নাটোর অফিস ॥
কোভিড-১৯ এর প্রভাবে বন্ধ রয়েছে সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। স্থবির হয়ে রয়েছে স্বাভাবিক পাঠদান। গ্রামাঞ্চলের অনেকেই তাদের শিক্ষাজীবন নিয়ে চিন্তিত ও হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন। এদের একটা অংশ লেখাপড়া ছেড়ে নেমে পড়েছেন অর্থ উপার্জনে। এসব পরিবেশ ও ভাবনা থেকেই নাটোরের বাগাতিপাড়ায় করোনাকালে ছুটিতে বাড়িতে আসা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এক ঝাঁক তরুন তরুণী গ্রামের অবহেলিত ও হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের পড়ার স্বপ্ন দেখাতে কাজ শুরু করেছেন।
‘ডেয়ার টু ড্রীম’ নামের একটি সংগঠণের ব্যানারে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব এক ঝাঁক তরুণ-তরুণী বাগাতিপাড়ার বিভিন্ন গ্রামের হতাশাগ্রস্থ এবং অবহেলিত ও পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের লেখা পড়া চালিয়ে যাওয়ার উৎসাগ যোগানোর পাশাপাশি এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের পড়ার স্বপ্ন বুনে দিচ্ছেন। উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত ও দলগত ভাবে অনলাইন এবং সেমিনারের মাধ্যমে উচ্চ শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে শিক্ষা উপদেশ ও ভর্তিপরীক্ষা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্যমূলক পরামর্শ প্রদান করছেন। এছাড়া ভর্তি প্রক্রিয়ায় সকল ধরনের সহায়তা প্রদান করবেন বলে অংশগ্রহণ কারীদের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দুরত্ব মেনে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন এলাকায় কখনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোন কক্ষে কখনও বা বাড়ির উঠানে সেমিনার করে চলেছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব এক ঝাঁক তরুন-তরুণী। এসব সেমিনারে এলাকার বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরাও অংশগ্রহণ করছেন।
এই সংগঠনের সাধারন সম্পাদক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বাগাতিপাড়া উপজেলার বিলগোপালহাটি গ্রামের বাসিন্দা ইসরাত জাহান ইমু তারা ৩৪ জন রয়েছেন এই সংগঠনের সাথে। যারা উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত ও দলগত ভাবে অনলাইন এবং সেমিনারের মাধ্যমে উচ্চ শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে শিক্ষা উপদেশ ও ভর্তিপরীক্ষা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য মূলক পরামর্শ প্রদান করছেন। গ্রামের অধিকাংশ স্কুল কলেজের ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্নই দেখেনা। তাই এসব অবহেলিত পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অবাধ বিচরনের জন্য স্বপ্ন দেখাচ্ছেন তারা। করোনা কালে ছুটিতে বাড়িতে এসে নিজেরাও বসে রয়েছেন। এই ফাঁকে তারা এসব বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়ারা এলাকার ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন বুনে দিচ্ছেন।
সংগঠনের সভাপতি বাগাতিপাড়া উপজেলার স্বরপপুর গ্রামের বাসিন্দা ও চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সাদ্দাম হোসেন শান্ত বলেন, একটি সংগঠন করার দীর্ঘদিন থেকে ইচ্ছা ছিলো যেটা পিছিয়ে পড়া গ্রামের শিক্ষার্থীদের একত্রিত করে এবং ভালো কোন ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সুযোগ করে দেয়া। মুলত এমন শিক্ষার্থীদের মোটিভিশন করতেই কাজ করে যাচ্ছি। সেই থেকেই আমাদের এই উদ্যেগ।সদস্যরা অনেক পরিশ্রম করছেন যেনো বাগাতিপাড়ার শিক্ষার্থীরা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেন। আমি বিশ্বাস করি আমরা এই সংগঠন টাকে অনেক দুর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো। পিছিয়ে পড়া অবহেলিত গ্রামীণ শিক্ষার্থীদেরকে এগিয়ে নিয়ে যেতেই এই উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে। আমরা সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।
উপজেলার ফাগুয়াড় দিয়াড় উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক আজাহার আলী বলেন, কোভিড-১৯ এর স্থবিরতা পুরো বিশ্বকে ধাবিত করছে অনিশ্চিত এক ভবিষ্যতের দিকে। প্রাণহীন নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে মাঠে-ঘাটে, পথে-প্রান্তরে। এই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব মেধাবী শিক্ষার্থীরা উপজেলার শিক্ষার্থীদেরকে এগিয়ে নিতে কাজ করছে যা প্রশংসার দাবিদার।
উপজেলার জিগরী গ্রামের আবু রায়হান ,সানোয়ার হোসেন,ন্বরাপপুরের তৌফিকুল,কাকফো গ্রামের রাতুল আদনান,ফজলে হোসেন,টেঙ্গনপাড়া গ্রামের আছিয়া খাতুন জানান তারা এখন উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের স্বপন্ দেখতে শুরু করেছেন। করোনার কারনে তারা প্রায় অলস সময় কাটাচ্ছিলেন। লেখা পড়ার প্রতি আগ্রহ কমতে শুরু করেছিল। ইতিমধ্যে কেউ কেউ অর্থ উপার্জন করে সংসারে সহযোগীতা করা জন্য কাজ খুজতে শুরু করেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ভাইদের কথায় আবারও উচ্চ শিক্ষা গ্রহনের শিক্ষা গ্রহণের আগ্রহ বেড়েছে সবার। তাদের আশ্বাস পেয়ে আমাদের অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়,মেডিকেল কলেজ বা প্রকৌশল বিশ্বদ্যিালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি। পরীক্ষায় ভাল ফলাফলের জন্য এখন থেকে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছি। বড় ভাইদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সহযোগীতা পেলে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারব এমন স্বপ্ন দেখছি।