নবীউর রহমান পিপলু,নাটোর অফিস ॥
অর্ধ বঙ্গেশ্বরী খ্যাত রানী ভবানীর ঐতিহাসিক নির্দশনের একটি মহারানী ভবানী রাজবাড়ি। ইতিহাসবিদদের মতে প্রায় তিনশ’ বছর আগে নাটোর রাজ বংশের উৎপত্তি হয়। রানী ভবানীর স্মৃতিবিজড়িত মুল ভবন হচ্ছে ‘ রাণী ভবানীর রাজবাড়ি’ অর্থাৎ ঐতিহ্যবাহী নাটোর রাজবাড়ি। রাজবাড়ীর মূল ভবনের পাশেই রানী ভবানীর স্মৃতিবিজড়িত রানীমহল। সংস্কারের অভাবে সেই রানী মহলের সৌন্দর্য্য হারাতে বসেছে। ১৮০২ সালে রানী ভবানীর মৃত্যু হলে তাঁর দত্তকপুত্র রামকৃষ্ণের দুই পুত্র বিশ্বনাথ ও শিবনাথের মধ্যে জমিদারি ভাগাভাগি হয়। বড় ছেলে বিশ্বনাথের অংশের নাম হয় বড় তরফ। ছোট ছেলে শিবনাথের অংশের নাম হয় ছোট তরফ। সেই থেকে তাঁদের উত্তরাধিকারীরা ছোট তরফ ও বড় তরফ নামে জমিদারি পরিচালনা করেন। নাটোর রাজবংশের ছোট তরফের শেষ রাজা ছিলেন বীরেন্দ্রনাথ (১৮৯৭-১৯৫৫)। আর বড় তরফের রাজা ছিলেন যোগীন্দ্রনাথ (১৮৮৬-১৯৮১)। দেশভাগের সময় তাঁরা ভারতে চলে যান। ১৯৫০ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার জমিদারি প্রথা বাতিল করলে তাঁরা রাজ্য হারান। এই রাজবাড়ি চত্বরের বড় তরফ ও ছোট তরফ রাজপ্রাসাদসহ অনেক কিছুই সংস্কার করা হলেও অস্তিত্ব হারিয়ে যাচ্ছে অর্ধবঙ্গেশ্বরী রানী ভবানীর রানী মহল। রানী মহলটি সংস্কারের দাবী সর্ব মহলের।
অষ্টাদশ শতকের শুরুতে নাটোর রাজবংশের উৎপত্তি হয়। ১৭০৬ খিষ্টাব্দে মতান্তরে ১৭১০ খ্রীষ্টাব্দে রাজা রামজীবন নাটোর রাজবংশের প্রথম রাজা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পান। ১৭৩৪ খ্রীষ্টাবে মৃত্যুর পর তার দত্তকপুত্র রামকান্ত রাজা হন। ১৭৩০ খ্রীষ্টাব্দে বগুড়ার আদমদীঘির ছাতিয়ান(ছাতিনা) গ্রামের অত্মরাম চৌধুরী ও জয়দুর্গার কন্যা মহীয়সী রানী ভবানীর সাথে রামকান্তের বিয়ে হয়। ১৭৪৮ খ্রীষ্টাব্দে রামকান্তের মৃত্যুর পর রানী ভবানীর ওপর জমিদারী পরিচালনার দায়িত্ব অর্পন করা হয়। এই রাজবাড়ি চত্বরে ছোট বড় ৮টি ভবন,২টি গভীরসহ ৭টি ছোট বড় পুকুর রয়েছে। রয়েছে বেশ কয়েকটি মন্দির। রাজবাড়ির চারিদিকে ঘিরে আছে দুই স্তরের বেড়চৌকি। রাজবাড়ির দু’টি অংশের একটি ছোট তরফ এবং অপরটি বড় তরফের। এসব ভবন সংস্কার করা হলেও রানী ভবানী যেখানে পুজা অর্চনা সহ বাস করতেন সেই রানী মহল এখন ধংসের পথে। বড়তরফের সামান্য দুরেই চোখে পড়ে ভগ্নপ্রায় সেই রানী মহলের। এখন রানী মহল আছে শুধু নাম মাত্র। রানী মহলের অস্তিত্বকে জানান দিতে টানিয়ে রাখা হয়েছে সাইনবোর্ড। জনশ্রুতি রয়েছে,মহারানী ভবানী এই মহলে বিশ্রাম নিতেন। করতেন পুজা অর্চনা। এই মহলের দুই পাশে রয়েছে দুটি পুকুর। পুকুর দু’টিতে শান বাঁধানো ঘাট ছিলো। এই ঘাট দু’টির অস্তিত্বও বিলীন হতে চলেছে। উনবিংশ শতাব্দিতে এক ভুমিকম্পে রানী মহলের সিংহভাগ মাটির নিচে দেবে গিয়ে ধংসপ্র্াপ্ত হয়েছে। বর্তমানে এই রাজবাড়ির দেখভালের দায়িত্ব রয়েছে জেলা প্রশাসনের। রাজবাড়িটি বর্তমানে দর্শনীর বিনিময়ে সবার জন্য উন্মুক্ত রয়েছে। অবশ্য করোনা মহামারির কারনে বেশ কয়েক মাস তা বন্ধ ছিল। এখন আবারও দর্শনার্থীর বিনিময়ে তা সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, নাটোর রাজবাড়ির স্থাপনাগুলো বেশ ইতিহাস সমৃদ্ধ। শুধুমাত্র অবহেলায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ঐতিহাসিক এই নিদর্শনটি। কিছু ভবন সংস্কার করা হলেও রানী ভবানী যেখানে বাস করতেন সেই রানীমহল এখন ধংসের পথে। রানীমহলটি বর্তমানে যেটুকু অবশিষ্ট রয়েছে তা সংস্কার করে নাটোর রাজবাড়ির ইতিহাস ঐতিহ্য ধরে রাখার দাবী দর্শনার্থীসহ স্থানীয়দের।
জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, নাটোরের রানী ভবানীর রাজবাড়িটি সংস্কারের দায়িত্বে রয়েছেন প্রত্নতত্ব বিভাগ। তারা ইতিমধ্যে ছোট ও বড় তরফের দু’টি ভবন সংস্কার করেছেন। এছাড়া রানী মহল ও মালখানা সহ অন্যন্যগুলিও তারা সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ রানী মহলটি যে অবস্থায় রয়েছে তা যাতে সুন্দর ও অকর্ষণীয় করে রাখা যায় সেজন্য প্রতœতত্ব বিভাগের সাথে সমন্বয় করে করা হবে বলে জানান তিনি।