ব্যবসায়ী অসীম সাহা পরিবারসহ নিখোঁজ না পলাতক? জনমনে প্রশ্ন

 

 

নাটোর অফিস ॥
নাটোরে অসীম সাহা(৪০) নামে এক ব্যবসায়ী তার স্ত্রী ও শিশু পুত্রসহ নিখোঁজ হওয়ার খবরে তোলপাড় শুরু হয়েছে। তার অর্ন্তধান নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তিনি বেশ কিছু লোকের কাছে থেকে ধারে টাকা(ঋন) নিয়ে শোধ করেননি। তার ঋনের বোঝা কোটি টাকার ওপরে। তার বিরুদ্ধে চেক জালিয়াতির মামলাও রয়েছে। এই ঋনের টাকা পরিশোধ করা নিয়ে নাটোর পৌর মেয়রের বাড়িতে কয়েকদফা বৈঠকও হয়েছে। টাকা পরিশোধের জন্য বার বার অঙ্গিকার করেও পাওনাদারদের টাকা পরিশোধ করেননি। উপরন্তু  তার কাছে পাওনাদারদের টাকার জিম্মাদার হয়ে বিপাকে পড়েছেন খোদ মেয়র । এছাড়া তার ব্যবসায়ীক পার্টনার তার স্ত্রীর ভাই (সমন্ধি) সাগর সাহা ভারতে পাড়ি জমালে বিষয়টি অনেককে ভাবিয়ে তোলে। পৌর মেয়র সহ অনেকেই সাগর সাহার ভারতে পাড়ি জমানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। সাগর সাহার পদাঙ্ক অনুসরন অসীম সাহাও কি পরিবার সহ সেখানে পাড়ি জমিয়েছেন? এসব নিয়ে অনেকেই অসীম সাহার নিখোঁজ হওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে এবিষয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে।
এদিকে ব্যবসায়ী অসীম সাহা পরিবার সহ নিখোঁজ হওয়ার প্রায় ২৭ দিন অতিবাহিত হলেও তাদের সন্ধান না পাওয়ায় তার পরিবার উদ্বেগ উৎকন্ঠার মধ্যে রয়েছেন। নিখোঁজ হওয়ার খবর জানাজানি হয় অসীম সাহার পরিবারের পক্ষ থেকে সদর থানায় সাধারন ডায়েরি করারও কদিন পর। গত ১৩ নভেম্বর নাটোর সদর থানায় এসংক্রান্ত একটি জিডি দায়ের করা হলেও পরিবার সহ অসীম সাহার নিখোঁজ হওয়ার খবরটি গত বুধবার জানাজানি হয়। অসীমের ভাই সুব্রত সাহা এই জিডি দায়ের করেন। জিডিতে উল্লেখ করা হয়েছে অসীম সাহা,তার স্ত্রী সীমা সাহা (৩৫) ও তার ৮ বছরের শিশু পুত্র আর্য সাহা ২৩ অক্টোবর বিকেল থেকে নিখোঁজ রয়েছে। অথৈ সাহা নামে তার মেয়েকে সম্প্রতি বিয়ে দিয়েছে নওগাঁতে। সেখানেসহসম্ভাব্য সকল স্থানে খোঁজ করেও তাদের সন্ধান পাওয়া যায়নি। পরিবার সহ অসীমের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় পরিবারের সদস্যরা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। অসীম সাহা শহরের নিচাবাজার এলাকার সন্তোষ সাহার ছেলে। অসীম সাহা ২০১৪ সালে মৎস্য খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় জাতীয় মৎস্য পদক লাভ করেন। সফল মৎস্য ব্যবসায়ী হিসেবে সে শহরের মানুষের কাছে পরিচিত ছিলেন। এছাড়া নাটোরে মিনা পল্লী নামে তাঁর একটি মৎস্য ও কৃষি খামারের সাথে জড়িত ছিলেন। বর্তমানে তিনি ঠিকাদারী ব্যবসায় নিয়োজিত। ঠিকাদারী ব্যবসা করতে গিয়ে তিনি কয়েক কোটি টাকা ঋনগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন। তার বিরুদ্ধে দেড় কোটি টাকা ফেরত না দেওয়াসহ চেক জালিয়াতির মামলাও বিচারাধীন রয়েছে আদালতে। জনৈক সঞ্জয় সাহা নামে এক ব্যবসায়ী এই মামলাটি দায়ের করেছেন।
এবিষয়ে জানতে অসীমের ভাই সুব্রত সাহার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তাদের পরিবারের যৌথ ব্যবসা থেকে অসীমকে প্রায় ১০ বছর আগে আলাদা করে দেয়া হয়েছে। বর্তমানে পরিবারের ব্যবসার সাথে তার কোন অংশীদারিত্ব নেই। সে এখন তার স্ত্রীর ভাই (সমন্ধি)সাগরের সাথে ঠিকাদারী ব্যবসায় নিয়োজিত। সেই ব্যবসায় কোন ভাল ফলাফল নেই। সম্ভবত সে ঋন গ্রস্থ হয়ে পড়েছে। সে ব্যবসায়িক প্রয়োজনে এক সুদ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা সুদে নেয়। সুদসহ যার পরিমাণ প্রায় দেড় কোটি টাকা দাঁড়ায়। মূল টাকা ফেরত দিতে চাইলে নিতে অস্বীকৃতি জানানো সহ ও্ই সুদ ব্যবসায়ী তার ভাই অসীম সাহা ও তার স্ত্রী সীমা সাহার বিরুদ্ধে নাটোর, মাদারীপুর ও ঢাকায় চেক জালিয়াতির একাধিক মামলা দায়ের করেন। সুদ ব্যবসায়ী মামলা করেই ক্ষান্ত হয়নি অসীম সাহাকে সুদের টাকার জন্য হুমকি ধামকি দিয়ে আসছিল। এ বিষয়টি নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে সে চিন্তিত ছিল। এনিয়ে আমরাও অজানা শংকায় রয়েছি।এছাড়া অজানা শঙ্কাও কাজ করছে আমাদের পরিবারে।
