নাটোরের আলোচিত আ’লীগ নেতা ডা: আয়নাল হক হত্যা মামলায় ১৩ আসামীর ২ জনের ফাঁসির আদেশ॥ ১১ জন খালাস

নাটোর অফিস ॥
নাটোরের আলোচিত বড়াইগ্রাম থানা আওয়ামীলীগ সভাপতি ডাঃ আয়নাল হক হত্যা মামলায় ১৩ আসামীর ২ জনকে মৃত্যুদন্ড এং ১১ জনকে খালাসের আদেশ দিয়েছে আদালত। আজ সোমবার নাটোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মোহম্মদ সাইফুর রহমান সিদ্দিক হত্যাকান্ডের ১৮ বছর পর এই রায় ঘোষনা করেন। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত শামীম ও তোরাবকে আরো ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। তবে রাষ্ট্রপক্ষ ও মামলার বাদীসহ নিহতের পরিবার এই রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। দন্ডপ্রাপ্ত শামীম বড়াইগ্রাম উপজেলার মহিষবাঙ্গ গ্রামের পলান মোল্লার ছেলে এবং তোরাব একই গ্রামের বাহার উদ্দিন মোল্লার ছেলে।
আদালত ও মামলার এজাহার সুত্রে জানাযায়, ২০০২ সালের ২৮ মার্চ রাত পোণে নয়টার দিকে বনপাড়া সাহেব পাড়ার ডাঃ আনছারুল হকের চেম্বার থেকে পুত্রবধু নাজমা বেগমকে রিক্সায় উঠিয়ে দিয়ে নিজে মোটর সাইকেলে ওঠার সময় থানা বিএনপির তঃকালীন সভাপতি ও ১৫ ফেব্রুয়ারীর সাংসদ এবং বনপাড়া পৌরসভার তৎকালীন প্রশাসক অধ্যক্ষ একরামুল আলমসহ স্থানীয় বিএনপি ১৭ নেতা কর্মী তার ওপর চড়াও হয়। এসময় তাকে রামদাসহ ধারালো অস্ত্র ও লোহার রড দিয়ে এলোপাতারি আঘাত করে রক্তাক্ত জখম করে ফেলে রেখে যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন দুপুরে তিনি মারা যান। এঘটনায় নিহতের পুত্রবধু নাজমা বেগম বাদী হয়ে উপজেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যক্ষ একরামুল আলম,উপজেলা যুবদলের তৎকালীন সভাপতি সাহের উদ্দিন সহ ১৭ বিএনপি নেতা -কর্মীকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে পুলিশ তদন্ত শেষে একরামুল আলম ও সাহের উদ্দিনকে বাদ দিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করলে বাদী এর বিরুদ্ধে নারাজি পিটিশন দাখিন করেন। পরে বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে উল্লেখিত দুইজন মামলায় র্অন্তভুক্ত করা হয়। কিন্তু বিচারকাজ চলমান অবস্থায় মামলার প্রধান আসামী একরামুল আলম,সাহের উদ্দিন,আলামুদ্দীন ও সেন্টু মারা যান। তাদের মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে ১৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচারকাজ সম্পন্ন করা হয়। ১০ জন স্বাক্ষীর স্বাক্ষ গ্রহন করা হয়। ১১ আসামীর উপস্থিতিতে বিচারক এই রায় ঘোষনা করেন।
রায় ঘোষনার সময় নিহতের ছেলে বনপাড়া পৌর মেয়র জাকির হোসেন, ও তার স্ত্রী এবং মামলার বাদী নাজমা বেগম ,নাটোর পৌর মেয়র উমা চৌধুরী জলি, সিংড়া পৌর মেয়র জান্নাতুল ফেরদৌস,গুরুদাসপুর পৌর মেয়র শাহনাজ আলী মোল্লা,বড়াইগ্রাম উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডাঃ সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী ,জেলা আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক দিরপি কুমার দাস,পেওর আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক হাবিবুর রহমান চুন্নু, জেলা স্বেচ্ছাসেবক রীগের যুগ্ম াাহবায়ক আহমেদ সেলিম,ছাত্রলগি নেতা মাহাদত হোসেন রাজিব সহ বড়াইগ্রাম ও জেলা আওয়ামীলীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া মামলার রায় জানতে বিএনপি নেতা শহিদুল ইসলাম বাচ্চু,রহিম নেওয়াজ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
বিচারক তার ৬১ পৃষ্ঠার রায়ে উল্লেখ করেছেন,সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে দেখা যায়,আসামী একরামুল ও সাহের উদ্দিনের রামদা ও চাইনিজ কুড়ালের আঘাতের কারনে আয়নালের মৃত্যু হয়েছে। যা মামলায় প্রদত্ত স্বাক্সী সহ পিএম ও সুরতহাল সাক্ষীর সাক্ষ্য দ্বারা প্রমানিত। ফলে এই দুইজন পেনাল কোডের ৩০২ ধারার অপরাধে সর্বোচ্চ সাজা পাওয়ার হকদার। কিন্তু মামলা চলাকালীন তারা দুই জনাই মৃত্যু বরন করায় তাদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। ফলে অভিযোগ প্রমাণিত হলেও এই মামলায় তাদের বিরুদ্ধে সাজা কার্যকরি করার আইনগত কোন সুযোগ নাই। ভিকটিমের পায়ে জখম এবং তার একটি পা ভাংগা। ডাক্তারের ভাষ্যমতে ভিকটিমের শরীরে জখমের কারনে তার মৃত্যু হয়েছে। বিজ্ঞপিপির দাবীকৃত উক্ত আঘাতের জন্য আসামী মোঃ তোরাব ও শামীম দায়ী মর্মে দাবী করা হয়। এমতবস্থায় উক্ত আসামীদ্বয় পেনাল কোডের ৩০২ ধারার অপরাধে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদন্ড পাওয়ার হকদার। তবে উক্ত আসামীদ্বয়ের বিরুদ্ধে পেনাল কোডের ১৪৭/১৪৮/১৪৯ ধারার অপরাধ প্রমানিত না হওয়ায় উক্ত ধারার অভিযোগ হতে তারা খালাস পেতে হকদার। অপর ১১ আসামী আতাউর রহমান,লুৎফর রহমান,ছোরাব,সালাম, আলিমুদ্দিন,রেজাউল,মামুন,রহিম, আনিছুর,নাজমুল ও বয়েন মন্ডলের বিরুদ্ধে পেনাল কোডের ১৪৭/১৪৮/১৪৯ ও ৩০২ ধারার অপরাধ প্রদত্ত সাক্ষ্য প্রমান দ্বারা সন্দেহাতীতভাবে প্রমানিত না হওয়ায় তাদেরকে উক্ত ধারার অভিযোগের দায় হতে বেকসুর খালাস প্রদান করা হল। এছাড়া আসামী সেন্টু ওরফে জিয়াউল হক এবং আলাম উদ্দিন মৃত্যু বরন করায় আদালতের ৭১ নং ও ৯১ নং আদেশে অভিযোগের দায় হতে অব্যাহতি প্রদান করা হয়।রায়ে ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্তমোঃ তােরাব ও শামীমকে মৃতু্যদন্ডে দন্ডিত করার পাশাপাশি ১০,০০১ টাকা করে অর্থদন্ডে দন্ডিত করা হল। উক্ত আসামীদ্বয়কে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে ( মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত মৃত্যুদন্ডাদেশ কার্যকর করা হোক।মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ ঢাকার অনুমোদন সাপেক্ষে অত্র রায় কার্যকরি হবে।
এদিকে এই রায় ঘোষনার পর তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় পাবলিক প্রসিকিউটার সিরাজুল ইসলাম, ডাঃ আয়নাল হকের ছেলে বনপাড়া পৌর মেয়র জাকির হোসেন ও মামলার বাদী নাজমা বেগম অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন,রায়ের কপি দেখে তারা পরবর্তী পদক্ষেপ নিবেন। মেয়র জাকির হোসেন ও মামলার বাদী নাজমা বেগম এই রায়ে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়াসহ হতাশা ব্যক্ত করেছেন।

 

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *