নাটোর অফিস॥
নাটোরের গুরুদাসপুরে গত এক সপ্তাহে প্রায় ২২টি বৈদুতিক মিটার চুরি হয়েছে। চুরি হওয়া মিটারের পাশে রেখে যাওয়া হয় চিরকুট। যেখানে লেখা থাকে ‘আপনার মিটার চুরি হয়েছে,ফেরত পেতে কল করুন’। চিরকুটে থাকা নম্বরে ফোন করলে মিটার ফেরৎ দেওয়ার শর্তে চাওয়া হয় টাকা। বিকাশ ও নগদ নম্বরে টাকা নিয়ে মিটার কোথায় পাওয়া যাবে তার স্থান বলে দেওয়া হয়। এমন অভিযোগ এনে মঙ্গলবার সন্ধায় উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের বেড়গঙ্গারামপুর গ্রামের ব্যবসায়ী মোঃ সজিব হোসেন নাটোর পল্লী বিদ্যুত সমিতি-২ গুরুদাসপুর জোনাল অফিস ও গুরুদাসপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। একই সময়ে ওই গ্রামের আরও তিনজন ব্যবসায়ী মিটার চুরি হওয়ার বিষয়ে অভিযোগ করেন।
ব্যবসায়ী সজিব হোসেন জানান,‘আমি সেচ প্রকল্পের জন্য বাড়ির সামনে একটি বৈদ্যুতিক মিটার সংযোগ নিয়েছিলাম প্রায় দুই বছর পূর্বে। কিন্তু গত এক বছরে আমার মিটার চারবার চুরি হয়েছে। চুরি হওয়ার পর মিটারের পাশে চিরকুট রেখে যায় এবং নম্বর দেওয়া থাকে। সেই নম্বরে ফোন দিলে চোর ফোন রিসিভ করে মিটার ফেরত দিবে বলে ৫ হাজার টাকা করে দাবি করে। অনেক অনুরোধ করার পর গত তিনবার ১৫০০ টাকা করে বিকাশের মাধ্যমে দিয়ে মিটার ফেরত নিয়েছি। টাকা দিলে মিটার চুরি করে কোথায় রেখেছে সেই স্থান বলে দেয়। এমন ভাবেই (২৪ জুলাই) রাতে আমার মিটার চুরি হয়ে যায়। পূর্বের মতই চিরকুটে দেওয়া নম্বরে ফোন দিলে বলে ৫ হাজার টাকা লাগবে। আমি চোরকে অনুরোধ করে কিছু টাকা কম নেওয়ার কথা বললে তারা বলে যে, ‘আরে ভাই এত পরে ফোন দিছেন কেন? চারজন মানুষ সারারাত পরিশ্রম করেছি। কম হলে হবে না। যাই হোক ৪ হাজার টাকা দেন। না হলে বিরক্ত কইরেন না।’ এরপরে অনেক অনুরোধের পর ২ হাজার টাকা তার দেওয়া বিকাশ নম্বরে পাঠাই। টাকা পাঠানোর পর আমার বাড়ির পাশে লেবু বাগানের ঝোপের মধ্যে মিটার রাখা আছে বলে জানায়। মিটার উদ্ধার করে পুনরায় সংযোগ নেওয়ার জন্য পল্লী বিদ্যুত অফিসে আবেদন করে থানায় একটি অভিযোগ দিয়ে আসছি।’
চুরি যাওয়া মিটারের মালিক ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন,‘ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার ধান ভাঙ্গানো মিলের মিটার চুরি হয়েছে। এর আগেও দুই বার চুরি হয়েছে। বরাবরের মত এবারো চোরের রেখে যাওয়া কাগজের নম্বরে কল দিয়েছিলাম। রিসিভ করেই বলে যে,‘এত দেরি করে ফোন কেন দিলেন,আপনার জন্য এত অপেক্ষা করার সময় নেই। বিকাশ নম্বরে দ্রুত টাকা পাঠান’। এরপর আমি তাকে বলি যে,ভাই আমার মিটার বারবার চুরি কেন করছেন,তখন সে জানায় মিটারের পাশে লাল কাপুড় দিয়ে চিহ্ন করে রাখতে। তাহলে তারা বুঝতে পারবে এই মিটার এর আগে চুরি করা হয়েছিলো। তারপর ২ হাজার টাকা বিকাশে দিয়ে মিটার ফেরত নিয়েছি। এরপর গুরুদাসপুর থানায় অভিযোগ দিয়েছি।’
মিটার চুরি হওয়ার বিষয়টি সত্যতা নিশ্চিত করে নাটোর পল্লী বিদ্যুত সমিতি-২ (গুরুদাসপুর জোনাল অফিস) এর ডিজিএম হারুনুর রশিদ জানান, ‘এ যাবৎ উপজেলাব্যাপী বিভিন্ন জায়গায় প্রায় ২২টি মিটার চুরি হয়েছে। চুরির পর প্রকাশ্যে মোবাইল নম্বর দিয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। পুলিশের সাথে আমার কথা বলেছি এবং আমাদের পক্ষ থেকেও সবাইকে সতর্ক করা হচ্ছে।’
গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনোয়ারুজ্জামা বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।