নাটোর অফিস॥
ভারত থেকে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের সিদ্ধান্তের একদিন না যেতেই নাটোরের হাট-বাজারসহ বিভিন্ন কাঁচা বাজারে পেঁয়াজের দাম এ লাফেই কেজিতে খুচরা দাম সেঞ্চুরিতে পৌঁছেছে। আর পাইকারী বাজারে কেজিতে ২০ থেকে ২৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। ফলে ক্রেতারা আছেন বেকায়দায়। পেঁয়াজের দাম আরো বৃদ্ধির আশঙ্কায় বেশি বেশি করে পেঁয়াজ কেনার হিড়িক পড়েছে। তবে বাজার নিয়ন্ত্রণে খোলাবাজারে ৩০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত জেলার সিংড়া ও বাগাতিপাড়ার দয়ারামপুরে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। এছাড়া বড়াইগ্রামের বনপাড়া বাজারে ৯০ টাকা, গুরুদাসপুরে চাঁচকৈর বাজারে ৮৫ থেকে ৯০ টাকা, নলডাঙ্গা উপজেলার নলডাঙ্গারহাটে ৮০ টাকা ও নাটোর সদরে ৮০-৮৫ টাকা কেজি দরে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। অপরদিকে এলসি পেঁয়াজের দাম প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
স্থানীয় পেঁয়াজ ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম, বুলু ও আড়তৎদার বাচ্চু মন্ডল জানান, নলডাঙ্গার সাপ্তাহিক হাটে আজ মঙ্গলবার প্রতিকেজি পেঁয়াজ পাইকারি ২০ থেকে ২৫ টাকার স্থলে বেড়ে ৭০ থেকে ৮০ টাকা এবং খুচরা মুল্য ৮০ থেকে ৮৫ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। দুইদিন আগেও শনিবার হাটে এই পেঁয়াজ ৫০ থেকে ৫৫ টাকা প্রতিকেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে আজ একই দিনে সদর উপজেলার শংকরভাগ হাটে দেখা যায়, প্রতিকেজি পেঁয়াজ ৮৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বনপাড়া হাটেও খুচরা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা দরে। সিংড়া বাজার ও আঞ্চলিক হাটগুলোতেও দেশি পেঁয়াজ সর্বনিম্ন ৮০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। নাটোর শহরের কাঁচা বাজারগুলোতে প্রতি মিনিটে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নাটোর পৌরসভার এক কর্মচারী পেঁয়াজ কিনতে যান শহরের নিচাবাজারে। ৭৪ টাকা কেজি দরে তিন কেজি পেঁয়াজ কিনেছেন তিনি। তাঁর কেনার মাত্র ১৫ থেকে ২০ মিনিটের ব্যবধানে নিচাবাজারে পেঁয়াজ কিনতে যান গণমাধ্যম কর্মী রফিকুল ইসলাম নান্টু। পেঁয়াজ কিনতে গিয়েই হতবাক বনে যান। ১৫ মিনিট আগেও যে পেঁয়াজের দাম ছিল ৭৫ টাকা কেজি অথচ ১৫ মিনিট পর সেই পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৮০ টাকা কেজি।
রফিকুল ইসলাম নান্টু বলেন, মাত্র ১৫মিনিটের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম ৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। স্টেশন বাজারে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে, এমন সংবাদ পেয়ে শহরের নিচাবাজারেও দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এজন্য প্রশাসনের বাজার মনিটরিংয়ের দরকার বলে তিনি দাবী করেন।
নাটোর স্টেশন বাজার এলাকার আবু বকর সিদ্দিক নামে এক ব্যক্তি জানান, তিনি গতকাল সোমবার ৫৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ কিনেছেন। অথচ আজ সেই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকা দরে। আর নাটোরে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি শুরু হয় স্টেশন বাজার থেকে। অপেক্ষাকৃত নিম্ন আয়ের মানুষের এ বাজারে দাম বাড়ার বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন বাজারে মুহূর্তের মধ্যেই দাম বেড়ে যায় পেঁয়াজের। হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে খুচরা ব্যবসায়ীরা চিরাচরিতভাবে পাইকার ও আড়তদারদের দায়ী করছেন। তবে তাদের দাবি, বেশি দামে কিনেছেন বলেই তারা বেশি দামেই বিক্রিতে বাধ্য হচ্ছেন। আর ভোক্তারা বলছেন, ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়ার একদিনেই পেঁয়াজের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির ঘটনা সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের মুনাফালোভী তৎপরতা ছাড়া আর কিছুই নয়।
এদিকে ভারতীয় পেয়াজ রপ্তানির খবরের পর পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রনে নাটোরে টিসিবির মাধ্যমে ৩০ টাকা কেজি দরে খোলা বাজারে পেয়াজ বিক্রি শুরু হয়েছে। দুপুর ১২টার পর থেকে শহরের দিঘাপতিয়া গণভবন চত্বর ও সদর থানার মাঠে শুরু হয় ট্রাকে পেঁয়াজ বিক্রি। অন্যান্য পন্যের সাথে জন প্রতি দেড় কেজি করে দেয়া হচ্ছে পেঁয়াজ। ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সকালেই নাটোরের বাজার গুলোতে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম এক লাফে ৮০ থেকে ১০০ টাকায় উঠে যায়। সোমবার যা বিক্রি হয়েছে ৫২ থেতে ৫৫ টাকা কেজিতে।
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) নাটোর শাখার শামিমা লাইজু নীলা বলেন, যৌক্তিক কারণ ছাড়াই ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের যে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন, তা এখনই মনিটরিং করে স্বাভাবিক করা উচিত। করোনার এই দুঃসময়ে কোনো ব্যবসায়ী যেন অতি মুনাফা করতে না পারে সে ব্যাপারে প্রশাসনের নজরদারি করা উচিত।
নাটোরের জেলা প্রশাসক মোঃ শাহরিয়াজ জানান, পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রনে ইতোমধ্যে নাটোরে টিসিবির মাধ্যমে ৩০ টাকা কেজি দরে খোলা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু হয়েছে। পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। যদি কোন ব্যাক্তি কিংবা অসাধু চক্র অধিক মুনাফা লাভের আশায় দাম বাড়িয়ে দেয়, তাদের খুঁজে বের করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে পেঁয়াজের বাজার মনিটরিংয়ে জেলা প্রশাসন সজাগ রয়েছে।