নাটোর অফিস॥
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা যাওয়া মাহবুব হাসান হিমেলের মরদেহ দাফন করা হয়েছে নাটোরে। বুধবার বাদ জোহর নাটোরে গাড়িখানা গোরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়। এর আগে দু’দফা জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। বুধবার সকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে প্রথম দফায় জানাজা শেষে মাহবুব হাসান হিমেলের মরদেহ নিয়ে নাটোরে উদ্দেশ্যে গাড়ি বহর রওনা হয়। দুপুর সোয়া ১২ টার দিকে মাহবুব হাসান হিমেলের মরদেহের গাড়ি বহর নাটোর শহরের কাপুরিয়া পট্ট্রি এলাকায় তার নানা বাড়ীতে পৌঁছালে সেখানে এক হৃদয় বিদারক পরিবেশ সৃষ্টি হয়। সদা হাস্য মিশুক হিমেলের এভাবে অকাল মৃত্যু তার স্বজনরা ও এলাকাবাসী মেনে নিতে পারছেন না। তারা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তাদের আহাজারিতে এলাকার বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। এ সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভিসি,প্রেভিসি,প্রক্টর ও তার শিক্ষকবৃন্দ সহ বিপুল সংখ্যক সহপাঠি তাকে শেষ দেখা দেখতে বাড়িতে ভির জমায়। এসময় হিমেলের সজনদের আহাজারিতে সকলেই আবেগপ্রবন হয়ে পড়েন। তাদের চোখেও পানি ঝড়তে দেখা যায়। তারা সবাই যে ট্রাকটি হিমেলকে চাপা দিয়ে হত্যা করেছে সেই ট্রাকের চালক ও হেলপারের বিচার দাবী করেন এবং এমন ঘটনায় আর যেন কারো মায়ের কোল খালি না হয় সেই দাবী করেন তারা। ১১টি বাস ও বেশ কয়েকটি মাইক্রেবাস নিয়ে তারা হিমেলের নানা বাড়ি নাটোরে এসেছিলেন হিমেলের শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাতে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রাক চাপায় রাবির শিক্ষার্থী মাহবুব হাসান হিমেল নিহত হয়। মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে ক্যাম্পাসের হাবীবুর হলের সামনে এ ঘটনার পর বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা পাঁচটি ট্রাকে আগুন দেয়। এসময় তারা ক্যাম্পাসে ভবন নির্মাণ প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর চালায়।হিমেল। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ক্রাফট এন্ড এচকালচার বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র।
প্রত্যক্ষদর্শী সুত্রে জানা যায় , হিমেল মোটর সাইকেল যোগে যাচ্ছিল। এ সময় নির্মাণ সামগ্রী নিয়ে যাচ্ছিল অপর একটি ট্রাক। হবীবুর হলের সামনে ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে ট্রাকের নিচে পড়ে যায় হিমেল। এ সময় তার মাথার উপর দিয়ে ট্রাকের একটি চাকা চলে যায়। এতে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনার পর বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা ওই ট্রাক আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে তারা আরও চারটি ট্রাকে আগুন দেয় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এর পর শিক্ষার্থীরা ভবন নির্মাণ প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ভাংচুর চালায়। এর পর তারা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল বের করে।
এদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাক চাপায় শিক্ষার্থী হিমেল নিহতের ঘটনায় ট্রাক ড্রাইভার টিটুকে নিজ বাড়ি থেকে গেপ্তার করেছে পুলিশ। নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা এলাকা থেকে তাকে গেপ্তার করা হয়
