নাটোর অফিস॥
লালপুর উপজেলা বিএনপির ৮টি ইউনিয়নের পূর্নাঙ্গ কমিটি ঘোষণা নিয়ে দলটির মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। নবগঠিত ৮ ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি স্থগিত ও শোকজ নোটিশ নিয়ে উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ও সদস্য সচিবের প্রেস বিজ্ঞপ্তি এবং বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়কের পাল্টা প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দলটির মধ্যে অভ্যন্তরীন বিরোধ প্রকাশ রুপ নিয়েছে। উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক সহ তার অনুসারীরা দাবি করেন, দলীয় ক্ষতমালোভী হয়ে দলকে পৈত্রিক সম্পত্তি হিসেবে ব্যবহার করতেই ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে অযগ্য নেতাদের নিয়ে ৮টি ইউনিয়ন কমিটি গঠন করেছে দলের আহবায়ক ও সদস্য সচিব । এতে একদিকে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট ও দলীয় কর্মকাণ্ডে ভাটা পড়েছে। গত ২৪ এপ্রিল উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষনা করেছে উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ডা. ইয়াসির আরশাদ রাজন ও সদস্য সচিব হারুনর রশিদ পাপ্পু। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে দলের আহবায়ক ও সদস্য সচিব বলছেন, নিয়ম মেনেই ইউনিয়ন কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে নেতাকর্মীরাও চাঙ্গা আছেন। দলীয় সব কর্মকাণ্ড সঠিকভাবে চলছে। ইউনিয়ন কমিটি স্থগিত ও শোকজ নোটিশ বিএনপির গঠনতন্ত্র ও কনভেনশনাল রাজনীতির পরিপন্ত্রী। ’
কমিটি ঘোষণার ১০ দিনের মাথায় অসাংবিধানিক ও নিয়ম বহির্ভূতভাবে ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি গঠণের অভিযোগে নবগঠিত ৮টি ইউনিয়ন বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটিসহ সকল কার্যক্রম স্থগিত করেছে জেলা বিএনপি। একই সঙ্গে কেনো কমিটি বাতিল করে উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ডা. ইয়াসির আরশাদ রাজন ও সদস্য সচিব হারুনর রশিদ পাপ্পুর বিরুদ্ধে দলীয় সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না ৭দিনের মধ্যে স্ব-শরীরে উপস্থিত হয়ে জেলা বিএনপির কার্যালয়ে লিখিতভাবে জবাব দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছে জেলা বিএনপি। শনিবার ৬ মে সন্ধ্যায় এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি মাধ্যমে লালপুর উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ও সদস্য সচিব দাবি করেন দলীয় সম্পূর্ণ নিয়ম মেনেই ইউনিয়ন কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি গঠনের ব্যাপারে বিন্দুমাত্র অনিয়ম করা হয়নি। ইউনিয়ন কমিটি স্থগিত ও শোকজ নোটিশ বিএনপির গঠনতন্ত্র ও কনভেনশনাল রাজনীতির পরিপন্ত্রী। ’
রবিবার (০৭ মে সকালে) সকালে লালপুর উপজেলার চংধুপইল ইউনিয়নের আব্দুলপুর কদমতলা বাজারে উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ও সদস্য সচিবের দেওয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তি কে মিথ্যা বানোয়াট ও মনগড়া দাবি করে প্রতিবাদ জানিয়ে পাল্টা প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আরিফুর রহমান। এসময় তিনি বলেন, কোন ইউনিয়নে সম্মেলন বা কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি গঠন দেখাতে পারলে দলীয় যেকোন শাস্তি তিনি মাথা পেতে নিবেন। ডা. ইয়াসির আরশাদ রাজন উপজেলা বিএনপির আহবায়ক হওয়ার পর থেকে দলীয় ক্ষতমালোভী হয়ে দলকে পৈত্রিক সম্পত্তি হিসেবে ব্যবহার করছে। দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের দূরে ঠেলে দিয়ে অযগ্য