জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক॥ ঈদ আনন্দ মেলার নামে চলবে যাত্রাপালা, র্যাফেল ড্র, সিট খেলা, খাম খেলা, বউখেলা, হাউজি খেলা। শুধু তাতেই সীমাবদ্ধ নয়, বৈধতা দানের জন্য মেলায় দেখান হবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কর্মময় জীবনের উপর নির্মিত প্রামান্য চিত্র। মেলার আয়োজক নাটোর জেলা মুক্তিযোদ্ধা জনতা কল্যান সমিতি। উদ্দ্যেশ্য, সমিতির সদস্য ও অফিসের উন্নয়নকল্পে তহবিল গঠন।
নাটোর সদর ও বড়াইগ্রাম উপজেলার সংযোগস্থল আহম্মদপুরের কদিম সাতুরিয়া এলাকায় এক মাসব্যাপী মেলার অনুমতি দেয় নাটোর জেলা প্রশাসন। গত ৯ জুলাই জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের জুডিশিয়াল মুন্সীখানা থেকে সহকারী কমিশনার খন্দকার রবিউল ইসলাম প্রেরিত ০৫.৪৩.৬৯০০.০১২.২৭.০০৩.১৭-৪৬৩ নং স্মারকের একটি অনুমতিপত্রে নাটোর জেলা মুক্তিযোদ্ধা জনতা কল্যান সমিতিরর নামে এক মাস মেলা চালাতে জেলা মুক্তিযোদ্ধা জনতা কল্যাণ সমিতির সভাপতি ও সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের সাবেক উপজেলা কমান্ডার শেখ আবুল হোসেনকে অনুমতি দেয় জেলা প্রশাসন। তবে মেলাটির বিষয়ে জানতে পেরে তা বন্ধ করে দিয়েছেন নাটোর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও নাটোর-৪ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল কুদ্দুস এমপি।
জানা যায়, রোববার বিকেল সাড়ে ৪টার পর নাটোর থেকে বড়াইগ্রাম যাবার পথে আহম্মদপুর বাজারে নেমে মেলা প্যান্ডেলের ভেতর ঢোকেন সাংসদ আব্দুল কুদ্দুস। তাকে পেয়ে স্থানীয় এলাকাবাসী মেলার আসর ভেঙ্গে দিতে অনুরোধ করেন। তিনি মেলা চালাতে দেয়া হবে না জানালে তার সাথে থাকা দলীয় কর্মীরা স্থানীয়দের সাথে নিয়েই মেলার প্যান্ডেল ভেঙ্গে দেন। এতে তাৎক্ষণিক উল্লাস করে স্থানীয়রা।
এদিকে জেলা প্রশাসনের ওই অনুমতিপত্রে বলা হয়, মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশন ৩০৮৬/১৪ নং রিট পিটিশনের আদেশে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট অনান্যদের প্রতি মেলা পরিচালনায় বাধা দেয়া যাবে না ও আইনগত ব্যবসায় করতে বাধা নেই মর্মে আদেশ প্রদান করায় জেলা মুক্তিযোদ্ধা জনতা কল্যান সমিতির তহবিল গঠনের লক্ষ্যে নয়টি শর্তে হাইকোর্টের আদেশে বৈধ দেশীয় খেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ যাত্রাপালা, র্যাফেল ড্র, সিট খেলা, খাম খেলা, বউখেলা, হাউজি খেলা পরিচালনা করতে গত ০৯/০৭/১৮ তারিখ থেকে ০৮/০৮/১৮ পর্যন্ত মেলা পরিচালনায় ‘নির্দেশক্রমে’ অনুমতি দেয়া হল।’
শর্তগুলো হল- আদেশের অতিরিক্ত প্রদর্শনী নিষিদ্ধ, আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখা, পুরুষ-মহিলার পৃথক প্রবেশ ব্যবস্থা রাখা, স্বেচ্ছাসেবক নিযুক্তি ও তার তালিকা থানায় সরবরাহ, আযান-নামাজের সময় মাইক বাজানো বন্ধ, কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করা, আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী কিছু না করা, ধর্মীয় অনুভূতির বিপরীত কাজ না করা এবং রাস্তায় যানজট সৃষ্টি না করা। অনুমতিপত্রের অনুলিপি বিশেষ শাখার পুরিশ সুপার, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ বেশ কয়েকটি দফতরে পাঠানো হয়েছে বলে উল্ল্যেখ আছে।
গত ৯ জুলাই থেকে মেলা শুরু হবার কথা থাকলেও তা শুরু হওয়ার কথা ছিল ১৫ই জুলাই থেকে। তবে শুরুর দিনই তা ভেঙ্গে দেয়া হল।
এদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের নাম ব্যবহার করে মেলার নামে জুয়া ও অশ্লীলতার আয়োজনের খবরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা। মেলা বন্ধের খবরে তারা খুশি হয়েছেন। এ জন্য তারা সাংসদ আব্দুল কুদ্দুসকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তাদের দাবী, বর্তমান সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ সম্মান দেখিয়ে যে সুবিধাদি প্রদান করেছেন, তার পরেও নিজেদের কল্যানের জন্য যারা মেলার আয়োজন করেন, তারা যাই হোক, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হতে পারেন না। আর এ কাজে যারা অনুমতি দেন, তারাও মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যানে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেয়া সকল পদক্ষেপকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন।
মেলার অন্যতম আয়োজক এনামুল হক জানান, রোববার বিকেলে সাংসদ কুদ্দুস নিজে দাঁড়িয়ে থেকে মেলা ভেঙ্গে দিয়েছেন। শুরুর আগেই ভেঙ্গে দেয়ায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেন বলে জানেন এনামুল হক।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে নাটোর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জেসমিন আক্তার বানু জানান, অনুমতিপত্রের অনুলিপি তিনি পাননি। তবে মেলার প্যান্ডেল ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে বলে তিনি জেনেছেন।
এ ব্যাপরে জেলা আ’লীগ সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস এমপি বলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম ব্যবহার করে যাত্রাপালা, হাউজি, লটারী করতে চেয়েছিল মেলার আয়োজকরা- এটা জানার পর সেখানে গিয়ে স্থানীয় জনগণকে সাথে নিয়ে মেলা ভেঙ্গে দিয়েছি। মেলার নামে কোন প্রকার জুয়া লটারী ও অশ্লীলতার আয়োজন করা হলে, তা প্রতিহত করা হবে।’
জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন মেলা বন্ধের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘ জেলা প্রশাসন নয়, মেলায় বাধা না দিতে মহামান্য হাইকোর্ট আদেশ দিয়েছিলেন। আদেশের প্রতি সম্মান দেখিয়েই মেলা পরিচালনার অনুমতি প্রদান করা হয়েছিল। রোববার বিকেলে সেটি বন্ধ হয়ে গেছে’।