নাটোর অফিস ॥
নাটোরের এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রায় ৫০ কোটি টাকার দু’টি সড়ক উন্নয়ন কাজের বাজেয়াপ্ত হওয়া টেন্ডার সিকিউরিটির কোটি টাকা নয়ছয় করার অভিযোগ উঠেছে। একই সাথে আদালতে দায়ের করা মামলার জবাব না দিয়ে ওই ঠিকাদারকে বাতিল হওয়া কাজ পাইয়ে দিতে কৌশলে সহায়তা করারও অভিযোগ কয়েকজন ঠিকাদারের। অবশ্য প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ আমলে না নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবগতি করে তাদের নির্দেশনানুযায়ী পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে জোর দিয়ে বলেছেন। বর্তমানে অবৈধ সুবিধা নিতে আদালতের নির্দেশনাকে পুঁজি করে বাতিল হওয়া ওই দু’টি সড়ক উন্নয়ন কাজ নতুন করে বরাদ্দ দিয়ে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের সাথে বৃহস্পতিবার চুক্তি করেছেন। এছাড়া দপ্তরের বিভিন্ন টেন্ডারে প্রকৌশলী তার পছন্দের ঠিকাদারের নামে কাজ পাইয়ে দিতে ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়ে থাকেন। ইতিমধ্যে ৩০ কোটি টাকার একটি ব্রীজ নির্মান কাজ তার পছন্দের ঠিকাদারকে পাইয়ে দিতে গিয়ে তার ছলচাতুরি ধরা পড়ায় বিপাকে পড়েছেন তিনি।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, রাজাপুর থেকে জোনাইল প্রায় ১৮ কিলোমিটার ও চংধুপইল থেকে আব্দুলপুর প্রায় ২০ কিলোমিটার দুটি সড়কের উন্নয়ন কাজের ব্যায় ধরা হয় প্রায় ৫০ কোটি টাকা। যা ইজিপির লিমিটেড স্ট্যান্ডার্ড ম্যথর্ড (এলটিএম) বিধি অনুযায়ী টেন্ডার আহবান করা হয়েছে। এতে শহীদ ব্রাদার্স নামে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এ কাজ পায়। শর্ত অনুযায়ী দরপত্র খোলার ১২ কার্যদিবসের মধ্যে প্রফেসনাল গ্যারান্টি মানি জমা দিতে ব্যার্থ হয় শহীদ ব্রাদার্স নামে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। একারনে ওই ঠিকাদারের জমাকৃত প্রায় কোটি টাকার টেন্ডার সিকিউরিটি বাজেয়াপ্তসহ টেন্ডার কার্যাদেশ বাতিল করা হয়। পরবর্তিতে ঠিকাদার শহীদ ব্রাদার্স এলজিইডির এই আদেশের বিরুদ্ধে সংস্লিষ্ট কতৃপক্ষের নিকট জবাব চেয়ে একটি উকিল নোটিশ প্রেরন করে। কিন্তু নাটোর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম সেই উকিল নোটিশের জবাব না দিয়ে প্রকারঅন্তরে কৌশলে শহীদ ব্রাদার্স নামে ঠিকাদারের পক্ষে অবস্থান নেন বলে অভিযোগের সুরে বলেন টেন্ডারে আংশ ন্ওেয়া অন্যান ঠিকাদাররা । পরবর্তিতে ওই ঠিকাদার আদালতে মামলা দায়ের করে। কিন্তু এব্যাপারে নাটোর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম কোন পদক্ষেপ না নিয়ে নিরব ভূমিকা পালন করেন। ফলে প্রতিপক্ষ না থাকায় আদালত ঠিকাদার শহীদ ব্রাদার্স এর পক্ষে রায় প্রদান করেন। ওই টেন্ডারে অংশ নেওয়া দ্বিতীয় নিন্ম দরদাতা মেসার্স মীর হাবিবুল আলম ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সত্বাধীকারী অভিযোগ করে বলেন, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম আদালতে দায়ের করা মামলায় অংশ না নিয়ে মুলত শহীদ ব্রাদার্স কে কাজটি পুনরায় পাইয়ে দেওয়ার জন্য কৌশলে অবস্থান নেন। তিনি আরও অভিযোগ করেন মেসার্স শহীদ ব্রাদার্সের নামে বরাদ্দ ্ওই দুটি সড়কের কাজ কার্যাদেশ বাতিল করে বাজেয়াপ্ত করা টেন্ডার সিকিউরিটি ৯৬ লাখ টাকা নির্বাহী প্রকৌশলীর ব্যাংক হিসাব নম্বরে জমা করা হয় এবং দ্বিতীয় নিন্ম দরদাতা হিসেবে মেসার্স মীর হাবিবুল আলম ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষে মতাতত দিয়ে প্রধান প্রকৌশলীসহ সংস্লিষ্ট কতৃপক্ষ বরাবরে পত্র প্রেরণ করা হয়। কিন্তু বর্তমানে নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম আদালতের নির্দেশনাকে পুজি করে বাতিল হওয়া দুটি সড়ক উন্নয় কাজ মেসার্স শহিদ ব্রাদার্স কে পাইয়ে দিতে ইজিপি পদ্ধতির পরিবর্তে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে তার সাথে নতুন করে চুক্তি এবং টেন্ডার সিকিউরিটি মানি ও প্রফেসনাল ব্যাংক গ্যারান্টি গ্রহন করেন। ঠিকাদার আরও অভিযোগ করেন, সম্প্রতি সিংড়া উপজেলার মহেশচন্দ্রপুর এলাকায় প্রায় ৩০ কোটি টাকার একটি ব্রীজ নির্মান কাজ প্রকৌশলী তার পছন্দের ঠিকাদার সুরমা জিন্নাহ জেভিকে পাইয়ে দিতে ছলচাতুরির আশ্রয় নেন। তিনি ওই টেন্ডারে অংশনেওয়া অন্যান্য ঠিকাদারদের উচ্চ দর প্রদান করতে প্রলুব্ধ করেন। প্রকৌশলীর ছলচাতুরির বিষয়টি বুঝতে পেরে আমি টেন্ডারে নিন্ম দর প্রদান করি। কিন্তু দরপত্র খোলার পর প্রকৌশলীর পছন্দের ঠিকাদার সুরমা জিন্নাহ জেভিও নিন্ম দর প্রদান করেছেন। আমার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সর্ব নিন্ম দরদাতা হওয়া সত্তে¦ও প্রকৌশলীর পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দিতে আমার প্রতিষ্ঠানকে নানা অজুহাতে কাগজ-পত্র দাখিলের কথা বলে হয়রানি করা হচ্ছে।
এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম উকিল নোটিশ ও মামলা দায়েরের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সকল বিষয় প্রধান প্রকৌশলীসহ সংস্লিষ্ট সকল কর্মকর্তাকে বিষয়গুলো অবগত করা আছে। তাদের নির্দেশ মত কাজ করেছি। টেন্ডার সিকিউরিটির ৯৬ লাখ টাকা নতুন করে কনট্রাক্ট সাইন করার সময় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে ফেরত দেয়া হয়েছে বলে জানান। তবে উকিল নোটিশ ও মামলায় অংশগ্রহন করেননি কেন? -এমন প্রশ্নের জবাব না দিয়ে তিনি নিরব থাকেন।