লোকদিয়ে কমিটি করে দলকে মেধাশূন্য ও দুর্বল করে দলের মধ্যে গ্রুপিং তৈরী করছে। অনিয়মতান্ত্রিক ভাবে কমিটি গঠন করায় গত বুধবার (৩ মে) উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ও সদস্য সচিবকে কারন দর্শানোর নোটিশ দেয় নাটোর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রহিম নেওয়াজ ও যুগ্ম আহবায়ক কাজী শাহ আলম। অফিসয়িাল ভাবে উপযুক্ত কারন দর্শানোর আগে তারা নিজেদের পক্ষে সাফাই গেয়ে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন যা শতভাগ মিথ্যা। এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি আরো বলেন, বিএনপির মানবাধিকার বিষয়ক কমিটির সদস্য এ্যাড. ফারজানা শারমিন পুতুল দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে আহবায়ক ও সদস্য সচিবের পক্ষে মিথ্যাচার করেছেন। এ বিষয়ে দলের সর্বোচ্চ ফোরামে আলোচনা হওয়ার দরকার। এসময় উপস্থিত ছিলেন লালপুর উপজেল বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য মুনছুর রহমান, থানা ছাত্র দলের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক সাজিব আহম্মেদ, সেচ্ছাসেবক দলেরর যুগ্ম আহবায়ক আলামিন প্রমুখ ।
যুগ্ম আহবায়কের পাল্টা প্রেস বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে লালপুর উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ডা. ইয়সির আরশাদ রাজন বলেন, তার কোন অভিযোগ থাকলে তিনি আমাদের বলতে পারতেন । কোন একটি স্বার্থানেশী মহলের পরোচনায় সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক এই প্রেস বিজ্ঞপ্তি করেছে।
লালপুর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব হারুনর রশিদ পাপ্পু বলেন, ‘দলীয় নিয়মনীতি মেনেই ইউনিয়ন কমিটি গঠিত হয়েছে। তবে দলীয় বড় পদটি সবাই চান। পদ না পেলে অনেকে ক্ষুব্ধ হন। এখানেও তাই হয়েছে। তবে আমরা সবাইকে নিয়ে কাজ কর করছি। ’
মানবাধিকার বিষয়ক কমিটির সদস্য এ্যাড. ফারজানা শারমিন পুতুল বলেন, জেলা থেকে যে চিঠিটা দেওয়া হয়েছে সেটা দলের অভ্যন্তরীন চিঠি। কিন্তু অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষে চিঠিটা সুপরিকল্পিত ও উদ্দেশ্য প্রোণোদিতভাবে সামাজিক গণম্যাধমে প্রচার করা হয়। এতে লালপুর উপজেলার সকল পর্যায়ের বিএনপির নেতাকর্মীরা উত্তেজিত হয়ে উঠৈ। নেতাকর্মীদের শান্তকরতেই আমরা একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি এখানে কোন মিথ্যাচার করা হয়নি।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির একাধিক নেতা জানান, দলের এই দুরদিনে বিভ্রান্তি ছড়ানো ও দলের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি দুঃখজনক। আধিপত্য নিয়ে লালপুর উপজেলা বিএনপির মধ্যে এমন গ্রুপিং এর কারনে সাধারণ নেতাকর্মীরা বিভ্রান্ত হচ্ছেন।
উল্লেখ্য, গত (৮ এপ্রিল) শনিবার বিকাল সাড়ে ৫ টার দিকে উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ডা. ইয়াসির আরশাদ রাজনের বিরুদ্ধে ত্যাগীদের বাদ দিয়ে টাকার বিনিময়ে নিষ্ক্রিয় ও স্থানীয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ততা নেই এমন নেতাদের নিয়ে ইউনিয়ন বিএনপি ও যুবদলের কমিটি গঠন ও সেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদে যুবদলের আহবায়কসহ ৪ জন নেতা পদত্যাগ করেছে।
একই দাবিতে গত ২০২০ সালে বাগাতিপাড়া উপজেলার ২টি যুবদলের আহবায়ক কমিটি গঠনের প্রতিবাদে প্রতিমন্ত্রী পরিবারকে অবঞ্চিত ঘোষণ। ২১ সালে বাগাতিপাড়া উপজেলা ও পৌর বিএনপির কমিটিতে মৃতদের নাম ও আত্মীয়করণের অভিযোগে কমিটি বাতিলের দাবি ও ২০২২ সালে লালপুর উপজেলার ওয়ালিয়া ইউনিয়ন যুবদলের আহবায়ক কমিটি বাতিলের দাবিতে সামাবেশ করে দলের নেতাকর্মীরা ।