসে ওই আগুণ পাশের একটি পান বরজে লেগে যায়। ফাঁকা জায়গায় দমকা বাতাসে মুহুর্তেই আগুণ পাশাপাশি থাকা অন্তত ২৬টি পানের বরজে ছড়িয়ে পড়ে। পাশেই বড়াল নদী থাকলেও পানি না থাকায় লোকজন আগুণ নেভাতে পারেনি। খবর পেয়ে বনপাড়া ফায়ারসার্ভিসের কর্মীরা ছুটে আসেন। কিন্তু ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর রাস্তা না থাকায় এবং পানির উৎস না থাকায় মাত্র আধা ঘন্টার মধ্যে ৫০ বিঘা জমির পানবরজ পুড়ে ভষ্মিভূত হয়। এ সময় একটি পান বরজে কাজ করছিলেন জামাত আলী নামে এক কৃষি শ্রমিক। আগুণের লেলিহান শিখায় ভয় পেয়ে তিনি বরজ থেকে বের হতে পারছিলেন না। পরে তাঁর ছেলে গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করেন। কৃষক জামাত আলী বলেন, পানের বরজে আগুন দেখে দৌড়ে আমি সহ আরও ২০/২৫ জন কৃষক ছুটে আসি। কিন্তু দীর্ঘদিনের খরা ও প্রচন্ড তাপদহের কারণে পানি শুকিয়ে গেছে। আশেপাশের কোন খাল বা নদী এমনকি টিউবওয়েল থেকেও পানি পাওয়া যায়নি। আগুন এতো দ্রুত ছড়িয়েছে যে মাত্র ৩০ মিনিটেই সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
মোমিন আলী বলেন, আগুন লাগার পর বনপাড়া ফায়ার সার্ভিসকে জানানোর পর দুইটি ইউনিট এসে আগুন নেভায়। কিন্তু ততক্ষণে ৫০ বিঘার পান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আগুণে অন্তত ২৬ জন পানচাষী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তার মধ্যে আব্দুল হামিদের সাড়ে ৪ বিঘা, জামাত আলীর সোয়া বিঘা, আতাউরের দেড় বিঘা, মুস্তাকের দেড় বিঘা, আরশেদের দেড় বিঘা ও লতিফ, আবেদ, মারফত আলীর এক বিঘা করে জমির পানের বরজ পুড়ে গেছে।
বনপাড়া ফায়ারসার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা একরামুল হাসান বলেন, রাস্তা না থাকায় তাঁরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পারেননি। ফলে আগেই আগুণে সবকিছু পুড়ে যায়। এছাড়া নদীতে পানি না থাকায় স্থানীয়রাও আগুণ নেভাতে পারেনি। আগুণে ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ করা তাৎক্ষণিক সম্ভব হয়নি বলে জানান তিনি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শারমিন সুলতানা জানান, ক্ষতিগ্রস্ত পান চাষিদের তালিকা প্রস্তুত করে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার লায়লা জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর তালিকা হাতে পেলে কৃষি অফিস সহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দপ্তরের সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা হবে।