নাটোর অফিস ॥
বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারন করে রাজনীতিতে নাম লিখিয়েছিলেন নাটোর শহরের বলারিপাড়া এলাকার মৃত আজহার আলীর ছেলে মোহম্মদ তোতা মিয়া (৩৮)। যুবলীগের একজন সক্রিয় কর্মী হয়ে সম্প্রতি আওয়ামীলীগের রাজনীতি শুরু করেন তিনি। বাবা-মা ,ভাইবোন আগেই গত হয়েছেন। তার উপার্জিত আয়েই স্ত্রী ও চার সন্তান নিয়ে বেশ ভালই কাটছিল তাদের সংসার। কিন্তু বিধি বাম সেই রাজনীতির জন্য তাকে অন্ধত্ব বরণ করতে হয়েছে। প্রতিপক্ষের হামলার শিকার হয়ে এখন হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে যন্ত্রনায় কাতরাতে হচ্ছে। তার অপরাধ ছিল তিনি ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের সমর্থক। গত ২০ ফেব্রুয়ারী অণুষ্ঠিত জেলা আওয়ামীলীগের ত্রিবার্ষিক কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে ১৯ ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যায় সার্কিট হাউজে এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুল ও সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং সদ্য নির্বাচিত জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় রমজান সমর্থকদের ছোড়া পাথরের আঘাতপ্রাপ্ত হন যুবলীগ কর্মী মোহম্মদ তোতা। সংঘর্ষের সময় একটি পাথর তার ডান চোখে আঘাত লাগে। ওই আঘাতে তোতার ডান চোখ বাহিরে বের হয়ে আসে। এছাড়া এদিন শিমুল সমর্থক পৌর আওয়ামীলীগ সাধারন সম্পাদক হাবিবুর রহমান চুন্নু ও তার বড়ভাই মশিউর সহ অন্তত ৭ জন আহত হয়।
এদিকে চোখে আঘাতপ্রাপ্ত যুবলীগ কর্মী তোতাকে ঘটনার রাতেই নাটোর সদর হাসপাতাল থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসীন থাকলেও তোতার ডান চোখ নষ্ট হয়ে যায়। ইতিমধ্যে অপর চোখেই সমস্যা শুরু হওয়ায় তাকে ঢাকার চক্ষু হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করার পরামর্শ দিয়েছেন রামেক হাসপাতালের চিকিৎসকরা। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মোহম্মদ তোতাকে রামেক হাসপাতাল থেকে শনিবার ঢাকার ইস্পাহানি ইসলামীয়া চক্ষু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। শনিবার ঢাকায় নিয়ে যাওযার পথে নাটোরে স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন এবং তার ওপর হামলার সাথে জড়িতদের বিচার সহ দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবী জানান। একই সাথে তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সহায়তা চেয়েছেন।
নাটোর প্রেসক্লাবের সামনে এ্যাম্বুলেন্সে শুয়ে থেকে কিছু সময় কেঁদে চোখের পানিতে বুক ভাসান। এসময় সাংবাদিকদের বলেন, ১৯ ফেব্রুয়ারী বিকেল থেকে কেন্দ্রিয় নেতৃবৃন্দকে দেখতে এবং স্বাগত জানাতে সকলের সাথে তিনিও নাটোর সার্কিট হাউসে গিয়ে অবস্থান করছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই রমজান সমর্থকরা তাদের ওপর হামলা চালায়। এসময় রমজান সমর্থক জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারন সম্পাদক সফিউল আযম স্বপন, শরিফুল ইসলাম শরিফ, নাসির উদ্দিন, জনি ও রতন সহ কয়েকজন তাদের লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ করতে শুরু করে। এসময় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা স্বপনের ছোড়া একটি পাথর এসে তার চোখে আঘাত করে। এতে তিনি আহত হলেও তারা পাথর নিক্ষেপের পাশাপাশি লাঠি সোটা নিয়ে তেড়ে আসেন। তিনি চোখে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মাটিয়ে লুটিয়ে পড়েন। এই আঘাতে তার ডান চোখ সম্পুর্ন নষ্ট হয়ে যায়। এখন অপরটিও নষ্ট হওয়ার পথে। চিকিৎসকরা বলেছেন দ্রুত উন্নত চিকিৎসা করাতে না পারলে অপর চোখটিও নষ্ট হয়ে যাবে। ইতিমধ্যে ভাল চোখে দিয়ে অঝোর ধারায় পানি ঝড়ছে। কম দেখতে পাচ্ছি। যন্ত্রনাও হচ্ছে। চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী দ্রুত এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। সে টাকা যোগার করাও আমার বা আমার স্ত্রীর পক্ষে সম্ভব নয়। এমনিতেই চারটি শিশু সন্তান নিয়ে সংসারের খরচ যোগান দিতে স্ত্রীকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। শিমুল এমপি এপর্যন্ত চিকিৎসার খরচ যুগিয়েছেন। তার ওপর ভরসা করেই ঢাকায় যাচ্ছি। তিনিই বা আমার চিকিৎসা খরচের আর কত যোগান দিবেন। তিনি তার চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা চেয়েছেন। তোতা জানান, তার ওপর হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
তোতার স্ত্রী সাথী বেগম বলেন, তার স্বামীর একার উপার্যজনে তাদের পেটে খাবার জুটেছে। এখন তার চিকিসার খরচ কোথায় থেকে আসবে। দ্রুত উন্নত চিকিৎসা করাতে না পারলে তিনি অন্ধ হয়ে যাবেন। ছোট শিশু চার সন্তানদের মুখে আহার জুটবে কিনা তা নিয়ে শংকায় দিন কাটছে তাদের। তিনি তার স্বামীর ওপর হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবী করেন।
অভিযুক্ত জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারন সম্পাদক সফিউল আযম স্বপন এই অভিযোগকে মিথ্যা ও অসৎ উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে দাবী করে বলেন, ঘটনাস্থল এলাকায় অথাৎ সার্কিট হাউস এলাকায় একাধিক সিসি ক্যামেরা রয়েছে। ওই সব সিসি ক্যামেরায় ধানকৃত ছবি দেখলেই প্রকৃত সত্য ঘটনা জানা যাবে। আমি যদি সেখানে উপস্থিত থেকে থাকি সেটাও জানা যাবে। মুলত আমার রাজনৈতিক সুনাম নষ্ট করতে যারা আমাকে পছন্দ করেননা তারা একটি মিথ্যা নাটকের জন্ম দিতেই এমন মিথ্যা অভিযোগ তুলেছেন।
নাটোর সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনসুর রহমান জানান, ১৯ ফেব্রুয়ারী সার্কিট হাউসে সংঘঠিত ঘটনায় ইতিমধ্যে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে । হাবিবুর রহমান চুন্নু বাদি হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন।