নাটোর অফিস॥ ‘আমার বাবা তিন লক্ষ টাকা দেওয়ার পরেও আমার শ্বাসুরী আমাক(আমাকে) জানায় তার মন ভরে নাই। আপনেরা সবাই দেখেন তার বিটাক(ছেলেকে)কত কোটি টাকা দিয়ে বিয়া দেয়।’
নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নের কান্দিপাড়া গ্রামের গৃহবধু শারমিন আক্তারের মরদেহের পাশ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে একটি চিরকুট যেখানে শ্বাসুরী আমেনা বেগমের ‘অর্থলোলুপ’ মানসিকতার কথা সকলকে জানিয়ে গেলেন শারমিন।
২২ বছর বয়সী এই গৃহবধূ শ্বাশুরীর মানসিক নির্যাতন সইতে না পারায় বেছে নিয়েছে আত্নহননের পথ। তবে শারমিনের মা-বাবার দাবী, মেয়েকে মেরে ফেলে ঝুলিয়ে দিয়ে আত্নহত্যার খবর প্রচার করছে শ্বসুরবাড়ির লোকজন।
শারমিন ধারাবারিষা কান্দিপাড়ার নাজিম উদ্দীনের ছেলে সোহাগের স্ত্রী ও পাশ্ববর্তী বিয়াঘাট ইউনিয়নের দরিদ্র ভ্যানচালক ফারুক ফকিরের মেয়ে।
তবে শারমিনের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনাটি যদি ‘আত্নহত্যা’ হয় তবেযে চিরকুটটি শারমিন লিখে রেখে গেছে তাতে স্পষ্টত শ্বাসুরী আমেনা বেগম তার মৃত্যুর প্ররোচনাদাত্রী। এ চিরকুটটি শারমিন মৃত্যুর আগে লিখেছেন না পূর্বে কোনো সময় লেখা তা স্পষ্ট নয়। তবে যখনই লেখা হোক না কেন, শারমিন যে সামাজিক ব্যধি যৌতুকের বলি হয়েছেন, তা স্পষ্ট।
আজ শুক্রবার(২৬শে জুন) সকালে নিজ ঘর থেকে শারমিনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় শারমিনের পরিবারের পক্ষ থেকে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
শারমিনের মা লাভলী বেগম জানান, বছর খানেক আগে গ্রাম্য চিকিৎসক সোহাগের সাথে পারিবারিকভাবে মেয়ের বিয়ে দেয়া হয়। বিয়ের সময় মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে ৩ লাখ টাকা তুলে দেওয়া হয় শ্বাশুড়ি আয়েশা বেগমের হাতে। বিয়ের কিছুদিন পর আবারও ২ লাখ টাকা দাবী করেন আয়েশা বেগম। টাকার জন্য সবসময় মেয়েকে মানসিক চাপে রাখতেন তিনি। মেয়ে বহুবার টাকা জোগাড় করার জন্য তার মা বাবাকে জানালেও আর্থিক দুরবস্থার কারণে তা তারা করতে পারেননি।
শারমিনের বাবা ফিরোজ ফকির বলেন, “আমার মেয়েকে হত্যা করে ওরা দড়িতে ঝুলিয়ে আত্নহত্যা প্রমাণ করতে চায়। অনেক ধৈর্য নিয়ে মেয়েটা সংসার করছিলো। আমি এ হত্যাকান্ডের বিচার চাই।’
গুরুদাসপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোজাহারুল ইসলাম জানান, মামলা দায়েরের পর অভিযুক্তদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। কি কারণে মৃত্যু হয়েছে, তা ময়না তদন্তের পর জানা যাবে।