নাটোর অফিস ॥
নাটোর-১ আসনের সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুলের বিরুদ্ধে লালপুর ও বাগাতিপাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতা কর্মীরা বিস্তর অভিযোগ তুলেছেন। বুধবার শহরের একটি চাইনিজ রেস্তোরায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সাংসদ বকুলের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করেছেন এই দুই উপজেলার নেতা কর্মীরা। তবে সাংসদ বকুল তারা বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে ভিত্তিহীন ও অসৎ উদ্দেশ্যে এবং তার সুনাম ক্ষুন্ন করতেই সুবিধাভোগীদের কেউ কেউ এমন মিথ্যাচার করছেন বলে বলেন। উপরুন্তু তিনিও পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন এই দুই উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক কতিপয় নেতার বিরুদ্ধে।
এদিকে রেস্তোরায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংসদ বকুলের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ লিখিতভাবে পাঠ করেন লালপুর উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারন সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইছাহাক আলী। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়েছে শহিদুল ইসলাম বকুল এমপি নির্বাচিত হওয়ার দুই মাসের মাথায় বাগাতিপাড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধেসহোদর ভাইকে প্রার্থী করে নৌকার বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে দলের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতা করেন। শুধু তাই নয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির গ্রহণের বিপক্ষেও কাজ করে চলেছেন। তিনি বর্তমানে মাদকাসক্ত ও অনুপ্রবেশকারীদের দ্বারা সর্বদা পরিবেষ্টিত থাকেন। লালপুর ও বাগাতিপাড়ার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি থেকে আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীদের বাদ দিয়ে মাদকসেবীদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে লালপুর উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি আফতাব হোসেন ঝুলফুকে লালপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় এবং বাগাতিপাড়ার পাঁকা মহাবিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি থেকে বাদ দিয়ে অজ্ঞাত মাদক সেবীদের নিয়োগ দিয়েছেন এমপি বকুল। এছাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি গঠনের ক্ষেত্রেও অবৈধ প্রভাব খাটাচ্ছেন তিনি। এমপি বকুল জামায়াত -বিএনপিকে সুবিধা দিতে এই দুই উপজেলার আওয়ামীলীগের মনোনীত বিজয়ী ইউপি চেয়ারম্যান ওপর প্রভাব খাটাতে অবৈধভাবে প্রতিনিধি নিয়োগ দিয়ে তাদের মাধ্যমে চাপ সৃষ্টি করে চলেছেন। উপজেলা পরিষদের কাজেও বাধা সৃষ্টি করে চলেছেন। গত ১৩ আগষ্ট লালপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ইছাহাক আলীর অনুপস্থিতিতে সাংসদ বকুল উপস্থিত হয়ে বেআইনিভাবে নিজেই উপজেলা পরিষদের মাসিক সভা শুরু করেন। উপজেলার বিভিন্ন কমিটিকে বাদ দিয়ে তিনি নিজেই বিভিন্ন তালিকা প্রনয়ন করেন।
লিখিত বক্তব্যে আরো অভিযোগ করা হয়, আওয়ামীলীগের মূলধারার নেতাকর্মীদেরকে সাংগঠনিকভাবে সমন্বয় না করেই গত ৩১ আগস্ট লালপুরে পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠান করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল। একই অনুষ্ঠানে শহিদুল ইসলাম বকুল এমপি’র উপস্থিতিতে সাবেক আওয়ামী লীগ সাংসদ ও শহীদ জননেতা মমতাজ উদ্দিনের পুত্র শামিম আহমেদ সাগর ও উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক মিজানুর রহমান মিন্টু প্রমূখ নের্তৃবৃন্দগণ লালপুর-বাগাতিপাড়া আসনের সাবেক সাংসদ আবুল কালাম আজাদ, লালপুর উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি আলতাব হোসেন ঝুলফু, সাধারণ সম্পাদক ইসাহাক আলীসহ অন্যান্য নের্তৃবৃন্দদের সর্ম্পকে অশালীন, বানোয়াট, কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দেন। এতে করে সংবাদ সম্মেলনকারীদের ব্যক্তি ও রাজনৈতিক ইমেজ নষ্ট হয়েছে। এবিষয়ে লালপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করা হয়েছে। এবিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে শহিদুল ইসলাম বকুল এমপির বিরুদ্ধে বৈশ্বিক মহামারির সময়ে স্বাস্থ্য বিধি না অভিযোগও তোলা হয়েছে। এমপি মদ্যরাত পর্যন্ত সভাসমাবেশ করে স্বাস্থ্যবিধিকে বৃদ্ধাংগুলি প্রদর্শন করছেন। তিনি দলের ব্যানার ব্যবহার করে দলীয় গঠনতন্ত্র অবজ্ঞা করে সাংগঠনিক শৃংখলা ও আদর্ম বিরোধী কর্মকান্ড করে যাচ্ছেন। সাংসদ বকুল এখতিয়ার বর্হিভুতভাবে লালপুর উপজেলা যুবলীগের কমিটি গঠনের উদ্দোগ নিলে জেলা যুবলীগ নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপে তা ভন্ডুল হয়ে যায়।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বাগাতি পাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবুল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সেকেন্দার রহমান, লালপুরের ওয়ালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান, দুড়দুড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান, দোয়ারিয়া ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম, চংধুপইল ইউপি চেয়ারম্যান আবু আল বেলাল, লালপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক পলাশ, আড়বাব ইউপ চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা, এবি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সাত্তার, কদমচিলাম ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম রেজা, বাগাতিপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মজিবর রহাম, পাকা ইউপি চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন, দয়ারামপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান মিঠু, ফাগুয়াড়দিয়ার ইউপি চেয়ারম্যান জহুলুল ইসলামসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নের্তৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন ।
অপরদিকে নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনের সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল আনিত এসব অভিযোগ মোটেই ঠিক নয় বলে জানান। তার নির্বাচনী এলাকায় সকল অনুষ্ঠানের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের মূল ধারার সকল নেতাকর্মীদের সাথে সাংগঠনিকভাবে সমন্বয় করেই অনুষ্ঠান করা হয়। কেউ যদি অনুষ্ঠানে না আসে তার জন্যে আমি দায়ী নয়। আমার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট, উদ্দেশ্য প্রণোদিত। তিনি পাল্টা অভিযোগ তুলে বলেন, যারা তার বিরুদ্ধে এসব মিথ্যা অভিযোগ আনছেন,তারা দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর ধরে অবৈধ আয় করে অভ্যস্থ। উপজেলা দলিল লেখক সমিতি থেকে মোটা অংকের মাসোহারা নিয়ে তারা সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। এইসব চাঁদা উত্তোন বন্ধ করে দেয়ায় তারা গোস্সা হয়ে আমার বিরুদ্ধে মিত্যাচারে নেমেছেন। তাদের পিছনে আওয়ামীলীগের মূলধারার উল্লেখযোগ্য সংখ্রক কেউ নেই। বরং আমি আওয়ামীলীগের সকল অনুষ্ঠানে সকল নেতাকর্মীদের অংশগ্রহন করে মুজিব আদর্শ ও স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে আরো বেশি শক্তিশালী করতে উদ্বার্থ আহ্বান জানাচ্ছি।