নাটোর অফিস॥
নাটোরের বড়াইগ্রামে নিয়োগ ও সার বিতরণ সংক্রান্ত সমন্বিত নীতিমালা লংঘন করায় ৪১ জন খুচরা কার্ডধারী সার বিক্রেতার লাইসেন্স বাতিল ও জামানত বাজেয়াপ্তের সুপারিশ করা হয়েছে। উপজেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির সদস্য সচিব ও কৃষি কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা কমিটির সভাপতি ইউএনও মারিয়াম খাতুনের নিকট লিখিত সুপারিশ করেন। এ বিষয়ে নীতিমালা অনুযায়ী দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও কমিটির প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, কৃষক পর্যায়ে রাসায়নিক সারের সুষ্ঠু বন্টন ও কৃষকের দোরগোরায় সার পৌঁছে দিতে ২০১০ সালে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে ওয়ার্ড ভিত্তিক খুচরা কার্ডধারী সার বিক্রেতা নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেন। সেই মোতাবেক বড়াইগ্রামের দু’টি পৌরসভা ও সাতটি ইউনিয়নের ৮১ ওয়ার্ডে ৩০ হাজার টাকা করে জামানত নিয়ে ৮১জন খুচরা কার্ডধারী সার বিক্রেতা নিয়োগ করে উপজেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটি। নিয়োগ নীতিমালা অনুসারে এই বিক্রেতাগণ নিজ নিজ ওয়ার্ডের মধ্যে সুবিধাজনক স্থানে বসে দোকান পরিচালনা করবেন। তারা উপজেলার ১১জন বিসিআইসি সার ডিলারদের নিকট থেকে সরকারী বরাদ্দের ৫০% সার গ্রহন করবেন এবং সরকার নির্ধারিত মূল্যে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের মধ্যে বিক্রি করবেন। অতিরিক্ত মূল্যে সার বিক্রি করলে, অবৈধভাবে মজুদ করলে বা কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি ব্যতিরেখে পরপর দুইবার বা বছরে তিনবার বিসিআইসি সার ডিলারদের নিকট থেকে সার ক্রয়ে বিরত থাকলে তার কার্ড বাতিল করা বা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা বলেন, বড়াইগ্রামে ৮১ খুচরা কার্ডধারীর স্থলে ৬১জন বহাল রয়েছেন। অবশিষ্ট বিশজন আবেদন করে তাদের নামের লাইসেন্স প্রত্যাহার করিয়ে নিয়েছেন। এই ৬১ জনের মধ্যে এই ৪১ জনকে দুই মাসের সময় দিয়ে একাধিকবার নোটিশ প্রদান করা হলেও তারা নীতিমালা অনুসারে নির্ধারিত স্থানে দোকান স্থানান্তর করেন নাই। অতিরিক্ত দামে সার বিক্রি করেছেন এবং অবৈধ মজুদ করেছেন। এ কারনে ইতিমধ্যে কয়েকটি দোকানে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এছাড়া কয়েকটি বিক্রেতা গত ৯ মাসে কোন সার উত্তোলন করেন নাই। তাই ডিলার নিয়োগ ও সার বিতরণ সংক্রান্ত নীতিমালা-২০০৯ এর আলোকে কমিটির সভাপতির নিকট নি¤œক্ত খুচরা কার্ডধারী সার বিক্রেতাদের খুচরাকার্ড বাতিল করা এবং তাদের জামানতের টাকা বাজেয়াপ্ত করার অনুরোধ করা হয়েছে।
বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে ১ নং জোয়াড়ী ইউনিয়নে মোঃ সাইদুর রহমান, মোছা বিলকিস বেগম, মোঃ ছাকিম উদ্দিন, ২নং বড়াইগ্রাম ইউনিয়নে মোঃ ওসমান গণি, মোঃ আসিফ রাব্বি, মোঃ রবিউল করিম, ৩নং জোনাইল ইউনিয়নে মোঃ তোজাম্মেল হক, মোঃ বদিউজ্জামান, মোঃ হায়দার আলী, শ্রী রতন কুমার সাহা, মোঃ আব্দুল করিম, মোঃ কামাল হোসেন, মোঃ খলিলুর রহমান, মোঃ আইয়ুব আলী, ৪নং নগর ইউনিয়নে মোঃ তোরাব হোসেন, মোঃ ইসমাইল হোসেন, মোঃ সাজেদুর রহমান, মোঃ ইয়াকুবআলী, মোঃ সিরাজুল ইসলাম, মোঃ রকিব মৃধা, মোঃ রাকিবুজ্জামান রান্টু, মোঃ গোলজার হোসেন, মোজাফ্ফর হোসেন, ৫নং মাঝগাঁও ইউনিয়নে মোঃ শহিদুল ইসলাম, মোঃ আব্দুল মান্নান, মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান, মোঃ সাইফুল ইসলাম (বাদশা), ৬নং গোপালপুর ইউনিয়নে মোঃ আব্দুল হালিম, মোঃ সহিদুর রহমান, নুর মোহাম্মদ দেওয়ান, রাজু আহম্মেদ, রাজু আহম্মেদ, ৭ নং চাঁন্দাই ইউনিয়নে মোঃ বাবুল সরকার, মোঃ শফিউল গণি, মোঃ শাকিল হোসেন, মোঃ সাজেদুর রহমান, বনপাড়া পৌরসভায় মোঃ সুলতান খাঁ, মোঃ ইমান হোসেন মুন্সি, মোঃ নাজমুল ইসলাম, মোঃ তাইজুল ইসলাম এবং বড়াইগ্রাম পৌরসভায় মোঃ নজরুল ইসলাম, শ্রী প্রসাদ চন্দ্র মন্ডল।
উপজেলা খুচরা কার্ডধারী সার বিক্রতা কমিটির সভাপতি আকরাম হোসেন বলেন, আমরা উপজেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির নিকট দুই মাস সময় চেয়েছি। ইতিমধ্যে একমাস শেষ হয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যে নিজ নিজ ওয়ার্ডে চলে যাবে। আর যারা অন্যায় করেছে তাদের বিষয়ে আমার কিছু বলার নাই। কবে থেকে এই দুই মাসের শুরু এমন প্রশ্নে তিনি কোন উত্তর দেন নাই।
উপজেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির সভাপতি ইউএনও মারিয়াম খাতুন বলেন, নীতিমালা অনুসারে ৪১ জন খুচরা কার্ডধারী সার বিক্রেতার লাইসেন্স ও জামানত বাতিলের সুপারিশ করেছেন কৃষি অফিসার। আগামী রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) এ বিষয়ে সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির সভা ডাকা হয়েছে। সেখানে এই বিষয়ে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।