জাগোনাটোর রিপোর্ট॥
দিনের আলোয় লেখাপড়া করে ২০১২ সালের এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া নাটোর সদর উপজেলার ছাতনী শিবপুর গুচ্ছ গ্রামের অদম্য সুর্বনার ছোট বোন সোনিয়া খাতুনও এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে। দিন মজুর বাবা-মার স্বপ্ন এখন সোনিয়ার উচ্চ শিক্ষা নিয়ে। অদম্য সুর্বনা এখন অন্যের সহায়তায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স শেষ বর্ষে অধ্যায়ন করলেও এখনও তাদের বাড়িতে কেরোসিনের বাতি জ্বালাতে হয়। তবে কেরোসিন কেনার সামর্থ এখনও হয়নি তাদের। তাই অধিকাংশ রাত অন্ধকারেই কাটে তাদের। অদম্য সুর্বনা লেখা পড়া করে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার পথ দেখিয়েছে সোনিয়াকে। তাই আধা পেটা খেয়ে সোনিয়াও লেখা পড়া করে এবারের এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে পাশ করেছে।
২০১২ সালে জিপিএ -৫ পেয়ে পাশ করার পর সুর্বনার উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের অদম্য ইচ্ছার প্রতিবেদন একটি পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পর তার সহায়তায় হৃদয়বান সহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসে। শুরু হয় সুবর্নার পথ চলা। এখন সে রাজশাহী বিশ্ব বিদ্যালয়ে অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্রী। সুর্বনার প্রেরনায় ছোট বোন সোনিয়াও লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া সংগ্রামে নেমে পড়ে। বাড়িতে বিদ্যুতের কোন ব্যবস্থা নেই। হারিকেন থাকলেও অর্থাভাবে কেরোসিন কেনা হয়না কখনও কখনও। তাই বড় বোন সুর্বনার মত সোনিয়াও দিনের আলোতে লেখাপড়া করেছে।
সোনিয়া জানায়, সে সদর উপজেলার ছাতনী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়ে উতীর্ণ হয়েছে। সে স্কুল শেষে দিনের আলোয় যে টুকু সময় পেয়েছে সেই সময়ে পড়া রপ্ত করেছে। কখনও খেয়ে বা অধ পেটা খেয়ে থাকতে হয়। সুর্বনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে তাই বাবা কামাল খা সম্প্রতি অন্যের দোকান ভাড়া নিয়ে চা বিক্রি করে। মা সানোয়ারা বেগম এখনও অন্যের বাড়িতে কাজ করে। আমি তাকে মাঝে মধ্যে কাজে সাহায্য করি। এখনও একটা ছোট বোন আছে তাদের। বন্ধু বান্ধব ও স্কুল শিক্ষকদের কাছে থেকে বই পুস্তক নিয়ে পড়াশোনা করেছি। রাতে পড়তে না পাড়ায় খুব মন খারাপ হতো। কিন্তু বড় বোন সুর্বনার কথা মনে পড়তেই নিজেকে শক্ত রেখেছি। মানসিকভাবে কখনও দুর্বল হয়নি। আমি বড় বোনের মত আরো লেখা পড়া করতে চাই । লেখাপড়া করে ডাক্তার হতে চাই।
বাব কামাল খা ও মা সানোয়ারা বেগম ছোট মেয়ের পাশের খবরে মহাখুশি। তারা বলেন তাদের বড় মেয়ে লেখাপড়ার প্রেরণা যুগিয়েছে। যা আয় হয় তা দিয়ে সংসার খরচ ওঠেনা। কেরোসিন কিনব কি দিয়ে। রাতে প্রয়োজনীয় কাজ সারার জন্য সামান্য কেরোসিন কিনতাম। তাই তাদের দুই মেয়ের কেউ রাতে লেখা পড়া করতে পারেনি। লেখাপড়া করে বড় হওয়া যায় তা আমাদের বড় মেয়েই শিখিয়েছে। ছোট মেয়েও উচ্চ শিক্ষা নিতে চায়। কিন্তু হৃদয়বানদের সহায়তা না পেলে কোনভাবেই হবেনা। তারা ছোট মেয়ের উচ্চ শিক্ষার সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
এলাকার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আব্দুল্লাহ বলেন,কামাল খায়ের দুই মেয়েই মেধাবী। তাদের মধ্যে অদম্য স্পৃহা রয়েছে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে। তাদের দু মেয়ের স্কুলের খরচ যুগিয়েছে এলাকাবাসী সহ স্কুলের শিক্ষকরা। যাদের কেরোসিন কেনার সামর্থ নেই তারা এই মেয়েকে কিভাবে উচ্চ শিক্ষা করাবে। সুযোগ পেলে সোনিয়াও বহুদুর যেতে পারবে উচ্চ শিক্ষা গ্রহনে।
ছাতনী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নারায়ন চন্দ্র প্রামানিক বলেন,কামাল খায়ের দুউ মেয়েই মেধাবী। বড় বোন সুর্বনার মত সোনিয়ারও উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের অদম্য ইচ্ছা রয়েছে। স্কুলে লেখা পড়ার ক্ষেত্রে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী সহ এলাকাবাসী সব কিছু দিয়ে সহায়তা করেছে। বিত্তবানরা এগিয়ে এলে সোনিয়াও তার স্বপ্ন পুরন করতে সক্ষম হবে। তার ইচ্ছা সে লেখাপড়া করে ডাক্তার হবে।