সুব্রত আরো জানান, অসীম তার স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে প্রায় প্রতিদিন বিকেলে বেড়াতে বের হতো। সেদিনও তারা বেড়াতে বের হয়ে আর ফিরে আসেনি। অসীম ও সীমার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়। সম্ভাব্য সকল স্থানে খোঁজাখুজি করে তাদের সন্ধান পাওয়া যায়না। তাদের সন্ধান করতে না পেরে ১৩ নভেম্বর নাটোর সদর থানায় তিনি তার নিখোঁজের বিষয়ে লিখিতভাবে জানিয়েছেন।
এদিকে পরিবারের সদস্যরা অসীম ও তার স্ত্রী -সন্তানরে নিখোঁজ হওয়ার দাবি করলেও তাদের প্রতিবেশী সহ বিশিষ্টজনরা ভিন্নমত পোষন করেছেন। পরিবার সহ অসীম সাহার নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় জনমনে নানা প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন।
অসীমের প্রতিবেশী জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ সভাপতি ও ব্যবসায়ী চিত্তরঞ্জন সাহা বলেন, অসীমকে না পাওয়ার কথা শুনতে পেয়ে ধারনা করেন ঋনগ্রস্থ হওয়ায় সে হয়ত দেনার দায় এড়াতে নিজেকে আড়ালে রেখেছেন। ভেবেছিলেন তারা হয়ত ভারতে বেড়াতে গিয়েছেন। পাওনাদাররা প্রায় প্রতিদিনই তার কাছে এসে ধরনা দেয়। স্ত্রী সন্তান সহ নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি উদ্বেগজনক। বিষয়টি আইন শৃংখলা বাহিনীর খতিয়ে দেখা দরকার। তবুও পরিবার সহ নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টিও স্পষ্ট নয়।
এদিকে এসব বিষয়ে জানতে ঋন প্রদানকারী জনৈক সঞ্জয় সাহা এবং আসীমের ঠিকাদারী ব্যবসার পার্টনার তার স্ত্রীর ভাই (সমন্ধি) সাগর সাহার খোঁজ করে তাদেরও কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। তাদের প্রতিবেশীরা জানায়,সাগর বেশ কিছুদিন আগে ভারতে পাড়ি জমিয়েছেন। সেখানেই সম্ভবত স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। অপরদিকে টাকার দাবীদার সঞ্জয় সাহাও বর্তমানে চিকিৎসার জন্য ভারতে অবস্থান করায় তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে অসীম সাহার অপর প্রতিবেশী নাটোর পৌর মেয়র ও জেলা পুজা উদযাপন পরিষদ সভাপতি উমা চৌধুরী জলি বলেন, অসীম সাহা কোটি টাকার ওপরে ঋনগ্রস্থ হয়ে আছেন। বেশ কয়েকজনের কাছে থেকে ব্লাঙ্ক চেক দিয়ে এসব টাকা নিয়েছেন। এনিয়ে তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলাও রয়েছে। এই টাকার বিষয়ে বেশ কয়েকবার আমার চেম্বারে সালিশ বৈঠকও হয়েছে। কয়েকজন পাওনাদারের হয়ে তিনি জামিনদার হওয়ায় বিপদে পড়ে আছেন। অসীমকে না পেয়ে পাওনাদাররা এখন তার বাড়িতে এসে ভির করছেন। তারা এখন আমার কাছে এসে টাকা চাইছে। মনে হয় দেনার দায় থেকে নিজেকে রক্ষা করতে সে বৌ-ছেলে সহ দেশের বাহিরে চলে গেছেন বা আত্মগোপন করেছেন। অসীমের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি পুলিশের উচিত তদন্ত করে দ্রুত প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করা। আমার জানামতে পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাছিম আহম্মেদ জানান, কি কারণে তারা স্বপরিবারে নিখোঁজ সেটা এখনও ¯পষ্ট নয়। তবে ১৩ নভেম্বর ব্যবসায়ী অসীম সাহার বড় ভাই সুব্রত সাহা নাটোর সদর থানায় জিডি দায়ের করেছেন। নিখোঁজের ঘটনার তদন্ত করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *