নাটোর অফিস॥
নাটোরের আলোচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সুমাইয়া হত্যা মামলায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড সুমাইয়া আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রতিবেদন দাখিল করেছে। গতকাল বুধবার নাটোরের সিনিয়র দায়রা জজ আব্দুর রহমান সরদারের আদালতে দাখিলকৃত ওই প্রতিবেদনে সুমাইয়া বেগম ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এদিকে বুধবার মেডিকেল বোর্ডের ওই প্রতিবেদন আদালতে দাখিলের পর হত্যা মামলায় অভিযুক্ত হয়ে কারাগারে আটক সুমাইয়ার স্বামী মোস্তাক হোসাইন, শ্বশুর সৈয়দ জাকির হোসেন এবং শাশুড়ি সৈয়দা মালেকা বেগমের জামিন শুনানী করা হয়। এই তিন জনের মধ্যে শ্বশুর সৈয়দ জাকির হোসেন এবং শাশুড়ি সৈয়দা মালেকা বেগমকে জামিন দেন আদালতের বিচারক। মামলার অপর আসামী সুমাইয়ার ননদ জাকিয়া ইয়াসমিন আগেই জামিনে ছাড়া পেয়েছেন। বুধবার সুমাইয়ার শশুর ও শাশুড়ি জামিনে ছাড়া পেয়ে কারাগার থেকে মুক্তি পেলেও বৃহস্পতিবার তাদের খোঁজে সদর উপজেলার বড়হরিশপুর এলাকার বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। তারা কোথায় আছেন এলাকাবাসীদের কেউ জানেনা।
এদিকে মেডিকেল বোর্ডের দাখিলকৃত ময়নাতদন্তের এই প্রতিবেদন প্রত্যাখান করেছেন সুমাইয়ার মা মামলার বাদী নুজহাত সুলতানা ও তার পরিবারের অন্য সদস্যরা।সুমাইয়ার মা নুজহাত সুলতানা ও ভাই সালাউদ্দিন বলেন, আসামী পক্ষ প্রভাব খাটিয়ে একটি হত্যার ঘটনাকে আত্মহত্যার রিপোর্ট প্রদানের মাধ্যমে অভিযুক্তদের জামিন প্রদান করা হয়েছে। তারা অভিযোগ করেন ,মেডিকেল বোর্ডের ময়না তদন্তের প্রতিবেদন নিয়ে পুলিশ তাদের সাথে লুকোচুরি করেছে। প্রায় দুই মাস আগে এই প্রতিবেদন দাখিল করা হলেও মামলার বাদী এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না।নুজহাত সুলতানা বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে মামলার তদন্ত কার্যক্রম সম্পর্কে আমাকে জানানো হয়নি। কিছুদিন আগেও ভিসেরা প্রতিবেদন সম্পর্কে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার কাছে খোঁজ নিতে গেলে তাকে বলা হয় প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। তার মেয়ে আত্মহত্যা করেনি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর থানার ওসি (তদন্ত) আবদুল মতিন বলেন, ‘মেডিকেল বোর্ডের প্রতিবেদনটি পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে সরাসরি আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে।
নাটোর জজ কোর্টের পিপি সিরাজুল ইসলাম বলেন, সুমাইয়া বেগম হত্যা মামলায় গঠিত তিন সদস্যের মেডিকেল বোর্ড ভিসেরা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ১২ জুলাই
প্রতিবেদন দাখিল করেছে। এর আগে ৬ জুলাই সিআইডির বিভাগীয় (রাজশাহী) ফরেনসিক ল্যাবে সুমাইয়া বেগমের মৃতদেহের ‘রাসায়নিক বিশ্লেষণ’ দাখিল করা হয়। সেখানে সুমাইয়া ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়। গতকাল বুধবার নাটোরের সিনিয়র জেলা ও জজ আদালতে পেশ করা হয়। ময়না তদন্ত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে কারাগারে আটক সুমাইয়ার স্বামী মোস্তাক হোসাইন, শ্বশুর সৈয়দ জাকির হোসেন ও শ্বাশুরি সৈয়দা মালেকার জামিন আবেদনের শুনানী হয়। শুনানীতে রাষ্ট্রপক্ষের বিরোধীতার কারনে সুমাইয়ার স্বামীর জামিন হয়নি। মামলায় অপর দুই জনের গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা না থাকায় বিচারক তাদের জামিন প্রদান করেছেন। বাদী চাইলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবির সাথে যোগাযোগ করে মেডিকেল বোর্ডের দাখিলকৃত ময়না তদন্তের প্রতিবেদনের বিপক্ষে আপত্তি জানাতে পারেন। প্রয়োজনে পুনরায় লাশ উত্তোলন করে নতুন করে ময়না তদন্তের জন্য আবেদন করা যেতে পারে।
নাটোর সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাঃ আমিনুল ইসলাম বলেন,তিন সদস্যের একটি মেডিকেল টিমের মাধ্যমে সুমাইয়ার ময়না তদন্তের এই রিপোর্ট প্রদান করা হয়েছে।
নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা বলেন, মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোন কিছুই বলা সম্ভব হচ্ছেনা।
উল্লেখ্য,গত ২২ জুন রাতে নাটোর সদর উপজেলার বড় হরিশপুর বাগানবাড়ি এলাকায় স্বামী মোস্তাক হোসাইনের বাড়ি থেকে ছাত্রী সুমাইয়ার মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সুমাইয়া শহরের হাজরা নাটোর এলাকার মরহুম সিদ্দিকুর রহমানের মেয়ে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামীক ষ্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন।