নাটোর অফিস ॥
নাটোরে সেনাবাহিনীতে চাকুরী দেওয়ার নাম করে ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে মনিরুল ইসলাম নামে এক প্রতারককে গ্রেফতার করেছে র্যাব। সাতক্ষীরা ও ঠাকুরগাঁও এলাকার দুই যুবকের অভিযোগের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার রাতে অভিযান চালিয়ে ওই প্রতারককে বাগাতিপাড়ার নন্দিকুজা দয়ারামপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুক্রবার সকালে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানিয়েছেন র্যাব-৫ এর নাটোর ক্যাম্পের কোম্পানী অধিনায়ক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ ফরহাদ হোসেন। আটক মনিরুল ইসলাম বাগাতিপাড়া উপজেলার নন্দিকুজা এলাকার কফির উদ্দিনের ছেলে। র্যাব-৫ এর নাটোর ক্যাম্পে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে র্যাব-৫ এর উপ অধিনায়ক সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, সাতক্ষীরা শ্যামনগর গ্রামের মৃত কোবাত আলীর ছেলে শাহিন আলম ও ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর গ্রামের মোঃ নাসিম অভিযোগ করেন, তাদের সেনাবাহিনীতে চাকুরী দেওয়ার নামে জাল ও জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে প্রতারক মনিরুল ইসলাম প্রায় ৯ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। এই অভিযোগের ভিত্তিতে গত রাতে প্রতারক নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার নন্দিকুজা দয়ারামপুর গ্রামের মনিরুল ইসলামের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে র্যাবের একটি দল।এসময় উদ্ধার করা হয় নগদ ৫৮ হাজার ১০০ বাংলাদেশী ও ৮০০ ভারতয়ি রুপি, বিভিন্ন নিয়োগপত্রের সফট কপির দুটি পেইন ড্রাইভ,বিভিন্ন ব্যাংকের ১৬টি চেক বই,৭টি এটিএম কার্ড ১টি ভুয়াসহ তিনটি এনআইডি কার্ড ,ভুয়া নিয়োগপত্র ২টি,চাকুরী দানের ৩টি চুক্তিনামা,৪টি সিমকার্ড সহ ২টি মোবাইল ফোন, ৮টি অর্থ লেনদেনের রেজিষ্টার ও ১২টি জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প। র্যাব কর্মকর্তা আরো বলেন, প্রতারক মনিরুল নিজেকে চাঁন মন্ডল এবং ঢাকা সেনাবাহিনীর সিএমএস এর করনিক পরিচয় দিয়ে সেনাবাহিনীতে চাকুরী দেওয়া প্রলোভন দিয়ে বিভিন্ন জনের কাছে থেকে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
র্যাব কর্মকর্তা আরো জানান, অভিযুক্ত মোঃ মনিরুল ইসলাম এইচএসসি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। তিনি পেশায় একজন ঔষধ বিক্রেতা হলেও নিজেকে সেনাবাহিনীর সিএমএইচ, ঢাকায় করণিক পদে কর্মরত আছেন বলে পরিচয় দিতেন এবং ওই পরিচয় ব্যবহার করে বিভিন্ন পদ যেমন সৈনিক, অফিস সহায়ক, মেসওয়েটার, স্টোরম্যান পদে চাকুরী দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলা হতে ৩য় পক্ষের মাধ্যমে চাকুরী প্রত্যাশী যুবকদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিতেন। এক্ষেত্রে প্রতারক মনিরুল র জাল জালীয়াতির মাধ্যমে ভুয়া নিয়োগপত্র তৈরি করে চাকুরী প্রার্থীদের সরলতার সুযোগ নিতেন। চাকুরী প্রার্থীগণ নিয়োগপত্রে উল্লেখিত যোগদানের তারিখে সংশ্লিষ্ট অফিসে যোগদানের নিমিত্তে যাওয়ার পর বুঝতে পারতেন যে উক্ত নিয়োগপত্র সঠিক নয় বা ভুয়া। এভাবে প্রতারক মনিরুল ভুয়া নিয়োগপত্র তৈরি করে চাকুরী প্রত্যাশীগণের নিকট হতে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এছাড়াও মনিরুল প্রতারণার কাজে জাতীয় পরিচয়পত্রে নিজ নাম পরিবর্তন করে চাঁন মন্ডল পরিচয় ধারন করেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্থানীয় স্বাক্ষীগণের উপস্থিতিতে প্রতারক মনিরুল অভিযোগকারী মোঃ শাহিন আলম (২৭) ও মোঃ নাসিম (২১) এর নিকট ভুয়া নিয়োগপত্র প্রদান ও মোটা অংকের অর্থ গ্রহনসহ জাল জালিয়াতির মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জেলা হতে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ জন চাকুরী প্রত্যাশীর নিকট হতে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার কথা স্বীকার করে এবং জানায় ইতিপূর্বে ডিএমপির ভাষানটেক থানার এফআইআরনং-২৪/১৭১, তারিখ- ২৭ আগস্ট, ২০১৭, ধারা-১৭০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/৪২০/৪০৬/৫০৬ পেনালকোড-১৮৬০ এবং ২। ডিএমপি এর শেরেবাংলা নগর থানার এফআইআরনং-১৮/২২০, তারিখ ২০জুলাই, ২০১৭, ধারা- ৩৬৫/৩৮৫/৩৮৬/৩৪ দেনাল কোড-১৮৬০, থানায় তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা রয়েছে। এই প্রতারনার ঘটনায় তার বিরুদ্ধে বাগাতিপাড়া থানায় মামলা হয়েছে।