নাইমুর রহমান: নাটোরের সিংড়ার উপজেলার শেরকোল ইউনিয়নের প্রত্যন্ত সোনাপুর পমগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশুদের উপস্থিতি শতভাগ। তবে কয়েকদিন ধরে সাপ আতঙ্ক ভর করেছে শিশুদের মাঝে। শ্রেণিকক্ষের ভেতরে, বাইরে, বারান্দায়, টেবিল-বেঞ্চের নীচে এমনকি শিক্ষকদের কক্ষ থেকে আচমকাই বের হচ্ছে ছোট-বড় সাপ। গত বৃহষ্পতিবার থেকে রোববার পর্যন্ত ১৫টি সাপ বের হয়েছে বিদ্যালয়টি থেকে। তাই একাডেমিক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে বিদ্যালয়েল বারান্দায়। সাপের ভয়ে বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে দিয়েছে কোমলমতি শিশুরা। যারা আসছে, তাদের ক্লাস নিতে হচ্ছে চরম ঝুঁকির মধ্য দিয়ে। আকস্মিক সাপের আক্রমণ থেকে রেহাই পেতে বারান্দাতেই ক্লাস চলার সময় লাঠি, বাঁশ ও লোহার পাইপ হাতে পাহার দিচ্ছে অন্য শিশুরা।
রোববার সকালে সরেজমিনে ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ক্লাস শুরুর ঠিক আগেই প্রথম শ্রেণীর কক্ষের সামনে দুইটি সাপ মেরে ফেলে রাখা হয়েছে। পাশের দ্বিতীয় শ্রেণির কক্ষে ইংরেজি ক্লাস চলার সময়ই দরজায় লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে আছে ৫ম শ্রেণির ছাত্র হাসিবুল। তার তীক্ষদৃষ্টি শ্রেণিকক্ষের সর্বত্র। কোনদিক তেকে সাপ বের হলেই সেটাকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হবে। হাসিবুলের মতো আসিফ, মারুফ, সাজিদ. রাব্বি, সবুজরা পালাক্রমে নিজেদেরসহ প্রতিটি শ্রেণিকক্ষ পাহারা দিচ্ছে এভাবেই। রোববার সকালে ওয়াদুদ নামের ৪র্থ শ্রেণির এক ছাত্রকে কামড়াতে এলে তার চিৎকারে
এগিয়ে এস তারা সাপটি মেরে ফেলে।
হাসিবুল জানায়, ‘গত তিনদিনে ১৫টি সাপ মেরেছে তারা। সাপগুলো কোনদিক দিয়ে শ্রেণিকক্ষে ঢুকছে তা বুঝতে পারছি না। প্রথম ও তৃতীয় শ্রেণির কক্ষ থেকে বেশি সাপ বের হয়েছে। ’
৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী বিলকিস আক্তার, মারুফা, সুমাইয়া ও মিথিলা জানায়, প্রতিদিনই স্কুলে সাপ দেখছে তারা। সাপের ভয়ে অনেকে স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। তাদেরও স্কুলে যেতে বাড়ি থেকে নিষেধ করে দেয়া হয়েছে।
ডবদ্যালয়েল দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী সোনালী সাহার বাবা দ্বিজেন্দ্রনাথ সাহা বলেন, ‘বিদ্যালয়ে সাপ বের হচ্ছে শুনে মেয়েকে শ্রেণিকক্ষে ঢুকিয়ে স্কুল চলাকালীন সময় আমি বাইরে অপেক্ষা করছি গত দুদিন ধরে। এখনে এখন কোন শিশুই নিরাপদ নয়।’
বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক শাহাদত হোসেন ও শিরিনা সুলতানা জানান, ‘সাপের উপদ্রবে আমরা চিন্তিত। কখনো ছোট আবার কখনও বড় সাপ বের হতে দেখেছি আমরা। ছোটগুলো ধরে মেরে ফেলা হয়েছে। সাপের কারণে শিশুদেরও মনে আতঙ্ক তৈরী হয়েছে। গত দুইদিনে শতভাগ উপস্থিতি প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।’
বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি রমজান আলী বলেন, ‘হঠাৎ সাপের উপদ্রবে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সকলেই আতঙ্কিত। শিশুরাই নিজেদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে চলেছে। অভিভাবকরা সন্তানদের স্কুলে পাঠাচ্ছে না। স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে স্কুল বন্ধ হবার উপক্রম হবে।’
প্রধান শিক্ষক ফরিদুল ইসলাম জানান, সাপের উপদ্রবের ব্যাপারে মৌখিকভাবে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। তিনি জরুরী কাজে ব্যস্ত থাকায় এখনও কোন সিদ্ধান্ত দেননি।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমজাদ হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি জানেন না বলে জানান। তবে সাপের উপদ্রব রোধে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, শিশুদের জীবনের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনে স্কুলটি বন্ধ রাখা হবে।