বিশ্ব কবি রবিন্দ্রনাথের ‘আমাদের ছোট নদী’ কবিতার নাগর নদীর মোহনায় দেয়া বাঁধ অপসারনের দাবি


নাটাের অফিস ॥
নাটোরের সিংড়ায় গুর নদীর অববাহিকায় তেমুখ নওগাঁ এলাকায় বিশ্ব কবি রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত “আমাদের ছোট নদী ” কবিতার নাগর নদীর মোহনায় দেয়া বাঁধ অপসারনের দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী। বহু আগে অপরিকল্পিত ভাবে অবৈধ বাঁধ দিয়ে একদিকে নদীর চলমান প্রবাহ রোধ করা হয়েছে, অপরদিকে নদীর সৌন্দর্য বিনষ্ট ঘটেছে। বন্ধ হয়েছে ওই এলাকার নৌ চলাচল। এজন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ওই বাঁধ অপসারণের দাবি জানিয়েছে সচেতন মহলসহ এলাকার মানুষ।
স্থানীয়রা জানায়, এক সময় এই নদীর পথ দিয়ে তাজপুর ইউনিয়নের শত শত মানুষ নৌকা যোগে শিববাড়ি বাজার এবং নওগাঁ বাজারে আসতো। কিন্তু বাঁধ দেয়ার পর থেকে নৌ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সম্প্রতি দুটি ইউনিয়নের মানুষের চলাচলের জন্য পাকা রাস্তা নির্মিত হয়েছে।
জানা যায়, সিংড়া উপজেলা দিয়ে ৫ টি নদী প্রবাহিত এর মধ্য রয়েছে আত্রাই, গুরনই, বারনই, নাগর ও গোদাই নদী। সিংড়া দহ থেকে উত্তরে নাগর নদী পশ্চিমে গুর নদী। গুর নদী শেরকোল ইউনিয়নের নওগাঁ বাজারে মিলিত হয়েছে। এই মোহনায় নাগর নদীর সাথে সংযুক্ত। ১৯৯৬ সালে তৎকালিন সময়ে রাতারাতি নদীর মোহনায় বাঁধ দেয়া হয়।
অপরদিকে ধাপে ধাপে আত্রাই নদীর নুরপুর,বিজয় নগর ও কালিনগর এলাকায় বাঁধ দেয়ায় চলনবিল সিংড়া অংশ অনেকটা পানি শূন্য হয়ে পড়ে। প্রতিবছর বন্যায় আত্রাই নদীর পানি নেমে যেতে না পারায় নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে। এতে করে প্রতি বছর ভয়াবহ বন্যার রুপ নেয়। এতে করে শত শত পুকুর ভেসে যায়, ফসলহানি এবং ঘরবাড়ি বিনষ্ট হচ্ছে। স্থানীয়দের দাবি, নাগর নদীর মোহনায় বাঁধ না দিলে বন্যায় এমন ভয়াবহ রুপ নিতো না।
স্থানীয়রা জানায়, তেমুখ নওগাঁ বাজার সংলগ্ন রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি বিজরীত লেখা কবিতা (আমাদের ছোট নদী) অর্থাৎ নাগর নদীর মোহনায় অবৈধভাবে ক্লোজার বাঁধ দেয়ায় প্রতিবছর আগাম বন্যা দেখা দেয়। বন্যায় নদীর পারের সহস্রাধিক মানুষের জীবনমান হুমকির মুখে এবং অনেক আবাদী জমির ফসল ডুবে যাচ্ছে, এতে করে অত্র এলাকার কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ।
মৎস্য চাষী রুস্তম আলী জানান, প্রতি বছর বন্যায় শতাধিক পুকুর ভেসে যায়, বারবার ক্ষতিগ্রস্থ হয় মৎস্য চাষীরা। এজন্য তারা অবৈধ ক্লোজার বাঁধ দ্রুত অপসারনের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক সহ নাটোরের জেলা প্রশাসক এবং সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন।
স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা রনজু মন্ডল জানান, এ বছর অকাল বন্যায় প্রচুর ক্ষতিসাধন হয়েছে। বিশেষ করে নদীর পারে গরীব পরিবার গুলোর ঘরবাড়ি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। মানুষ গৃহহীন হয়েছে। এবার আশ্রয় কেন্দ্রেও পানি ঢুকে পড়েছিলো। ত্রান সামগ্রী নৌকা যোগে পাঠানো হয়েছে। আবার অনেক পরিবার দুর্দশার মাঝে নিদারুন কষ্টে বাড়িতে বসবাস করতে বাধ্য হয়েছে। এ বাঁধ অপসারন হলে কয়েক লাখ মানুষ উপকৃত হবে।
শেরকোল ইউপি চেয়ারম্যান লুৎফল হাবিব রুবেল জানান, প্রবাহমান নদীতে বাঁধ দেয়া হয়েছে। বাঁধের কারনে অকাল বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি বেশি হচ্ছে। তাছাড়া চলমান নদীতে বাঁধ দেয়ায় নৌ চলাচল বন্ধ আছে। দ্রুত নিরসনে তিনি সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি কামনা করেন।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *