নাটোর অফিস ॥
নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের অব্যাহতি প্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলামের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) নাজিরপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে মতবিনিময় সভায় তিনি বক্তব্য রেখে বলেন, জেল থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও সরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবেদন পাঠানোর পর গুরুদাসপুর থানার ওসির বদলি হয়েছে। মতবিনিময় সভা চলাকালে অনেকেই ফেসবুকে লাইভ করে। লাইভে ওসিকে উদ্দেশ্য করে বলা কথা গুলো বিভিন্ন মহলের মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করে যা মুহুর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়।
সম্প্রতি নাটোর জেলা পুলিশ সুপারের অফিস আদেশে গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আব্দুল মতিনকে ওয়ার হেডকোয়ার্টার্স নাটোর এ বদলি করা হয়। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর দেওয়ার কথা বলে অর্থ আত্মসাত মামলায় ১৬দিন কারাভোগের পর মঙ্গলবার জামিনে মুক্তি পেয়ে নাজিরপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে মতবিনিময় সভায় ওসির উদ্দেশ্যে তিনি বক্তব্য রেখে বলেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আজ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্টিত। আজকে আওয়ামী লীগের স্ট্যান্ডিং সেক্রেটারী এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাজতে যাবে কেন। আমি মাননীয় সরাষ্ট্রমন্ত্রী,আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সকলের কাছে আমি জেলে বসে থেকে আবেদন পাঠিয়েছিলাম। আল্লাহ তাআলা আমি আবেদন পাঠানোর পর মহান রব্বুল আলামিন আমি জেলে থাকা অবস্থায় সে শাস্তি পেয়েছে। এই ওসি সাহেব ছিলো জামায়াত-বিএনপির মূখপাত্র। বিএনপি নেতা আজিজ চেয়ারম্যানসহ বিএনপি নেতাকর্মীরা ঘরে থেকে বের হতে পারতো না। ওসি মতিন সাহেব জামায়াত বিএনপির মূখপাত্র হিসাবে এই উপজেলার দায়িত্ব নিয়েছিলো। মাঝখানে কিছু আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী বুঝতে না পেরে ভূল বুঝে এই ওসি সাহেবের সাথে বিভিন্ন কাজে সম্পৃক্ত হয়েছে। আমি যখনি বুঝতে পেরেছি এই ওসি সাহেব আওয়ামী লীগ কে ধ্বংস করার এজেন্ডা নিয়ে এই উপজেলায় এসেছে তখনি আমি সরে এসেছি এবং বুঝেছি এর সাথে কোন সম্পর্ক রাখা যাবেনা। তখন থেকে এই ওসি সাহেব আমাকে ব্যক্তিগত ভাবে শত্রুতার তালিকায় নিয়ে ব্যক্তিগত ভাবে আমার পরিবারকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য প্রতিনিয়ত বিভিন্ন মানুষকে আমার নামে মিথ্যা মামলা করার জন্য প্ররোচনা দিয়েছে।’ ৬ মিনিট ৫০ সেকেন্ডের এই ভিডিওতে তিনি সংগঠন নিয়ে বক্তব্য রাখেন।
স্থানীয় সূত্রে জানাযায়, নজরুল ইসলাম নাজিরপুর ইউনিয়নের গুপিনাথপুর গ্রামের মৃত-আমির আলী মন্ডলের ছেলে। তিনি নবগঠিত গুরুদাসপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর দেওয়ার কথা বলে অর্থ আত্মসাতের ৫টি মামলা ও একটি নিয়োগ জালিয়াতী মামলা রয়েছে। গত (২ এপ্রিল) আশ্রয়ণ প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের একটি মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে গেলে বিজ্ঞ আদালত তাকে জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করেন। কারাগারে প্রেরণের পর একই দিনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) অস্থায়ী জামিনে মুক্তি পেয়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে এসে সভাপতি লুৎফর রহমান হিরা এবং সাধারন সম্পাদক মিজানুর রহমান উজ্জলের উপস্থিতিতে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন।
এব্যাপারে নাজিরপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি লুৎফর রহমান হিরা জানান,নজরুল ইসলামের দেয়া বক্তব্য নিয়ে তারা প্রতিবাদ জানান। তিনি কোন উত্তর না দিয়ে তাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করার বিষয়টি উল্ল্যেখ করেন।বিষয়টি উপজেলা কমিটির নেতৃবৃন্দকে অবগত করেছেন।
এবিষয়ে জানতে আওয়ামীলীগ নেতা নজরুল ইসলামের মোবাইল ফোন নম্বরে রিং দিলে তিনি বলেন, তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বরাবরে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা সহ ওসির হয়রানির বিষয়টি অবগত করে জেল থেকে আবেদন করি। ওই আবেদন পাঠানোর পর গুরুদাসপুর থানার ওসির বদলি হয়েছে। মহান রব্বুল আলামিন আমি জেলে থাকা অবস্থায় ওসি শাস্তি পেয়েছে।
গুরুদাসপুর থানার বিদায়ী ওসি আবদুল মতিন বলেন,তার বদলির বিষয়টি রুটিন অনুযায়ী হয়েছে।
গুরুদাসপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান বলেন, ইতিমধ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর দেওয়ার কথা বলে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ায় তাকে দলের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। অর্থ আত্মাসাত মামলায় সে জামিনে মুক্তি পেয়েছে। তার ভাইরাল হওয়া বক্তব্য সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেননা। যদি তিনি এমন বক্তব্য দিয়ে থাকেন তা গ্রহণযোগ্য নয়। বিষয়টি দুঃখজনক। দলীয় ফোরামে আলোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।