নাটোর অফিস ॥
‘রহস্যময় আগুনে পুড়ছে নাটোরের এক পরিবার’ এমন খবর ছড়িয়ে পরার পর তদন্তে নেমেছে নাটোর ফায়ার স্টেশনের ফায়ার কর্মী,পুলিশ ও নলডাঙ্গার উপজেলা প্রশাসন। গতকাল সকালে নাটোর ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার আকতার হোসেন সহ দমকল কমীদের একটি দল ঘটনাস্থল নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার মমিনপুর গ্রামে বারেকের বাড়িতে গিয়ে তদন্ত শুরু করেন। তদন্ত কাজ শেষে ফায়ার স্টেশন কর্মিরা ফিরে আসার পুর্ব মহুর্তে বারেকের ছোট মেয়ের ঝর্না খাতুনের গায়ে জড়ানো ওড়নায় হঠাৎ করেই আগুন জ্বলে ওঠে । তবে আগুন লাগা দেখতে
পেয়ে দ্রুত গা থেকে ওড়না মাটিতে ছুটে ফেলায় ঝর্না এবারও দগ্ধ হওয়া থেকে রক্ষা পায়। সেখানে উপস্থিত গণমাধ্যম কর্মীরাও দেখতে পান আগুন লেগে ওড়না পুড়ে ভস্মিভুত হতে। তবে আগুন ঝড়নার শরীরে কিভাবে লেগেছে সেটি কেউ দেখতে পাননি। ওই সময় আমজাদ নামে প্রতিবেশী এক বৃদ্ধ ঝর্নার ওড়নার এক কোনায় আগুন দেখে চিৎকার করে উঠলে ঝর্না তাৎক্ষনিক তার গায়ে জড়ানো ওড়না গা থেকে ফেলে দেন। এসময় উপস্থিত সকলেই ওড়নায় আগুন জ্বলতে দেখেন। ঝর্নার ওড়নায় ওই আগুন লাগার সময় বারেকের মেজ মেয়ে লিপিও ঝনার্র পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। এই ঘটনায় অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেন। উপস্থিত ফায়ার স্টেশন কর্মীরা ঘটনাস্থল ভালভাবে পরখ করেন এবং এবিষয়ে কিভাবে আগুন লাগলো তা বারেকের দুই মেয়ের কাছে জানতে চান। ছোট মেয়ে ঝর্নার পাশে দাঁড়ানো মেজ মেয়ে লিপি বলেন, সেও প্রথমে দেখতে পায়নি। এরপর ফায়ার স্টেশন কর্মকর্তা আকতার হোসেন সহ দমকল কর্মীরা পুনরায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ফিরে আসেন।
এদিকে এলাকাবাসী ,রহস্যময় এই আগুনের উৎস বের করে শান্তিপুর্ন পরিবেশ বজায় রাখার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে। প্রয়োজনে তদন্ত কমিটি গঠন করে আগুনের উৎস বের করারও দাবী জানান তারা।
এবিষয়ে নাটোর ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার আকতার হোসেন জানান, এই বাড়িতে যেভাবে প্রতিনিয়িত আগুন লাগছে সে আগুন বেশক্ষিন স্থায়ী হয়না। সেকারনে ফায়ার কর্মীরা আসার আগের আগুন নিভিয়ে ফেলা হয়। ফলে ফায়ার স্টেশন কর্মীরা আসেননি বা আসার প্রয়োজন হয়নি। তবে এই আগুন নিয়ে যে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে তা নিয়ে গণমাধ্যম কর্মীরা আমাদের সাথে যোগাযোগ করে থাকেন। এছাড়া নলডাঙ্গা ইউএনও স্যার বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাওয়ায় উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ঘটনাস্থলে আসা। প্রাথমিকভাবে তদন্ত করে যে বিষয়টি আমাদের কাছে প্রতিয়মান হয়েছে বাহির থেকে আগুন লাগানোর সুযোগ যথেষ্ট রয়েছে। আগুন নিয়ে জ্বিন বা ভুতের কারসাজি নিয়ে স্থানীয়দের ধারনা পুরোটায় ভুল। এর কোন সত্যতা নেই। যেহেতু আগুন লাগার বিষয়টি বাড়ির বিভিন্ন স্থানে বারবার হচ্ছে,তাই আগুন লাগার অন্য কোন কারন থাকতে পারে। সেকারনে একটি তদন্ত টিম গঠন করা হলে আমরা তদন্ত করে বিস্তারিত জানাতে পারব। যেহেতু কারো বিরুদ্ধে লিখিতভাবে কোন অভিযোগ করা হয়নি। মুল তদন্ত ছাড়া সন্দেহভাজন কারো কথা আমরা বলতে পারিনা। ঘটনাস্থল থেকে ফিরে নলডাঙ্গা ইউএনর মহোদয়ের কাছে গিয়ে বাস্তব চিত্রটা তাকে জানানো হবে। আর ক্ষতি হওয়া বিষয়টিও ইউএনও মহোদয়কে জানানো হবে। ক্ষতিগ্রস্থ ভিকটিম পরিবার যদি আগুনের জন্য আবেদন করেন ,তাহলে তদন্ত করে আমরা পুর্নাঙ্গ প্রতিবেদন দিতে পারব।
নলডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, মমিনপুর গ্রামের বারেক নামে এক ব্যক্তি বসত বাড়ির বিভিন্ন স্থান সহ কারো কারো শরীরের পরিধেয় বস্ত্রে বার বার আগুন লাগার বিষয়টি পুলিশের পক্ষ থেকেও তদন্ত করা হচ্ছে। এই আগুনের উৎস টা কি তা বের করার জন্য চেষ্টা করছি।
নলডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুখময় সরকার বলেন, মমিনপুর গ্রামে এক ব্যক্তির বাড়ি আগুনের যে ঘটনা ঘটছে তা নিয়ে আইনশৃংখলা বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিস তদন্ত করছে। আমরা আশা করছি ঘটনার মুল বিষয়টা দ্রুততম সময়ের মধ্যে বের হয়ে আসবে। আগুনের সুত্রপাত বের করতে যা যা করনীয় তা করা হবে। উপজেলা প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের পাশে রয়েছে ।
উল্লেখ্য,নলডাঙ্গা উপজেলার মমিনপুর গ্রামের আব্দুল বারেক মোল্লার বাড়িতে গত রমজান মাসের ২০ রোজা থেকে হঠাৎ করেই বাড়ির আঙিনাসহ যত্রতত্র দাউদাউ করে আগুন জ্বলে উঠতে শুরু করে। রহস্যজনক এই লাগার কারন বা উৎস গত প্রায় এক মাসেও খুজে পাওয়া যায়নি। রহস্যময় এ আগুন নিয়ে এলাকায় যেমন ছড়িয়ে পড়েছে আতংক। তেমনি শুরু হয়েছে নানা কল্পকাহিনী।