নাটোর: একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেছেন, ‘আসছে নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন অপশক্তি সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছে। দীর্ঘদিন রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকায় প্রশাসনের রন্ধ্র রন্ধ্রে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে এইসব অপশক্তির ধারকরা বিচরণ করছে। সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার, তারা বিভিন্ন উপায়ে বঙ্গবন্ধুর দল আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করেছে। দেশের বিভিন্ন আসন থেকে এরা আওয়ামী লীগের টিকিটে নির্বাচনের চেষ্টা করছে। এদের এখনই চিহ্নিত করতে হবে। সুযোগ পেলে এরা তাদের আসল চেহারে দেখাবে।’
সোমবার দুপুরে নাটোরে দৈনিক উত্তরবঙ্গ বার্তা পত্রিকার অস্থায়ী কার্যালয় প্রাঙ্গনে ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অভিযাত্রা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন প্রবীণ এ সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
শাহরিয়ার কবির ড. কামাল হোসেন প্রসঙ্গে বলেন, ‘যে কামাল হোসেনকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর জীবদ্দশায় সংবিধান রচনার মতো পবিত্র দায়িত্ব দিয়েছিলেন, সেই কামাল হোসেন এখন সংবিধান হত্যাকারীদের সাথে হাত মিলিয়ে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। তাদের নেতৃত্বে নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য দেশ-বিদেশে বহুমাত্রিক ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত শুরু হয়েছে। দেশ এগিয়ে যাবে না পিছিয়ে যাবে, তা নির্ভর করছে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির বিজয়ের উপর। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সকল অপচেষ্টা রুখে দিতে হবে।’
শাহরিয়ার কবির আরো বলেন, ‘তবুও আমরা আস্থা রাখতে চাই বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের উপর। শেখ হাসিনার সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের যে সম্মান দিয়েছেন, তা আর কেউ দেয়নি। কোন মুক্তিযোদ্ধাকে এখন ভিক্ষাবৃত্তি বা মানবেতর জীবনযাপন করতে হয় না। এই সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা অনেক। জীবিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পর এখন অনেক যুদ্ধাপরাধী রয়েছেন যাদের মরোণোত্তর বিচার চায় বাংলার মানুষ। এ জন্য হলেও বর্তমান সরকারের ধারাবাহিকতা প্রয়োজন। এ দাবীতে স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করতেই আমরা মাঠে নেমেছি। আমরা চাই,
শেখ হাসিনার নৌকায় স্বাধীনতা বিরোধীদের জায়গা হবে না। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির প্রার্থীদের আ’লীগের মনোনয়ন দিতে হবে।’
বিএনপি আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবে এমন প্রত্যাশা করে শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘ ২০১৪ সালে একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বিএনপি সে নির্বাচনে অংশ না নিলেও সহিসতা করে সর্বোতভাবে বানচালের চেষ্টা করেছিল। এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন বিধায় আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।’
জামায়াত ইসলামীকে উদ্দেশ্য করে শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করা হলেও দেশের বিভিন্ন স্থানে তাদের আস্ফালন কমেনি। তারা এখনও বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানানোর স্বপ্ন দেখে। তারা এখনও সংখালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনকে হুমকি দিচ্ছে। তারা যে কোন ভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে মরিয়া। নির্বাচন কমিশনের কাছে আমাদের দাবী, তারা স্বতন্ত্র বা যে দলের ব্যানারেই করুক, তাদের প্রার্থীতা বাতিল করতে হবে। একইভাবে, যেখানেই জামায়াত ইসলামী, সেখানেই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’
একাদশ জাতীয় সংসদ ‘রাজাকার মুক্ত’ করার দাবী জানিয়ে শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের সাথে পৃথকভাবে আলোচনা করে নির্বাচনে একাত্তরের ঘাতক ও তার পরিবারের সদস্যদের মনোনয়ন না দিকে অনুরোধ করা হয়েছে। আমরা আশা করি ওই সংসদ ‘রাজাকার মুক্ত’ করার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।’
ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির জেলা সভপতি পৌর মেয়র উমা চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, নিরাপত্তা বিশ্লেষক (অব:) আব্দুর রশীদ, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাজেদুর রহমান খাঁন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকার, জেলা আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মালেক শেখ প্রমুখ।