নাটোর অফিস ॥
নাটোরে স্কুলের পোশাক পড়ে টিকটক ভিডিও ধারন করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ায় তিন শিক্ষাথীকে বহিস্কার করার প্রতিবাদে ক্লাসের ব্রেঞ্চ সহ আসবাব পত্র ভাংচুর করেছে শিক্ষার্থীরা। রোববার স্কুল চলাকালীন সময় বেলা ১১ টার দিকে সদর উপজেলার চন্দ্রকলা সাইফুল ইসলাম(এস আই)উচ্চ বিদ্যালয়ের বহিস্কৃত ওই শিক্ষার্থীরা সহ স্কুলের সকল শিক্ষার্থীরা এই প্রতিবাদ বিক্ষোভ করে। এসময় স্কুলের প্রধান গেইট বন্ধ করে দিলে
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে এবং স্কুল ভবনের দরজা-জানালার কাঁচ ভাংচুর করে। ইট পাটকেল নিক্ষেপের সময় এক শির্ক্ষী আহত হয়। প্রায় আধাঘন্টা ধরে এই প্রতিবাদ বিক্ষোভ চলার সময় শিক্ষক সহ ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা অবরুদ্ধ ছিলেন। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ৩ শিক্ষার্থীকে আটক সহ ধাওয়া করে ছত্রভঙ্গ করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আসে। এবিষয়ে তদন্ত করে জেলা শিক্ষা অফিসারকে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য জেলা প্রশাসক নির্দেশ দিয়েছেন।
স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আনিসুর রহমান জানান, গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ৯ম শ্রেনীর দুই ছাত্র ও এক ছাত্রী নির্জন একটি কক্ষে স্কুলের পোশাক পড়ে টিকটকের ভিডিও ধারন করে ফেসবুকে ছাড়ে। পরে ওই টিকটকের ধারনকৃত ভিডিওটি তাদের দেখানো হয়। বিষয়টি ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত এবং ওই শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের মতামত ও সম্মতি নিয়ে তাদের বহিস্কার করা হয়। রোববার ১৫ /২০ জন শিক্ষার্থী হঠাৎ করে স্কুলে ঢুকে দরজা জানালার কাঁচ সহ আসবাব পত্র ভাংচুর করে। এসময় স্কুলের প্রবেশ দ্বার বন্ধ করে দিলে তারা ইট পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। প্রায় ৩০ মিনিট ধরে ছাত্ররা বিক্ষোভ সহ ইট পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এসময় স্কুলের সকল শিক্ষক সহ ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা স্কুল ভবনে অবরুদ্ধ ছিলেন। বহিস্কৃত ২ ছাত্র ইতিপুর্বে বখাটেপনা সহ নানা অপরাধের সাথে জড়িত হলে একাধিকবার সালিশ করা হয়। তাদের
অভিভাবকদের উপস্থিতিতে সালিশ হয়। বহিস্কৃত ছাত্রীকে তার বাবার ইচ্ছায় এবং সম্মতিতে টিসি দেওয়া হয়। রোববার সকালে স্কুল চলাকালে বহিস্কৃত ছাত্র সহ কয়েকজন ভাংচুর করে। পুলিশ এসে নবম শ্রেনীর দুই ছাত্র মোরসালিন, মনিরুল ও এসএসসি পরীক্ষার্থী মারুফকে আটক করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আসে। জেলা প্রশাসকের নির্দেশ অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
নাটোর সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাছিম আহমেদ বলেন,ভাংচুরে খবর পেয়ে পুলিশ চন্দ্রকলা স্কুলে গিয়ে আইন শৃংখলা নিয়ন্ত্রনের জন্য ৩জনকে অটক করে। এবিষয়ে অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছাঃ আফরোজা খাতুন বলেন,ভারচুরের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দরজা-জানালার কাঁচ সহ কিছু আসবাব পত্র ভাংচুর আবস্থায় দেখতে পাই। এসময় শান্তি শৃংখলা রক্ষায় পুলিশি পদক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আসে। শিক্ষার্থীদের নিয়ম অনুযায়ী বহিষ্কার করা হয়নি। তাই তাদের আবার ক্লাস করার অনুমতি দিতে বলা হয়েছে। এঘটনায় জেলা প্রশাসকের নিদের্শ অনুযায়ী তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা শিক্ষা অফিসার আকতার হোসেন বলেন জেলা প্রশাসকের নির্দেশের কোন পত্র তিনি পাননি। তবে বিষয়টি তিনি জেনেছেন। তদন্ত সাপেক্ষে এবং সরকারের বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বহিস্কৃত এক ছাত্রর পরিবার থেকে দাবি করা হয়,গান করার ভিডিও ফেসবুকে দেয়া হয়েছিলো। বিষয়টি শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের না জানিয়ে বহিস্কার করা হয়। বছরের মাঝামাঝি সময় হওয়ায় তাদের নতুন করে অন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি করে রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ না থাকায় তাদের শিক্ষা জীবন থেকে ঝড়ে যাবে শংকা প্রকাশ করা হয়।
নাটোরের জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, শিক্ষার্থীরা প্রাপ্ত বয়স্ক নয়। তাদের বহিস্কার না করে অভিভাবকদের ডেকে সর্তক করা উচিত ছিলো। বিষয়টি নিয়ে রোবাবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও শিক্ষা কর্মকর্তাকে বিদ্যালয়ে পাঠানো হয়। ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য জেলা শিক্ষা অফিসারের ওপর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবে কোমলমতি শিশুদের ভবিষৎ যেন নষ্ট না হয় সে বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে।