নাটোর অফিস ॥
নাটোরের গুরুদাসপুরে অনুষ্ঠিত হয়েছে বউদের মেলা। এই মেলাকে ঘিরে বিশাল আকৃতির খোলা মাঠজুড়ে ছিল নারীদের উপচে পড়া ভিড়। মেলার নাম ‘বউ মেলা’। অর্ধশত বছরের পুরানো এই মেলাতে শুধু বউরা এসেছেন তা নয়। এখানে অংশ নিয়েছেন শ্বাশুড়ী, ননদ, জা-ঝিসহ শিশু-কিশোরীরা। এই মেলাকে কেন্দ্র করে নারীদের জমায়েত ছিল চোখে পড়ার মত। তবে মেলার প্রথম দিন অথাৎ ১ লা চৈত্র বসে ঘোড় দৌড়ের প্রতিযোগীতা। এই প্রতিযোগীতাকে ঘিরে বসা এই গ্রামীণ মেলার দ্বিতীয় দিন ২ চৈত্র বসেছিল বউদের মেলা।
গুরুদাসপুর উপজেলার চাপিলা ইউনিয়নের মকিমপুরে মঙ্গলবার প্রথমদিন ঘোড় দৌড় প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত হয়। ঘোড় দৌড় শেষে বুধবার বসেছিল ‘বউ মেলা’ নামের এই মেলা। মেলায় নারীদের পাশাপাশি বাহারি সব কাঁচের চুরি, রঙিন ফিতা, স্নো-লিপষ্টিক, কানের দুল, ঝিনুকের মালার পসরা সাজিয়ে রেখেছেন পুরুষরাও। মেলায় এসে শ্বাশুড়ী, ননদ, জা-ঝিসহ নারীরা এসব অলঙ্কার কিনতে দামাদামি করেছেন। সহনীয় দাম হলে কিনছেন অলঙ্কারগুলো। তবে ‘বউ মেলা’য় পুরুষদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ থাকায় দৃষ্টির সীমানাজুড়ে শুধুই নারীদের চোখে পড়ে।
স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘ যুগের পুরানো এই মেলায় রয়েছে ঐতিহ্য । বাংলা বছরের পহেলা চৈত্র এই মেলা বসে। দুইদিন ব্যাপী এই মেলার প্রথম দিনে উন্মুক্ত মেলায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। দ্বিতীয় দিনের শুরু থেকে ‘বউ মেলা’ শুরু হয়। মেলাকে কেন্দ্র করে জামাইদের দাওয়াত করে আনা হয় শ্বশুরবাড়িতে। এলাকার পুকুর থেকে আনা বড় বড় মাছও রান্না করা হয় জামাইদের জন্য।
জনশ্রুতি রয়েছে, ৫৩ বছর আগে মৃত মুন্নাফ মন্ডল মেলাটি প্রথম শুরু করেছিলেন। এর পর থেকে প্রতিবছরের পহেলা চৈত্র দুইদিন ব্যাপী এই বউ মেলার আয়োজন চলে আসছে।
মেলার আয়োজক কমিটির সদস্য সুমন বলেন, এই মেলায় বিভিন্ন পণ্যের ২০০ থেকে ৩০০ দোকান বসেছিল। মেলাকে ঘিরে পুরো উপজেলায় উৎসবের আমেজ তৈরি হয়। মেলার আশেপাশের বাড়ি বাড়ি চলে আয়োজন।এই মেলাকে ঘিরে চারিদিকে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়।
মেলায় আসা শারমিন আক্তার, শ্যামলী, বিথি, পপি, লতা বলেন, এই দিনটির জন্য তারা বছরজুড়ে অপেক্ষা করেন। মেলায় শুধু মহিলাদের আগমণ থাকায় কেনা-কাটা, ঘোরাফেরাতে থাকে অবাধ বিচরণ। কোন সমস্যা হয়নি এ মেলায় এসে।
চাটমোহর থেকে আসা এক দোকানি বলেন, একদিন আগে মালপত্র নিয়ে তারা চারজন মকিমপুর মেলায় এসেছেন। বেচা কেনা এবার ভালোই হয়েছে।
আয়োজক কমিটির সভাপতি আমজাদ হোসেন বলেন, গ্রামীণ ঐতিহ্য ধরে রাখতে তারা যুগ যুগ ধরে শান্তিপূর্ণভাবে মেলাটির আয়োজন করে আসছেন। প্রথমদিন ঘোড়দৌড় প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় দিনে দিনভর ‘বউ মেলা’ চলার পর বিকালে আবারও ঘোড়াদৌড় হয়। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ ছুটে আসেন এই মেলা দেখতে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: তমাল হোসেন বলেন,গ্রামীণ ঐতিহ্যের এই মেলা শান্তিপুর্ন এবং স্বতস্ফুর্তভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত ৫৩ বছর ধরে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। নিরাপত্তার বিষয়টি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সহ জনপ্রতিনিধিরা দেখভাল করেছেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে মেলা আয়োজনের জন্য বলা হয়। মেলায় মহিলাদের ভির ছিল উপচেপড়া। আশেপাশের মহিলারা এই মেলায় অংশ নিয়েছেন। এছাড়া মেলায় ঘোড় দৌড়ের আয়োজন ছিল। করোনা মহামারির কারনে গত দু’বছর এই উৎসব থেকে বঞ্চিত ছিলেন এলাকার মানুষ।