নাটোর অফিস॥
আজ রোববার মহানবমী। কাল সোমবার বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে হিন্দু ধর্মালম্বীদের সব থেকে বড় দুর্গোৎসব। ষষ্ঠী তিথিতে দেবীর আমন্ত্রণ আর অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে দুর্গাপূজা। সপ্তমী তিথির ঊষালগ্নে নবপত্রিকা শেষে চক্ষুদানের মধ্য দিয়ে প্রাণসঞ্চার করা হয়েছে দেবীর মৃন্ময়ীতে। আজ রোববার শারদীয় দুর্গোৎসবের মহানবমী পূজা। চন্দ্রের নবমী তিথিতে অনুষ্ঠিত হবে মহানবমী কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজা। নানা আচারের মধ্য দিয়ে মহানবমীর পূজা শেষে যথারীতি থাকবে অঞ্জলি নিবেদন ও প্রসাদ বিতরণ। মূলত আজ চতুর্থ দিনই পূজার শেষ দিন। তবে বিজয়া দশমীর দিনেও বেশকিছু আনুষ্ঠানিকতা থাকে।
নবমী সন্ধিক্ষণে অনুষ্ঠিত হয় সন্ধিপূজা। মহিষাসুর নিধনের সময় দেবী দুর্গা প্রচন্ড ক্রোধে কৃষ্ণবর্ণ রূপ ধারণ করেছিলেন। তাই পূজার এই আচারের সময় দেবীকে চামুন্ডা রূপে পূজা করা হয়েছে, অর্থাৎ যিনি চন্ড ও মুন্ডের বিনাশিনী। পূজার এই মুহূর্তটি আরও একটি কারণে স্মরণীয়। দেবী দুর্গার আশীর্বাদ নিয়ে শ্রীরামচন্দ্র এই মুহূর্তেই রাবণকে বধ করেছিলেন।
গতকাল ছিল মহাষ্টমী। শারদীয় দুর্গাপূজার সবচেয়ে আকর্ষণীয় এবং জাঁকজমকপূর্ণ দিন। দেবীর সন্ধিপূজা এবং কুমারী পূজার মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা।এর আগে, সপ্তমীতে ত্রিনয়নী দেবী দুর্গার নবপত্রিকা প্রবেশ ও স্থাপন শেষে ভক্তদের কল্যাণ ও শান্তির আশীর্বাদ নিয়ে হিমালয় নন্দিনী দেবী দুর্গা পূজার পিঁড়িতে বসেন। অনুষ্ঠিত হয় ধূপধুনো, বেল-তুলসি, আসন, বস্ত্র, নৈবেদ্য, পুষ্পমাল্য, চন্দনসহ ১৬টি উপাচার দিয়ে দেবী দুর্গার পূজা।
দেবী দুর্গা জগতের মঙ্গল কামনায় এবার এসেছিলেন দোলায় চড়ে। আর আজকের দিন পর কাল বিদায়ও নেবেন গজে চড়ে।
শারদীয় দুর্গাপূজায় আজ হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি মন্ডপে ভিড় করছেন অন্য ধর্মাবলম্বী তরুণ-তরুণীরাও। হিন্দু সম্প্রদায়ের এ উৎসব যেন পরিণত হচ্ছে সামাজিক উৎসবে। অসুরের বিনাশ আর শান্তি, কল্যাণ ও সমৃদ্ধি লাভের আশায় যুগ যুগ ধরে দুর্গা দেবীর আরাধনা করে আসছে হিন্দু সম্প্রদায়।
সনাতন ধর্ম মতে, নবমী পূজার মাধ্যমে মানবকুলে সম্পদ লাভ হয়। মহানবমীতে ভক্তরা মায়ের কাছে দেশ, জাতি ও বিশ্বের সকল জীবের মঙ্গল কামনায় আশীর্বাদ চাইবেন।
এবারে করোনার কারণে পূজার আনুষ্ঠানিকতায় ছাড়া তেমন কোন আড়ম্বরতা না থাকলেও মানুষের মধ্যে উৎসবের আমেজ দেখা গিয়েছে। কাল সোমবার বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে শেষ হবে শারদীয় দুর্গোৎসব।
নাটোরের মন্দির জয়কালী বাড়ি’র সভাপতি খগেন্দ্র নাথ সাহা জানান, করোনার কারণের এবারের পূজায় সব রকম বিধি নিষেধ মেনে সীমিত আকারে পালন করা হচ্ছে। সবাইকে শারদীয় শুভেচ্ছা জানান তিনি।
নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা জানান, এবারে নাটোর জেলায় ৩৫২ টি মন্দিরে দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।করোনার কারনে এবারে আগের মত উৎসব হচ্ছে না। তবে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান করা হচ্ছে। শারদীয় উৎসবকে ঘিরে তিনস্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। শান্তিপূর্ণ ভাবে এবারের উৎসব অনুষ্ঠানের আশা প্রকাশ করেন তিনি।