নাটোর অফিস
নাটোরের গুরুদাসপুর থেকে উদ্ধার হওয়া সিংড়ার নৌকা মাঝি আরজু ফকিরকে (৩০) নারী ঘটিত বিষয় নিয়ে অপমানের প্রতিশোধ নিতে এসএসসি পাশ করা কয়েক বন্ধু তাকে হত্যা করে। শনিবার চলনবিলের বিলশা এলাক থেকে নিখোঁজ নৌকার মাঝি আরজু ফকিরের মৃতদেহ উদ্ধারের একদিন পর হত্যাকান্ডের মুল আসামী ১৮ বছর ২মাস বয়সী বাইজিদ বোস্তামীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রোববার রাতে গুরুদাসপুর উপজেলার বেড় গঙ্গারামপুর গ্রাম থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত বাইজিদ বোস্তামী উপজেলার বিলহরিবাড়ী গ্রামের নাসির বোস্তামির ছেলে। সোমবার দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক প্রেসব্রিফিং এ তথ্য জানান পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা।
পুলিশ সুপার পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা জানান,গত ৭ থেকে ৮ মাস আগে সিংড়া উপজেলার আনন্দনগর গ্রামের নৌকার মাঝি আরজু ফকির এলাকার একটি নারী ঘটিত বিষয় নিয়ে প্রতিবাদ করেন। এই দিন আরজু এলাকাবাসীদের নিয়ে আনন্দনগর গ্রামের পার্শ্ববর্তী গুরুদাসপুর উপজেলার বিলহরিবাড়ি গ্রামের বাইজিদ বোস্তামিসহ তার বন্ধুদের ধাওয়া করে এবং তাদের একজনকে লাথি মারে। এই ঘটনার পর আরজুর সাথে বাইজিদ বোস্তামি ও তার বন্ধুদের বিরোধ শুরু হয়। এতে বাইজিদ বোস্তামিসহ তার বন্ধুরা সবাই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। এক পর্যায়ে প্রতিশোধ নেওয়ার পরিকল্পনা শুরু করে তারা। এরই জের ধরে গত ২৬ আগষ্ট আরজু ফকিরের নৌকাটি চলনবিলের তিশিখালি মাজারে বেড়ানোর কথা বলে ভাড়া করে বাইজিদ ও তার বন্ধুরা। বেড়ানোর এক পর্যায়ে নৌকাটি নির্জন স্থান গুরুদাসপুরের হরদমা এলাকায় নিয়ে গিয়ে হাত পা বেধে আরজু ফকিরের মাথায় চাইনিজ কুড়াল দিয়ে জখম করে। বাইজিদ বোস্তামিসহ তার বন্ধুরা আরজুকে হাত পা বেধে নৌকায় আটকে রাখে এবং নৌকার ইঞ্জিন বন্ধ করে গাঁজা সেবন করে তারা। এসময় আরজু তাকে ছেড়ে দেয়ার জন্য আকুতি জানালে তারা ১০ হাজার টাকা দাবি করে। আরজু তার মোবাইল ফোনে পরিচিতজনদের কাছে ১০ টাকা চেয়েও পায়না। আরজু তার শিশু সন্তানের দোহায় দিয়ে জীবন ভিক্ষা চায়। কিন্তু তার সে আকুতি তাদের কানে যায়না। তারা ক্ষিপ্ত হয়ে বলে সেদিন বাড়ির কাছে পেয়ে লাথি মেরেছিলি। এখন তোর জীবনের কোন মুল্য নাই। একসময় তাকে চাইনিজ কুড়াল দিয়ে মাথার পিছনে উপুর্যপরি আঘাত করে। একসময় আরজুর গোংগানীর শব্দ থেমে গেলে বাইজিদ বোস্তামিসহ তার বন্ধুরা আরজুর হাত-পায়ের দড়ি খুলে চলনবিলের পানিতে ফেলে দেয়। এরপর তারা নৌকা চালিয়ে হরদমা গোরস্থানের কাছে নেমে যার যার মত বাড়ি চলে যায়।
এদিকে দিনশেষে আরজু ফকির বাড়ীতে ফিরে না আসায় তার বাবা আদম আলী থানায় একটি নিখোঁজের অভিযোগ দায়ের করেন। এরপর পুলিশ অভিযানে নেমে দুই দিন পর গুরুদাসপুরের বিলশা গ্রামের বিলের পানি থেকে আরজু ফকিরের মরদেহ উদ্ধার করে। পরে তথ্য প্রযুক্তির সহযোগীতায় হত্যাকান্ডে জড়িত বাইজদ বোস্তামীকে গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় আরো আসামী জড়িত রয়েছে। তদন্তের সার্থে তাদের নাম প্রকাশ করছে না পুলিশ। প্রেসব্রিফিংকালে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারেক জুবায়ের,সিংড়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামিল আকতার,বড়াইগ্রাম সার্কেরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খায়রুল আলমসহ প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ।