নাজমুল হাসান.
একটা সময় কৃষি কাজ করে অন্যের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন সজল মিনি দম্পতি। ছিলোনা নিজের কোন জমি ,ছিলোনা নিজের কোন আপন ঠিকানা। কৃষি কাজ করে উপার্জিত টাকা দিয়ে বাসা ভাড়া দেওয়ার পর সংসারে সব সময় লেগে থাকতো অভাব অনটন। তারওপর সংসারে ছিলো শিশু পূত্র সন্তান। হতাশায় জীবন যাপন করতে হতো এই দম্পতিকে। মুজিবর্ষ উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে পাল্টে গেছে তাদের জীবন চিত্র। জায়গাসহ ঘর পেয়ে সেই খানেই কবুতর পালন করে এখন সাবলম্বী এই দম্পতি। সজল মিনি দম্পতিকে দেখে এখন অনেকেই কবুতর পালন করার পরিকল্পনা করছে।
বলছি, নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের চন্দ্রপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাস করা মোঃ সজল হোসেন (৩০) ও মোছাঃ মিনি বেগম (২৫) এর কথা। মুজিব বর্ষ উপলক্ষে ২০২১ সালে চন্দ্রপুর গ্রামে সরকারী খাস জায়গার ওপর নির্মিত হয় ৩৯টি ঘর। তার মধ্যে একটি ঘর পান সজল মিনি দম্পতি। আশ্রয়ণ প্রকল্পে জায়গাসহ ঘর পাওয়ার পর স্ত্রী মিনি শুরু করে কবুতর পালন। আর স্বামী সজল হোসেন কৃষি কাজ করেন। প্রথমে দুই জোড়া কবুতর দিয়ে শুরু করেছিলেন। এরপর গত এক বছরে দুই জোড়া কবুতর থেকে এখন মিনির বাড়িতে ২০ জোড়া কবুতর। স্বামীর কৃষি কাজ থেকে উপার্জিত অর্থ ভবিষ্যতের জন্য জমিয়ে রাখছেন। আর বাড়িতে পালন করা কবুতর স্থানীয় বাজারে সাপ্তাহিক হাটে বিক্রি করছেন। কবুতর বিক্রির টাকা দিয়ে সংসারের খরচ ও শিশু খাদ্যের যোগান দিচ্ছেন মিনি।
মিনি বেগম জানান, আমরা আগে চন্দ্রপুর গ্রামের একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতাম। আমাদের নিজস্ব কোন জমি বা ঘর ছিলো না। একবছর আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের একটি ঘর আমরা পাই। আমার স্বামী কৃষি কাজ করে যে টাকা উপার্জন করে তা সংসার ও শিশু সন্তানের পেছনে খরচ হয়ে যেতো। কিছুই জমাতে পারতাম না। আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর পাওয়ার পর কবুতর পালন শুরু করি। দুই জোড়া কবুতর থেকে এখন আমার বাড়িতে ২০ জোড়া কবুতর। খরচের চেয়ে লাভ বেশি কবুতর পালনে। সাপ্তাহিক হাটে দুই তিন জোড়া কবুতরের বাচ্চা বিক্রি করতে পারি। প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা যায়। কবুতর বিক্রির টাকা দিয়ে এখন আমি সংসারের খরচ চালাই এবং শিশুর দুধ ও খাবার কিনি। আর আমার স্বামীর উপার্জিত অর্থ ভবিষ্যতের জন্য জমা করছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘর পেয়ে আমরা এখন অনেক সুখে শান্তিতে আছি।
সজল জানান, দীর্ঘদিনের পর আমরা আপন ঠিকানা পেয়েছি। আমরা এখন অনেক ভাল আছি। আমার স্ত্রী কবুতর পালন শুরু করেছে এবং ভাল লাভবানও হয়েছি আমরা। আমার কাজের পাশাপাশি আমার স্ত্রী বাড়িতেও উপার্জনের পথ তৈরি করেছে। এখন আমরা অনেক ভাল আছি আগের চেয়ে।
এ বিষয়ে গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ তমাল হোসেন জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাস করে সজল মিনি দম্পতি কবুতর পালন করার বিষয়ে আমি শুনেছি। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। এছাড়াও আশ্রয়ণ প্রকল্পে থাকা পরিবারগুলোকে সাবলম্বী করতে আমরা অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। ইতিমধ্যেই অনেকগুলো আশ্রয়ণ প্রকল্পে উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে সেলাই মেশিন বিতরণ করা হয়েছে। ছেলেদের ড্রাইভিং প্রশিক্ষন দেওয়া হচ্ছে। তারা যেন সাবলম্বী হয়ে জীবন যাপন করতে পারে তার জন্য সকল সহযোগিতা করা হচ্ছে। সজল মিনি দম্পতিকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুরুষ্কৃত করা হবে।