জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক: নির্বাচন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের (রাসিক)। চিরাচরিত দৃশ্য অনুযায়ী, মেয়র প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেন নগরীর স্থানীয় নেতাকর্মীরা। তবে এবারের নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই আ’লীগের মেয়র প্রার্থীর প্রচারণায় স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সাথে নেমেছেন দলের নাটোর জেলা, উপজেলা, পৌর এমনকি ওয়ার্ড শাখার নেতৃবৃন্দ। প্রতিদিন গণমাধ্যমে আ’লীগের মেয়র প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের প্রচারণায় দেখা যাচ্ছে নাটোরের কোন না কোন নেতাকে। প্রচারণায় অংশ নিয়ে আচরণবিধি ভঙ্গের দায়ে অভিযুক্ত হয়েছেন নাটোর-২ আসনের সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শিমুলও। এসব নেতাদের অধিকাংশই আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দুই দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী। প্রচারণায় অংশ নেয়া মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান, নাটোরের চারটি আসনের এমন কোন নেতাই বাদ যাননি।
নাটোরের ৪টি আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোননয়ন প্রত্যাশী নেতাদের মধ্যে যারা প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন তারা হলেন, নাটের-২ আসনের বর্তমান সাংসদ শফিকুল ইসলাম শিমুল, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাজেদুর রহমান খাঁন, পৌর মেয়র উমা চৌধুরী জলি, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম রমজান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকার, জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মালেক শেখ, নাটোর-১ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী শহিদুল ইসলাম বকুল, নাটোর-৪ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী শাহনেওয়াজ আলী মোল্লা, ডাঃ সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী, রাবির সাবেক ছাত্রনেতা আহমদ আলী মোল্লা প্রমুখ। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের বাইরেও প্রচারণায় অংশ নেন নাটোর-১ আসনের সাংসদ আবুল কালাম আজাদের পুত্র ইঞ্জিনিয়ার সাফিনুর রহমান পল্লব, নাটোর-৩ আসনের সাংসদ ও আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সহধর্মিনী আরিফা জেসমিন কণিকা, নাটোর-৪ আসনের সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুসের কন্যা ও কেন্দ্রিয় যুব মহিলা লীগের সহ-সভাপতি কোহেলী কুদ্দুস মুক্তি, সিংড়া পৌর মেয়র জান্নাতুল ফেরদৌস প্রমুখ।
এসব মনোনয়ন প্রত্যাশীদের অনেকের ধারণা, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড পর্যবেক্ষণে রেখেছে রাসিক নির্বাচন। আ’লীগের কোন কোন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা মনে করছেন, দলের প্রতি আনুগত্য জানান দিতে জাতীয় নির্বাচনের আগে সিটি নির্বাচনের প্রচারণায় অংশ নেয়াই উত্তম। অনেকে আবার পোষণ করেছেন ভিন্নমত। তাদের মতে, নির্বাচনে দলের বিজয় নিশ্চিত করার উদ্যেশ্যই রাজশাহীস্থ নাটোরবাসীর নিকট নৌকার পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন তারা।
ক্ষমতাসীন আ’লীগ থেকে মনোনয়ন চাওয়া নেতারা সকলেই এক বাক্যে বলেছেন, নিজেরা মনোনয়ন পেতে নয়, দলের বিজয়ের বিষয়টি চিন্তা করেই প্রচারে নেমেছেন। রাজশাহীর মাটিতে বিএনপি জামাতকে ভোটে পরাজিত করার জন্য ঐক্যবদ্ধ চেষ্টারই অংশ তাদের প্রচারণা।
তবে প্রচারে অংশ নেয়া দলের মহানগর কর্মী-সমর্থকরা মনে করছেন, সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তারা দীর্ঘদিনের প্রস্ততি নিয়েছেন। তারা ঘরে ঘরে নৌকার পক্ষে জনমত তৈরী করেছেন। এ কৃতিত্ব তাদের, বাইরে থেকে আগত নেতাকর্মীদের নয়। তাছাড়া নিজেদের ও পাশ্ববর্তী জেলার কয়েকজন সাংসদের প্রচারণায় যোগ দেয়া নিয়ে তারা বিব্রত। তাদের এমন প্রচারণা লিটনের বিপক্ষে গেছে যা ইস্যু করে অভিযোগের সুুযোগ নিয়েছে বিএনপি। উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত নেতাকর্মীরা প্রচারণায় নতুন মাত্রা যোগ করলেও তা ভোটে কি প্রভাব ফেলবে, এ নিয়ে সন্দিহান তারা। তারা মনে করেন, লিটনকে নৌকায় ভোট দেবে নগরবাসী তার অতীত কর্মকান্ড বিবেচনায়, অন্যদের প্ররোচনায় নয়।
নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও নাটোর-২ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম রমজান বলেন, ‘ আমার প্রচারণা মনোনয়নের জন্য নয় বরং নৌকার বিজয়ের জন্য। রাজশাহী নগরীর প্রায় ১৫ হাজার ভোটার রয়েছেন যাদের বাড়ি নাটোরে। তারা যেন নৌকা মার্কায় তাদের মূল্যবান ভোটটি দেয়, সেটির প্রচারণাই করেছি মাত্র।’
নাটোর-১ আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বকুল বলেন, ‘বিষয়টি এতোটা সহজ নয় যে সিটি নির্বাচনের প্রচারণায় গিয়েছি বলে দলীয় মনোনয়ন পাবো। দলের প্রতি আনুগত্য থেকেই যাওয়া।
নাটোর পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরী বলেন, ‘ আমাদের সংগঠন ম্যাবের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাসিক নির্বাচনের প্রচারণায় অংশ নিয়েছি। এছাড়া অন্য কোন কারণ নেই।’
নাটোর-৪ আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী গুরুদাসপুর পৌরসভার মেয়র শাহনেওয়াজ আলী মোল্লা বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি। তাই যেখানে নির্বাচনী লড়াইয়ে নৌকা রয়েছে, তখন আমাদের মধ্যে অন্যরকম অনুভূতি কাজ করে। মনোনয়নের জন্য কখনোই রাসিকের প্রচারণায় অংশ নিই নাই। গুরুদাসপুরের তৃণমূল মানুষকে সাথে নিয়ে নৌকার পক্ষে রয়েছি। আমাদের একমাত্র লক্ষ্য নৌকার বিজয়।
জেলায় দলের উপ-দপ্তর সম্পাদক এস এম আকরামুল ইসলামের নিকট প্রচারণার ক্ষেত্রে দলীয় কোন নির্দেশনা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি জানান, এমন কোন নির্দেশনা নেই। তবে কেউ কেউ দলীয় আনুকূল্য পেতে প্রচারণায় থাকলে সেিট তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত, দলের নয়।
নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের অন্যতম সহ-সভাপতি এডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘ দলের নেতাকর্মীদের রাসিক নির্বাচনের প্রচারণায় অংশ নেয়ার বিষয়টিকে যদি কেউ ব্যক্তি উদ্দ্যেশ্য ব্যবহার করে তবে তা সমর্থন করি না। তবে দেশ ও দলের বৃহত্তর স্বার্থে নৌকাকে জয়যুক্ত করার জন্যই সকলের এমন অংশগ্রহন। তবে যতদূর জানি, এমনিতেও ব্যক্তিইমেজসম্পন্ন খায়রুজ্জামান লিটন ভালো অবস্থানে আছেন এবার।’
এ ব্যাপারে উত্তরাঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি জাগো নাটোরকে বলেন, ‘রাসিক নির্বাচনের আর জাতীয় সংসদ নির্বাচন এক নয়। জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নে আলাদা ফ্যাক্টর আছে। সিটি নির্বাচনের প্রচারণায় অংশ নিলেই যে দলীয় হাইকমান্ডের নজরে আসা যাবে এবং কেউ মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে থাকবে, এটা ভুল ধারণা।