নাটোরে অফিস॥ নাটোরে ভারতের অর্থায়নে নির্মিত হল শ্রী শ্রী জয়কালী মন্দির। মন্দির উদ্বোধ করে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলি দাস বলেছেন, সংস্কৃতিগত মেলবন্ধনের কারণে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যে সুসম্পর্ক বিদ্যমান, তা ভবিষ্যতেও অটুট থাকবে। বাংলাদেশ এখন সব ক্ষেত্রেই ভালো করছে। ভারত বাংলাদেশের অকৃত্তিম বন্ধু। তাই বাংলাদেশের সাফল্যে ভারত গর্ববোধ করে। আগামীতেও ভারত সরকার বাংলাদেশের পাশে থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।
আজ সোমবার(২৭শে জুলাই) দুপুরে শহরের লালবাজারে শ্রী শ্রী জয়কালী মন্দির সংস্কার পরবর্তী ভার্চুয়াল যৌথ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলি দাস।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নিয়ে মন্দিরটি উদ্বোধন করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ও বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলি দাস। অনুষ্ঠানে অংশ নেন নাটোর-২ আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল, নাটোর পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব) শরিফুন্নেসা, উপজেলা চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম রমজান প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সহকারী হাইকমিশনার রাজশাহী সঞ্জিব কুমার ভাট্টি।
রীভা গাঙ্গুলি দাস বলেন, ‘২০১৬ সালের ২৩শে অক্টোবর মন্দির সংস্কার কাজের উদ্বোধন করেন তৎকালীন হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। সেই ধারাবাহিকতায় ৯৭ লাখ টাকা অনুদান দেয় ভারত সরকার। ভারতীয় হাই কমিশন নাটোরের শ্রী শ্রী জয়কালী মাতার মন্দিরের সংস্কার কাজে সহায়তা করতে পেরে আনন্দিত। এই মন্দিরটি বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন মন্দির। আমাদের অভিন্ন ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সংরক্ষণে ভারত বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ অংশীদার যা আমাদের জনগণের মধ্যকার সম্পর্ককে আরও জোরদার করে।’
নাটোর পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরী বলেন, ‘শত বছরের ঐতিহ্যবাহী রাণী ভবানীর স্মৃতিবিজড়িত জয়কালী মন্দির সংস্কারে ভারত সরকারের অনুদান মানুষ মনে রাখবে।’
নাটোর-২ আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল বলেন, ‘নাটোরের উন্নয়নে বর্তমান সরকার অতীতের যে কোনো সরকারের চেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছে। আমরা প্রত্যাশা রাখবো, আগামীতেও ভারত সরকারও নাটোরের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।’
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারত সরকারের সহযোগিতার কথা আমরা কোনদিনও ভুলবো না। স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশেও নানাভাবে সহযোগিতা করেছে ভারত সরকার। বর্তমানে বাংলাদেশে ১৯২ মিলিয়ন ডলারের ১২ টি আইটি পার্ক নির্মাণেও সহযোগিতা করছে ভারত সরকার। ভারতের অকৃত্তিম বন্ধুত্বের ঋণ আমরা মনে রাখবো।’
প্রসঙ্গত, শ্রী শ্রী জয়কালী মন্দিরটি প্রায় ৩০০ বছরের পুরাতন এবং বাংলাদেশের নাটোর জেলার অন্যতম প্রাচীন মন্দির। অষ্টাদশ শতাব্দির শুরুর দিকে এই মন্দির নির্মাণ করেন শ্রী দয়ারাম রায় (১৬৮০ – ১৭৬০), যিনি ছিলেন দিঘাপতিয়া রাজপরিবারের প্রতিষ্ঠাতা ও নাটোরের রানী ভবানীর (১৭১৬ – ১৭৯৫) প্রভাবশালী দেওয়ান। এই মন্দিরে দুর্গা ও কালীপূজার মতো বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব প্রতিবছর অত্যন্ত উদ্দীপনা এবং উৎসাহের সাথে পালন করা হয়। মন্দিরের প্রাঙ্গনে শিবমন্দিরও রয়েছে। এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন, বাংলাদেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও পরম্পরাসমূহের প্রাচীন স্মারক ও ঐতিহ্য রক্ষায় ভারতের প্রচেষ্টার একটি চমৎকার উদাহরণ।
ভারত সরকারের অনুদানের আওতায় হাই ইমপ্যাক্ট কমিউনিটি ডেভলপমেন্ট প্রজেক্টস (এইচআইসিডিপি), বাংলাদেশের জন্য ভারতের উন্নয়ন সহায়তার একটি সক্রিয় স্তম্ভ গঠন করে, যার দ্বারা স্থানীয় অধিবাসীরা সরাসরি উপকৃত হয় এবং তাদের উপর ইতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি হয়। অতীতে এইচআইডসিডিপির আওতায় রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন প্রকল্পে সহায়তা বৃদ্ধি করে, যার মধ্যে রয়েছে– রামকৃষ্ণ মন্দির ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ, দোতলা আদিবাসী শাগশাইল স্কুল ও নিয়ামতপুর ছাত্রীনিবাস নির্মাণ, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনে ক্ষুদ্র উন্নয়ন প্রকল্প, শ্রী শ্রী আনন্দময়ী কালীমাতা মন্দির সংস্কার কাজ, মাহিগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের নিচতলা, দ্বিতীয়তলা এবং অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ ইত্যাদি।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ২৩ অক্টোবর নাটোরের লালবাজারে শ্রী শ্রী জয়কালী মাতার মন্দিরটি পুনর্নির্মাণের জন্য একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। ভারত সরকারের ৯৭ লাখ (বাংলাদেশী) টাকা অনুদান এবং হাই ইমপ্যাক্ট কমিউনিটি ডেভলপমেন্ট প্রজেক্টস (এইচআইসিডিপি) স্কিমের আওতায় মোট ১.৩৩ কোটি টাকা অর্থায়নে এই নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করে শ্রী শ্রী জয়কালী মাতার মন্দির কমিটি।