নাটোর অফিস॥
নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার ইকরী গ্রামের কৃষক মোবারক আলী, গুরুদাসপুর উপজেলার সোনাবাজু গ্রামের রশিদ প্রাং, জিহাদ আলী ও আসাদুল ইসলাম। নিজ নিজ ব্যক্তিক পেশাগত পরিচয় থাকলেও একদিক থেকে তাদের মিল ছিলো। তারা সকলেই ‘অবাধ যৌনাচারী’।
এই চার জনের আলাদা আলাদা যৌন কর্মের সাথী ছিলেন একই নারী যার নাম আরিফা খাতুন। তার বাড়ি সোনাবাজু গ্রামে। স্বামী কাঁচু খাঁর বয়স ৬০ বছর এবং তিনি শারীরিকভাবে অক্ষম।
স্বামীর বয়সের চেয়ে বয়সে অর্ধেক এই গৃহবধু শারীরিক তৃপ্তির জন্য খুঁজতেন যুবক বা সামর্থ্যবান ব্যক্তিদের সঙ্গ।
যখন নতুন নতুন ব্যক্তিদের সাথে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলা অভ্যাসে পরিণত হলো আরিফার, তখন তা রুপ গ্রহণ করলো আর্থিক লেনদেনের।
গৃহবধু আরিফা যখন টাকার বিনিময়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করা শুরু করলেন, তখন পরিচয় হলো মোবারকের সাথে। এই মোবারক শেষ পর্যন্ত মারা গেলেন আরিফা ও তার সহযোগিদের হাতেই।
নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার ইকরী গ্রামের বেড়ি বিলে গত ১৫ই জুন গরু চড়াতে গিয়ে প্রথমে নিখোঁজ হওয়া কৃষক মোবারক আলী(৩৮) হত্যার ঘটনায় পুলিশি তদন্তে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর অবাধ যৌনাচারের ঘটনা। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ঘটনার পরদিন ১৬ই জুন ইকরী গ্রামের সীমান্তবর্তী গুরুদাসপুর উপজেলার সোনাবাজু গ্রামের কাঁচু খাঁর স্ত্রী আরিফা খাতুন(৩০), ইমরুল প্রাং’র ছেলে রশিদ প্রাং(৩৮), জিয়াউর রহমানের ছেলে জিহাদ আলী(৩২) ও ইকরী গ্রামের আব্দুল বারীর ছেলে আসাদুল ইসলামকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
গ্রেফতার আরিফা, আসাদুল ও রশীদ গতকাল বৃহষ্পতিবার(১৮ই জুন) আদালতে উপস্থিত হয়ে হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন।
যে কারণে এই খুন
গ্রেফতারকৃত আসামী রশিদ, জিহাদ, আসাদুল ও নিহত মোবারকের সাথে অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক ছিলো গৃহবধু আরিফা খাতুনের। টাকার বিনিময়ে তারা আরিফার সাথে শারীরিক সম্পর্কে মিলিত হতেন। তবে তাদের মধ্যে মোবারকের আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় মোবারক ঠিকমতো টাকা পরিশোধ করতে পারতেন না। এ নিয়ে নিজেদের মধ্যে কথা কাটাকাটির জেরে মোবারক আরিফার সাথে অন্য তিনজনের অবৈধ সম্পর্কের কথা মানুষের মাঝে প্রচার করে। এছাড়া আসামী আসাদুলের স্ত্রীর সাথে নিহত মোবারকের অবৈধ সম্পর্ক ছিলো। এতে তারা ক্ষুদ্ধ হন এবং মোবারককে একটি উচিত শিক্ষা দেয়ার জন্য পরিকল্পনা শুরু করেন।”
যেভাবে খুন হলেন
গত ১৫ই জুন বিকেলে ইকরী গ্রামের বেড়ী বিলে একটি পাট ক্ষেতের পাশে গরু চরাচ্ছিলেন মোবারক। এসময় পূর্ব পরিকল্পনা মতো আরিফা সেখানে উপস্থিত হয়ে মোবারককে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রলোভন দেখিয়ে পাটক্ষেতে নিয়ে যান। পাটক্ষেতে ঢোকার সাথে সাথে মোবারকের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে রশিদ, জিহাদ ও আসাদুল। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই কাঁচা পাট দিয়ে তারা রশিদ, জিহাদ ও আসাদুল মোবারকের হাত ও পা বেঁধে ফেলে। এরপর আরিফা মোবারককে ঘুরিয়ে মাটির সাথে মুখ চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে মোবারকের মৃত্যু নিশ্চিত করে।”
নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা জানান, হত্যাকান্ড ঘটানোর পর আসামীরা স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে থাকে। তারা হত্যাকান্ড ঘটাতে গিয়ে কোনোপ্রকার ফোনকল বা প্রযুক্তি ব্যবহার করেনি।
চাঞ্চল্যকর এ ঘটনা অনুসন্ধানে একযোগে কাজ করেছেন সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল হাসনাত, বড়াইগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ দীলিপ কুমার দাস, গুরুদাসপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোজাহারুল ইসলাম, গোয়েন্দা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ আনারুল ইসলাম প্রমুখ।