নাটোর অফিস॥
বছর ২৪ আগে বই ছেড়েছেন আব্দুল হান্নান। ইচ্ছা ছিল উচ্চশিক্ষিত হয়ে প্রতিষ্ঠিত হবেন। কিন্তু ১৯৯৮ সালে তিনি নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলস হাই স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে অকৃতকার্য হন। এর পর আর লেখা পড়া করা হয় নি হান্নানের। নেমে পড়েন সংসার জীবনে। তবে ৪০ বছর বয়সে এসেও হাল ছাড়েননি তিনি। মেয়ে হালিমা খাতুনের সঙ্গে এবার এসএসসি পরীক্ষায় বসেছেন পিতা আব্দুল হান্নান।
তাদের বাড়ি নাটোরের লালপুর উপজেলার গোপালপুর পৌরসভার নারায়ণপুর মহল্লায়। আব্দুল হান্নান ওই এলাকার মৃত আলহাজ্ব লাল মিয়ার ছোট ছেলে। বাবা আব্দুল হান্নান (৪০) উপজেলার রুইগাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের ভোকেশনাল শাখা থেকে লালপুর থানা বালিকা কেন্দ্রে এসএসসি (সমমান) পরীক্ষায় অংশগ্রহন করছে এবং মেয়ে হালিমা খাতুন (১৫) উপজেলার নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলস হাই স্কুল থেকে লালপুর শ্রী সুন্দরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করেছে ।
আব্দুল হান্নান পেশায় একজন চা বিক্রেতা। এছাড়াও গেলে ২০২১ সালে গোপালপুর পৌর সভা নির্বাচনে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছেন। তবে জয়ী হতে পারেন নি। আব্দুল হান্নানের দাম্পত্য জীবনে স্ত্রী, মেয়ে ও দুই ছেলে রয়েছে। বড় মেয়ে হালিমা খাতুন (১৫) এবার নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলস হাই স্কুল এসএসসি পরীক্ষায় তার সঙ্গে অংশ নিয়েছে।এক ছেলে আবু হানিফ নিরব (১১) নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলস হাই স্কুলের ৫ ম শ্রণীর শিক্ষার্থী ও ছোট ছেলে রমজান মিয়ার বয়স মাত্র চার বছর।
আব্দুল হান্নান জানায়, লেখাপড়ার কোন বয়স নাই। মেয়ের সঙ্গে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে আমি গর্ববোধ করছি। ১৯৯৮ সালে তিনি নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলস হাই স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে অকৃতকার্য হন। এর পর আর লেখা পড়া করা হয় নি, তার পরেন নেমে পড়ি সংসার জীবনে। পৈতৃক সূত্রে গোপালপুর রেলগেট এলাকায় প্রাপ্ত একটা দোকানে চায়ের ব্যবসা শুরু করেন তিনি। কিন্তু সমাজে আর দশজন মানুষের মতো নিজেকেও একজন শিক্ষিত মানুষ হিসেবে যেন পরিচয় দিতে ছাত্র ঝীবনের সেই পরাজয়ের গ্লানি মুছে ফেলার ইচ্ছা দিনে আরো বেশি থাকে। লোকলজ্জার ভয় দূরে ঠেলে নিজেকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে এই বয়সে লেখাপড়া শুরু করেছি।এসএসসি পাশ করতেই হবে এমন পন করে বসেন তিনি। আর এই জন্য ২০২১ সালে সে উপজেলার রুইগাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম (ভোকেশনাল) শ্রেণীতে ভর্তি হয়ে এবছর এসএসসি (সমমান) পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন। দোয়া করবেন আমি যেন ভালো ফলাফল করতে পারি।
তার মেয়ে হালিমা খাতুন জানান, আমার খুব ভালো লাগছে, বাবাকে নিয়ে আমরা গর্ব করি, আমার বাবাকে দেখে অন্যরা পড়াশুনায় অনুপ্রানিত হবে বলে আমি মনেকরি। তার বাবার মেধা আছে এবং ইচ্ছা শক্তি আছে আর তাই এ বয়সেও তার লেখাপড়া করার প্রবল ইচ্ছাটার কারনেই তিনি এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করছেন। এছাড়াও বাবা – মেয়ে যেন একসাথে ভালো ফলাফল করতে পারে এ জন্য তারা সবার কাছে দোয়া চয়েছেন তারা।
লালপুর থানা বালিকা কেন্দ্রের সচিব মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার আসলে কোনো বয়স নেই। তিনি এই বয়সে সেটা বুঝতে পেরে লেখাপড়া শুরু করেছেন সেজন্য তাকে ধন্যবাদ জানাই।
রুইগাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রোজিনা খাতুন বলেন, শিক্ষা পপ্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার। অদম্য এই বাবাকে দেখে সাধারণ মানুষ লেখাপড়ায় আরও অনুপ্রাণিত হবে বলেও মনে করছি।
গোপালপুর পৌর সভার মেয়র রোকসানা মোর্ত্তজা লিলি বলেন, শিক্ষার জন্য বয়স কোন বাধা নয়, চাই মনের ইচ্ছাটাই বড়। আব্দুল হান্নান তা প্রমান করেছে। এ ধরণের উদাহরণ সমাজের জন্য খুবই ইতিবাচক। নতুন প্রজন্মকে উদ্দীপ্ত করবে বলেও মনে করছি।