নাটোর অফিস॥
নাটোরের পন্ডিতগ্রামের কানুজগাড়ি,হরিগাছা ও পাঁচানী বিল সহ কয়েকটি বিলে জলাবদ্ধতার কারনে গত দশ বছর ধরে ফসল আবাদ হচ্ছেনা। ক্ষতিগ্রস্থরা পানি নিস্কাসনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ,বরেন্দ্র বহুমুখি সেচ প্রকল্পসহ উপজেলা কৃষি বিভাগের কাছে আবেদন জানালেও প্রত্যাশিত কোন ফলাফল মেলেনি।
ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, সদর উপজেলার ছাতনী ইউনিয়নের পন্ডিতগ্রাম ৬ নং ওয়ার্ডের হরিগাছা,কানুজগাড়ি, পাঁচানী,পাঙ্গাশী ও পদ্ম বিলের তিন ফসলি প্রায় সাড়ে তিন হাজার একর জমি এখন পানির নিচে তলিয়ে। এক সময় এসব জমিতে মসুর ,গম ,খেসারিসহ ধান আবাদ হতো। পলি জমে কার্লভাট অকেজো সহ পানি নিস্কাসনের পথ বন্ধ এবং বাড়ি-ঘর সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নির্মিত হওয়ায় এই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া এলাকায় একাধিক পুকুর খনন ও ইটভাটা স্থাপন করায় এসব বিলের পানি বের হতে না পেরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করেছে। দীর্ঘদিন এসব জমিতে চাষাবাদ করতে না পেরে দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর হয়ে পড়েছেন কৃষকদের অনেকেই।
পন্ডিত গ্রামের হানিফ মিয়া জানান, হরিগাছা বিলে তার তিন বিঘা জমি গত দশ বছর ধরে পানির নিচে। একসময় এই সব জমিতে বছরে তিনটি করে ফসল চাষ করা যেত। এখন পানি থাকায় সারা বছরই জমিগুলো পতিত পড়ে থাকছে। এই বিলে ৫ একর জমি পানিতে তলিয়ে রয়েছেন বলে জানান একই গ্রামের মাহবুব হোসেন। তিনি বলেন, এখন হাফ শতক জমিও চাষ করতে পারছেননা গত দশ বছর ধরে। এলাকায় একাধিক ইটভাটা ও পুকুর খনন সহ কালভার্টের মুখগুলো পলি পড়ে উঁচু হওয়ায় বিল থেকে পানি বের হতে পারছেনা। ফলে দীর্ঘদিন ধরে এই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। কৃষক আক্কাস আলী জানান, পাশের কানুজগাড়ি ও পাঁচানী বিলের একই অবস্থা গত দশ বছর ধরে। খাল দখল করে বাড়ি নির্মান করায় পানি নিস্কাসনের পথগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। অপরদিকে কার্লভাটের মুখে ইটভাটা স্থাপন করায় কাজেই আসছেনা কালভার্টগুলো। কামরুজ্জামান ও রেজা নামে অপর ক্ষতিগ্রস্থ দুই কৃষক আক্ষেপের সুরে বলেন,উপজেলা প্রশাসন সহ বিভিন্ন দপ্তরে এসব সমস্যার সুরাহার জন্য শত শত মানুষের স্বাক্ষরিত আবেদন পত্র জামা দেয়া হয়। কিন্তু দেখার কেউ নাই।
এলাকার বিশিষ্ট সমাজসেবক ও কলেজ শিক্ষক সাজেদুর রহমান সেলিম বলেন, এই সমস্যা নিরসনের জন্য আমি নিজে বিভিন্ন দপ্তরের সাথে কথা বলেছি। শুধু আশ্বাসই মিলেছে,কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
ছাতনী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন জলবদ্ধতার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ইউনিয়নের তেলকুপি ফকির পাড়া, আমহাটি ,চক আমহাটি, পন্ডিতগ্রাম ও বারোঘরিয়া সহ কয়েকটি গ্রামের পানি এসব বিল দিয়ে এখন বের হতে না পেরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করেছে। বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক নেতাদের সুপারিশ সহ আবেদন নিয়ে আমি নিজে এলজিইডি,পানাসী ও বরেন্দ্র সহ বিভিন্ন দপ্তরে গিয়েছি। গত বছর তারা ইউপি নসদস্য জাহাঙ্গীর ও ইমরানকে সাথে নিয়ে এলাকা পরিদর্শন করে গেছেন।কিন্তু এখনও কোন ফলাপল পাওয়া যায়নি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মেহেদুল ইসলাম জানান, সমস্যাটি দীর্ঘদিনের । ইতিমধ্যে এলাকা পরিদর্শন করা হয় এবং জলবদ্ধতা নিরসনের জন্য বরেন্দ্র বহুমুখি সেচ প্রকল্প থেকে একটি প্রকল্প নেওয়ার কথা জেনেছি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহাঙ্গীর আলম জানান, এলাকায় সরেজমিন গিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ক্ষতিগ্রস্থদের সাথে নিয়ে মাঠ পরিদর্শন করা হয়েছে। কিন্তু পানি নিস্কাসনের জন্য ড্রেন করার জমি চাওয়া হলেও কেউ জমি দিতে রাজি হয়নি । ফলে পানি নিস্কাসনের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি। নতুন করে কেউ আবেদন করেনি। করলে পানি নিস্কাসনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।