অপরদিকে বুধবার দুপুরে হিমেলের লাশ বহরের সাথে নাটোরে হিমেলের নানা মুনির উদ্দিনের বাড়িতে আসেন রাবির ভিসি প্রফেসর ডক্টর গোলাম সাব্বির সাত্তার,প্রেভিসি প্রফেসর মোঃ জাকারিয়া, প্রোভিসি প্রফেসর সুলতানুল ইসলাম ও প্রক্টর ভারপ্রাপ্ত লিয়াকত আলী সহ সকল শিক্ষক এবং সহ¯্রাধিক শিক্ষার্থী। সেখানে নিহতের মা সহ পরিবারের সদস্যদের সাথে সাক্ষাত করে সমবেদনা জানান তারা। এসময় ভিসি প্রফেসর ডক্টর গোলাম সাব্বির সাত্তার নিহতের মায়ের হাতে ৫ লাখ টাকার একটি চেক তুলে দেন। এসময় নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) নাদিম সারোয়ার ও পৌর মেয়র উমা চৌধুরী জলি সহ রাবির কয়েকশ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
পারিবারিক সুত্র জানায়, নাটোর শহরের কাপুড়িয়াপট্টি মহল্লার নানা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলামের বাড়িতে মাহবুব হাসান হিমেলের জন্ম। শিশুকালে তার বাবার বাড়ি বগুড়ার শেরপুরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের লেখাপড়া শেষ কওে তার নানার বাড়ি নাটোরে চলে আষে হিমেল। সেখান থেকেই নাটোর সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয় ও পরে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা সরকারী কলেজে লেখাপড়া শেষ করে সে। পরে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে মেধাবী হিমেল ভর্তি হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগে। চারুকলায় ৪র্থ বর্ষে পড়া অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরেই গতকাল মঙ্গলবার ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। সেই সাথে সাথে নিভে যায় তার ও তার স্বজনদের স্বপ্ন। বুধবার বিকেলে নাটোরের গাড়ীখানা গোরস্থানে হিমেলের মরদেহ দাফন করা হয়।
নিহত হিমেলের বৃদ্ধ নানা মনিরুল ইসলামসহ তার স্বজনরা শোকার্ত কন্ঠে বলেন, হিমেলকে তারা শিশুকাল থেকে নিজে হাতে মানুষ করেছেন। হিমেলের মত এমন সন্তান পাওয়া দুস্কর। পরের বিপদে সে নিঃস্বার্থভাবে ঝাঁপিয়ে পড়তো সেবার জন্য। মেধাবী হিমেল নাটোরের স্কুল কলেজে পড়াশুনা শেষ করে উচ্চ শিক্ষার জন্য ভর্তি হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। পড়াশুনার শেষ পর্যায়ে নিজেই শেষ হয়ে গেল। মোবাইল ফোনে তারা জানতে পারেন তাদের আদরের হিমেল ট্রাকের চাপায় মারা গেছে। তারা যে ট্রাকটি হিমেলকে চাপা দিয়ে হত্যা করেছে সেই ট্রাকের চালক ও হেলপারের বিচার দাবী করেন।
রাবির ভিসি বলেন, হিমেলের সার্বিক সহ অর্থনৈতিক দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করেছে। হিমেলের মা যতদিন জীবিতদ থাকবেন তার আর্থিক সহ দসার্বিক দায়িত্ব আমারা নিচ্ছি। তাৎক্ষনিকভাবে হিমেলের মায়ের হাতে ৫ লাখ টাকার একটি চেক দেওয়া হয়েছে। আগামীতে বড় একটি তহবিল তাকে দওেয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। হিমেলের মা যেন তার জীবদ্দশায় কোন কষ্ট না পান। এছাড়া মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রী, রাজশাহীর মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন,নাটোর এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুল জেলা প্রশাসক মামীম আহমেদ,পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা,পৌর মেয়র উমা চৌধুরী জলি তার জন্য কিছু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তারা অচিরেই তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি পালন করবেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আলোর ব্যবস্থা করা সহ সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবেবলে জানান। ঘটনার জন্য ট্রাক চালক ও হেলপারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সব সময় পাশে রয়েছে এবং থাকবে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন ভিসি। ঘটনার সাথে জড়িতদের অবশ্যই বিচার হবে।