নাটোর: নারীর নামে ফেসবুক আইডি খুলে পুরুষদের সাথে প্রেমের নাটক সাজিয়ে ফাঁদ পেতে প্রতারনা ও মুক্তিপণ আদায়ের সাথে জড়িত এক নারী সহ ২ জনকে আটক করেছে পুলিশ। বড়াইগ্রাম থানার পুলিশ বনপাড়া নতুন বাজার এলাকা থেকে ওই চক্রের নারী সদস্য প্রিয়া আক্তার (২৬) ও রিমন হোসেন (২২) নামে দুই জনকে আটক করে। শুক্রবার রাতে তাদের আটক করা হয়। এ সময় জব্দ করা হয় প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেল, ৪ টি এন্ড্রুয়েড মোবাইল ফোন ও ৭ টি সিম কার্ড।
পুলিশ ও বিভিন্ন সুত্রে জানাযায়, ফেসবুকে তার নামে কয়েকটি আইডি রয়েছে। একটিতে নাম দেয়া হয়েছে ‘প্রিয়া আক্তার’, আরেকটিতে ‘আশা আশা’। এমনিভাবে আরও বেশ কয়েকটি নামে ফেক (ভুয়া) আইডি। এই সব আইডিতে তামিল সুন্দরী তরুণীদের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। এই সব ভুয়া আইডি থেকে বিভিন্ন পুরুষের কাছে হাই বা হ্যালো বলে জানানো হতো বন্ধুত্বের আহ্বান। এক পর্যায়ে মিথ্যা প্রেমের নাটক। পরবর্তীতে দেখা করতে এলেই অশ্লীল ছবি তুলে জিম্মি নাটক সাজিয়ে মুক্তিপণ হিসেবে আদায় করা হতো মোটা অংকের টাকা।
এমন খবরের ভিত্তিতে নাটোরের বড়াইগ্রাম থানার পুলিশ শুক্রবার রাতে বনপাড়া বাজার এলাকায় প্রতারক চক্রের অবস্থান এলাকায় অভিযান চালায়। দীর্ঘ ৮ ঘন্টা অভিযান চালিয়ে রাত ১১টা থেকে দিকে উপজেলার বনপাড়া পৌর শহরের নতুনবাজার এলাকার সালাম খানের ভাড়া বাসা থেকে প্রতারক চক্রের প্রধান প্রিয়া আক্তার কে আটক করে পুলিশ । পরবর্তীতে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী পুলিশ ওই চক্রের আরেক সদস্য রিমন হোসেন কে বনপাড়া পৌরগেট থেকে আটক করে। এ সময় জব্দ করা হয় প্রতারণা কাজে ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেল, ৪ টি এন্ড্রুয়েড মোবাইল ফোন ও ৭ টি সিম কার্ড। পুলিশের কাছে দেয়া তথ্যমতে প্রিয়া আক্তারের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলার পাঠুরিয়া গ্রামে। তার স্বামীর নাম সুজন সেখ। আটককৃত রিমন বনপাড়া পৌর শহরের সরদারপাড়া গ্রামের মো. হেকমতউল্লাহ্’র ছেলে।
অভিযানে থাকা বড়াইগ্রাম থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) তারিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার সকালে প্রিয়া আক্তারের আমন্ত্রণে সিলেট থেকে জনৈক এক ব্যবসায়ী বড়াইগ্রামের আহমেদপুরে আসেন। সেখান থেকে প্রিয়ার সহযোগী রিমন মোটরসাইকেল যোগে ওই ব্যবসায়ীকে বনপাড়া প্রিয়ার বাসায় নিয়ে যায়। তাকে প্রিয়ার বাসায় নেওয়ার পর পরই অশ্লীল ছবি তুলে জিম্মি করা হয়। এজন্য তার কাছে মুক্তিপণ হিসেবে ৫০ হাজার টাকা দাবি করা হয়। এ সময় ওই ব্যবসায়ীর কাছ থেকে মোবাইল ফোন ও নগদ ১২ হাজার টাকা কেড়ে নেয়া হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন দেন দরবার শেষে বিকাশের মাধ্যমে ৬ হাজার টাকা পরিশোধ করার পর প্রতারক চক্রটি ওই ব্যবসায়ীকে বনপাড়া থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে হাইওয়ে সড়কে পৌঁছে দেয়। পরবর্তীতে ব্যবসায়ী বিষয়টি নাটোর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে গিয়ে ঘটনা জানালে পুলিশ সুপার বিপ্লব বিজয় তালুকদারের নির্দেশে থানা ও বনপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের দুইটি টীম প্রতারক চক্রটি ধরতে অভিযান চালায়। ওই ব্যবসায়ী প্রিয়ার বাসার ঠিকানা সঠিকভাবে বলতে না পারায় পুলিশ বিকাশে ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারের সূত্র ধরে ব্যাপক অনুসন্ধান চালিয়ে অবশেষে প্রতারক চক্রের দুই সদস্যকে আটক করে।
বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দিলিপ কুমার দাস জানান, প্রিয়ার সাথে তার ৫ বছর বয়সী ছেলে রয়েছে। বনপাড়ায় ভাড়া বাসায় তার সাথে থাকা কথিত স্বামী সুজন হোসেনও এই প্রতারক চক্রের অন্যতম সদস্য। সুজন নিজেকে ডিবি পুলিশ আবার কোন কোন সময় র্যাব সদস্য পরিচয় দিয়ে থাকে বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ রয়েছে। এই চক্রের সাথে কমপক্ষে ৬ থেকে ৭ জন সদস্য জড়িত রয়েছে বলে তিনি নিশ্চিত হওয়া গেছে। জড়িত অন্য সদস্যদের খুঁজে বের করতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।